আন্তর্জাতিক আদালত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গণহত্যা বন্ধে ইসরাইলকে নির্দেশ দেয়ার পরও দেশটির হায়েনারা গেলো ২৪ ঘণ্টায় ১৭৪ জনকে হত্যা করেছে, জখম হয়েছে কমপক্ষে ৩১০ জন। গাজার হামাসের নিয়ন্ত্রণে থাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, আহত ৬৪ হাজারের বেশি মানুষ; যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) গাজাজুড়ে বোমা হামলা আরও তীব্র করেছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। বিশেষ করে গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের হাসপাতালসহ বিভিন্ন অবকাঠামো লক্ষ্য করে ক্রমাগত বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। খান ইউনিসে হামাস ও ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। সেখানের নাসের হাসপাতাল এরই মধ্যে পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে রোগীরা।
দক্ষিণ গাজার প্রধান শহর খান ইউনিসে গত ২৪ ঘণ্টায় হামাসের ১১ যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরাইল। শনিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। আইডিএফের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলি সেনাদের লক্ষ্য করে বিস্ফোরক দ্রব্য মোতায়েন এবং রাইফেল ও রকেটচালিত গ্রেনেড ছোড়ার সময় তাদের হত্যা করা হয়।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি খান ইউনিস শহর ঘিরে ফেলার দাবি করে ইসরাইল। দেশটির সামরিক বাহিনী বলেছে, কয়েকদিন ধরে খান ইউনিসে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে তাদের সেনারা। এখন তারা শহরটি ঘিরে ফেলেছে। বর্তমানে হামলা আরও জোরদার করা হয়েছে। সেখানে হামাস যোদ্ধারাও জোরালো অবস্থান নিয়েছে। এরিমধ্যে ইসরাইলি সেনাদের ব্যাপক ক্ষতির দাবি করেছে গোষ্ঠীটি।
গাজা উপত্যকায় আরও এক ইসরাইলি রিজার্ভ সেনা নিহত হয়েছে। এর ফলে গাজায় স্থল অভিযান চালাতে গিয়ে এ পর্যন্ত ২২০ জন সেনা নিহত হলো। নিহত রিজার্ভ সেনার নাম সার্জেন্ট মেজর এলিরান ইয়েগের। গাজার দক্ষিণে ইসরাইলের এ সেনা নিহত হয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তবে কোথায় মারা গেছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলেনি। খান ইউনুসে ইসরাইল-হামাসের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ চলছে।
অবশ্য, ইসরাইলের প্রকাশিত এই সংখ্যার সাথে দ্বিমত করে আসছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা। হামাস বলছে, তাদের হাতে এ পর্যন্ত ইসরাইলের প্রকাশিত সংখ্যা চেয়ে অনেক বেশি সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া, ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরাইলের স্বীকারোক্তি মতে প্রায় ৫০০ সেনা নিহত হয়েছে।
কয়েক দিন ধরেই খান ইউনিসে অব্যাহত বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। তাছাড়া আল-দাহারা এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। মুহুর্মুহু হামলার মুখে আল-দাহরার বাসিন্দাদের সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। খান ইউনিসের পরতে পরতে চলছে ইসরাইলের অভিযান। তেল আবিবের স্নাইপাররা আল-আমাল হাসপাতালে অবস্থানরত ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালিয়েছে।
ইসরাইলের হামলা ও হুমকির মুখে খান ইউনিস ছেড়ে আরও দক্ষিণে মিশর সীমান্তবর্তী রাফা এলাকায় চলে যাচ্ছেন হাজারো ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘের হিসাবে, ইতিমধ্যে এই এলাকায় ১৭ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘের ফিলিস্তিন শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, তার মনে হয়েছে, যেন খান ইউনিস থেকে ‘স্রোতের মতো’ মানুষ মিশর সীমান্তের দিকে যাচ্ছেন।
আইসিজের রায়ের পর ইসরাইল বোমা হামলা আরও তীব্র করেছে। গাজার দক্ষিণে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে হামলা অব্যাহত রয়েছে আইডিএফ। হামলায় খান ইউনিসে অবস্থিত নাসের হাসপাতাল সম্পূর্ণ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছে। রাফা এলাকায় আক্রমণে তিনজন ফিলিস্তিনি বাসগৃহেই মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে ও রাস্তায় আটকে আছে। কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছতে পারছেন না।
জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলি আক্রমণের ফলে গাজার জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ওই অঞ্চলের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, গাজার ২২ লাখ অধিবাসী দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুত ত্রাণ পৌঁছাতে না পারলে বিশ্বকে জবাবদিহি করতে হবে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ থেকে অর্থ সহায়তা তুলে নিয়েছে ইসরাইলের প্রধান দোসর আমেরিকা, ব্রিটেন ও কানাডা। সংস্থাটির কয়েকজন কর্মকর্তা গত সাত অক্টোবর ইসরাইলের ভূখণ্ডে হামাসের অবিশ্বাস্য হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর অর্থ দেয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেয়ার ঘোষণা দেয় এই তিনটি দেশ।
জাগরণ/আন্তর্জাতিক/এসএসকে/কেএপি