রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের একটি প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পের আওতায় উদ্যানের ভেতরেই নির্মাণ করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ গাড়ি পার্কিং সুবিধা, জলাধার, হাঁটার পথ, আন্ডারপাস, মসজিদসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। এসব কাঠামো নির্মাণ করতে গিয়ে নির্বিচারে কাটা হয়েছে বেশকিছু গাছ। আরো কিছু গাছ কাটার জন্য লাল রঙ দিয়ে ক্রস চিহ্নও দিয়ে রাখা হয়েছে। তবে উন্নয়নের নামে উদ্যানের গাছ কাটার প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরিবেশবিদ, নগরবিদ ও পরিবেশপ্রেমীরা। এক সাক্ষাৎকারে জাগরণ অনলাইনকে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুব্রত চন্দ।
জাগরণ: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রাণ-প্রকৃতির ওপর যে কুড়ালের আঘাত এ নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : এটা খুব অন্যায় কাজ হচ্ছে একাধিক কারণে। প্রথম কারণ হচ্ছে, গাছ ছাড়া তো উদ্যান হয় না। এই উদ্যানটা আগে রেসকোর্স ছিল। এটাকে যখন উদ্যান করা হয়েছে, তখন এই গাছগুলো লাগানো হয়েছিল। এখানের অনেক গাছই স্বাধীনতার পরে লাগানো। এগুলো বয়স প্রায় ৫০ বছর। এগুলো কেটে ফেললে তো উদ্যানই নষ্ট হয়ে যাবে। দ্বিতীয় হচ্ছে, উন্নতির নামে গাছ কাটা তো খুবই অন্যায়। কেননা গাছ তো মানুষের বন্ধু। গাছ অক্সিজেন দেয়, কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে, গাছ ছায়া দেয়। গাছ না থাকলে তো মানুষ অত্যন্ত বিপন্ন হবে। উন্নয়নের নামে এগুলো করা খুবই অগ্রহণযোগ্য। তৃতীয় হচ্ছে, এই উদ্যানের গাছ কেটে ফেললে, ঢাকা শহরের অন্য যতগুলো পার্ক এবং খোলা জায়গা আছে, সেগুলো দখল হয়ে যাবে, গাছ কেটে ফেলা হবে।
জাগরণ : পরিবেশবিদদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত বলে আপনি মনে করেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : আলাপ-আলোচনা তো পরে আসবে। এটা তো সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন যে, গাছ কেটে কোনো উন্নয়ন হবে না। গাছ রক্ষা করেই উন্নয়ন করতে হবে। এটা একটা অত্যন্ত সরল ব্যাপার। এটার জন্য পরিবেশবিদ, বিশেষজ্ঞ লাগে না। এটা তো একটা নীতির প্রশ্ন। নীতিগতভাবেই ঠিক করতে হবে যে, উন্নয়ন হবে কিন্তু প্রকৃতি নষ্ট করা যাবে না। আর গাছ হচ্ছে প্রকৃতিরই অংশ।
জাগরণ : শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, উন্নয়নের নামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রকৃতি ধ্বংস করা হচ্ছে। বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখছেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : প্রকৃতিকে নষ্ট করে উন্নয়ন মানে তো ধ্বংস ডেকে আনা। এটা তো স্বীকৃত। আর আমাদের এখানে তো প্রকৃতির বিপর্যয় ঘটছে। জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে, পানির স্তর উপরে উঠছে, জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে, খরা দেখা দিচ্ছে। প্রকৃতিকে আমরা রক্ষা না করলে আমরা টিকতেই পারবো না।
জাগরণ : একদিকে প্রকৃতি ধ্বংস করা হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এটি মোকাবেলায় সরকারের কোনো পদক্ষেপ বা প্রস্তুতি আপনার চোখে পড়েছে কীনা?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : না, আমার চোখে পড়েনি। বরং এই ব্যাপারে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। এই উদাসীনতা দেখা গেছে, সুন্দরবন নষ্ট করে দেওয়ার মতো ব্যবস্থা হয়েছে। কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হবে, সেটা একটা বিপদজনক ঘটনা। আবার ওইদিকে সুন্দরবনে আগুন লাগা শুরু হয়েছে। এগুলো তো খুবই খারাপ লক্ষণ। নদীগুলোও সব বিষাক্ত হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গা তো মনে হচ্ছে ক্রমাগত নর্দমায় পরিণত হচ্ছে।