আমেরিকার মিসিসিপি রাজ্যে ভয়ংকর এক টর্নেডো কেড়ে নিয়েছে কমপক্ষে ২৩ জনের প্রাণ। আহত হয়েছে বহু মানুষ। আর নিখোঁজ আছেন চার জন। মিসিসিপি’র ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে এ টর্নেডোটি আঘাত হানে। টর্নেডোটি যেসব স্থানের ওপর দিয়ে গেছে সেখানে রীতিমতো ধ্বংসলীলা চালিয়েছে।
টর্নেডোর কারণে বেশ কয়েকটি গ্রামীণ শহরে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। সেখানে গাছ এবং বিদ্যুতের লাইন ভেঙে গেছে। কয়েক হাজার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে। বহু ঘর ও গাড়ি উল্টে গেছে। গাছপালা উপরে পড়েছে। রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে টর্নেডোটি। এছাড়া মিসিসিপিতে ভারি বৃষ্টিপাত এবং গলফ বল আকারের শিলাবৃষ্টির খবরও পাওয়া গেছে।
মিসিসিপি এমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি জানিয়েছে, টর্নেডোটি একশ’ মাইলেরও বেশি পথ চলেছে এবং চলার পথে তার তাণ্ডবের চিহ্ন রেখে গেছে। তাই হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। টর্নেডোর আঘাতে গাছ পড়ে বা বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মারাত্মক ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে ছিল ভারি বৃষ্টি।
পশ্চিম মিসিসিপির ছোট শহর রোলিং ফর্কের বাসিন্দারা বলেছেন, টর্নেডোর আঘাতে তাদের বাড়ির পেছনের জানালা উড়ে গেছে। ওই এলাকায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। স্থানীয় বাসিন্দা ব্র্যান্ডি শোয়াহ সিএনএনকে বলেছেন, আমি কখনো এমন টর্নেডো দেখিনি। এটা খুব ছোট শহর এবং শহরটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
কর্নেল নাইট নামে অপর এক বাসিন্দা বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, স্ত্রী ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে রোলিং ফর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন তিনি। টর্নেডো আঘাত হানার ঠিক আগেও শহরটি বেশ শান্ত ছিল। টর্নেডো আঘাত হানার মুহূর্তের পরিস্থিতি বর্ণনায় তিনি বলেন, আকাশ একেবারে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিলো। ওই সময় প্রতিটি ট্রান্সফরমারে বিস্ফোরণ ঘটে।
তিনি বলেন, টর্নেডো তার এক স্বজনের বাড়িতে আঘাত হেনেছে। এতে ওই বাড়ির দেয়াল ধসে ভেতরে বেশ কয়েকজন আটকা পড়েছেন। আরো অনেকে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে আটকা পড়ে আছেন। এই শহরে ১২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এক একটি শিলার আকার গলফ বলের সমান ছিলো।
মিসিসিপি’র গভর্নর টেট রিভস টুইটে জানিয়েছেন, অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করছে। ওয়েস্টার্ন মিসিসিপি’র ছোট্ট শহর সিলভার সিটিতে চারজন নিখোঁজ রয়েছে। তাদের খুঁজে পেতে তল্লাশি ও উদ্ধারকারীদের যৌথ একটি দল কাজ করছে। শহরটির মোট বাসিন্দা মাত্র ২০০ জন।
রোলিং ফর্কেও উদ্ধার অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। এক হাজার ৭০০ বাসিন্দার এই শহর টর্নেডোর আঘাতে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। রোলিং ফর্কের এক বাসিন্দা বলেছেন, আমার শহর শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা এখনও টিকে আছি। আমরা শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবো। আমরা আবারও মাথা তুলে দাঁড়াবো।
ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেটিওরোলজির স্যাম এমারসন জানিয়েছেন, অত্যন্ত উচ্চ শক্তির টর্নেডো ছিলো এটি। এদিকে, দেশটির আরও কয়েকটি দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য শক্তিশালী ঝড়ের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে।
জাগরণ/আন্তর্জাতিক/বিশ্বপরিবেশ/এসএসকে