তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা এখন প্রায় ৩৩ হাজার। এরই মধ্যে তুরস্কের বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। বিপর্যয়ের মধ্যে কেউ অরাজকতা করলে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর পেরিয়ে গেছে ছয় দিন। বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে বিরামহীনভাবে চলছে উদ্ধার অভিযান। সময়ের সাথে সাথে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। ফলে সময়ের বিরুদ্ধে লড়ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
অথচ এখনো নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষ। তাদের উদ্ধারে আরও সময় দরকার। কিন্তু সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছেন উদ্ধারকারীরা। তবু স্বজনদের ফিরে পেতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে অনেকে ধ্বংসস্তূপের পাশে অপেক্ষা করছেন।
ছয় দিন পারে করেও দুর্বিষহ পরিস্থিতির বদল হয়নি। কখনও মৃতদেহ, কখনও জীবিত প্রাণকে উদ্ধার করা হচ্ছে। বাদ পড়ছে না প্রাণীরাও। এর মাঝেই রোববার পর্যন্ত তুরস্ক, সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৩০ হাজার পেরিয়ে গেল। যে পরিসংখ্যান ৫০ হাজার ছুঁতে পারে।
জাতিসংঘ বলছে, দুর্যোগ কবলিত এলাকায় আট লাখের বেশি মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। অন্যদিকে সেখানে কর্মরত জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন যে, এই ভূমিকম্পে শেষ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা এখনকার দ্বিগুণে পৌঁছাতে পারে।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতে জানিয়েছেন, দেশটির ১০টি প্রদেশের ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই ভয়াবহ দুর্যোগে। ছয় হাজারের বেশি ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। তুরস্কের বিস্তীর্ণ এলাকা ভূমিকম্পের পর একেবারে ফাঁকা হয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে একের পর এক বাড়ি। গৃহহীন নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে।
তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, গত সোমবারের ভূমিকম্পে ধসে যাওয়া অনেক ভবনের নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১১৩টি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তুরস্কের পুলিশ এরই মধ্যে ভবন নির্মাণ ঠিকাদারসহ ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে।
তুরস্কে আরও কিছু মানুষকে গ্রেফতার করা হতে পারে। বহু বছর ধরেই বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছিলেন যে, ব্যাপক দুর্নীতি এবং সরকারি নীতির কারণে তুরস্কে নতুন যেসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেগুলো মোটেই নিরাপদ নয়।
সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্যোগকবলিত এলাকায় বাড়ছে সহিংসতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। অজ্ঞাতনামা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সহিংসতার কারণে নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জার্মান উদ্ধারকর্মী এবং অস্ট্রিয়ার সেনাসদস্যরা তাদের তৎপরতা বন্ধ করে দিয়েছেন।
একজন উদ্ধারকারী বলেছেন, খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনকে লুটপাটের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ হয়েছে।
এদিকে, সিরিয়ান অবজারভেটরি হিউম্যান রাইটস বলছে, সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এখনও নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষ। যদিও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সব এলাকা থেকে বলা হচ্ছে জীবিতদের খোঁজা শেষ হয়েছে। দেশটির উত্তর ও উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে দুই হাজার ১৬৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বিধ্বংসী এই ভূমিকম্পের ফলে সিরিয়ায় ৫৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। এদিকে, অজ্ঞাত গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে শনিবার জার্মান উদ্ধারকারী দল এবং অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী তাদের তল্লাশি অভিযান স্থগিত করেছে।
বড় আকারের ট্র্যাজেডি এড়ানো যেতো কিনা এবং প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জীবন বাঁচাতে আরও কিছু করতে পারত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ২০ বছর ক্ষমতায় থাকা এই নেতার ভবিষ্যৎ নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।
৬ ফেব্রুয়ারি আঘাত হানা ভূমিকম্পটি এ অঞ্চলের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ। ১৯৯৯ সালের আগস্টে তুরস্কে সংঘটিত ৭.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। এবার সেই রেকর্ড ভেঙে এখন পর্যন্ত দেশটিতে এককভাবে ২৪ হাজার ৬০০ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
দেশটিতে রেকর্ড সংখ্যক মৃতদেহ উদ্ধারের দিনে পিছিয়ে নেই সিরিয়াও। সেখানেও এখন পর্যন্ত মৃতদেহ উদ্ধারের সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। সব মিলিয়ে দুই দেশে উদ্ধার করা মৃতদেহের সংখ্যা ২৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
জাগরণ/আন্তর্জাতিক/তুরস্কসিরিয়ায়ভূমিকম্প/কেএপি