ছুটিতে ছিলো চাঁদ—
কৃষ্ণা পঞ্চমী, অন্ধ একটি রাত
অন্ধ দাদু বলছিল রূপকথা
ছোট চাচার লোমশ দুটি হাত
আমার বুকে লিখছিল— অশ্লীল চুপকথা
কাঁদছিল শুকতারা— কাঁদেনি আমার ব্যথা
তবু সেই থেকে ব্যথার মনে চিনচিন নীরবতা
দাদুর গল্পে ব্যাঙ্গমী ফিসফিস— রাজকন্যার দুঃখের কথা
আমি রাজকন্যা নই— আমাকে শোনার সময় কোথা?
অন্ধ-গল্প চলেছে টিকটিক— ব্যাঙ্গমী কাউকে বলেনি
ময়ূর-পঙ্খী উড়েছে দশদিক— রাজকুমার আসেনি
ঘুমাচ্ছিলাম আধোভয়ে। শিথানে সোনার কাঠি, পৈথানে রূপার
রাজ-কুমার আসি আসি করে, শেষ হয়নি রূপকথা আমার
দিন যায় হেঁটে হেঁটে, রূপকথার গন্ধ নিয়ে
একদিন বৃষ্টি এলো, রবিঠাকুরকে মাথায় দিয়ে
ভেজাতে চাইলো স্বপ্ন আমার, মিচকা বুড়া মাস্টার
কাদম্বরী দেবীর আড়ালে গিয়ে
সেদিনও ছুটিতে ছিল চাঁদ, শুকতারা জ্বলেনি
আমার বৃষ্টির গল্প শেষ হতে হতেও, শেষ হয়নি
দাদুর সেই অন্ধ রাতের পর হাসতে ভুলে গিয়েছিল চাঁদ
ভয় হিম হিম— জানি না কেন— বইছিলাম অন্যের অপরাধ
সময় হাঁটে, দিন গুনি, একটু করে মানুষের চোখ চিনি
বিপদসীমা জেনে মেনে, দিনে দিনে অনেক সাবধানী
দুই যুগ কেটে গেছে— ফিরে পেতে নিজেকে আমার
কত চাঁদ চলে গেছে হেসে, হয়নি সাহস, ছুঁই একবার
ভয়ে ভয়ে আধা-জীবন— সংসার, সন্তান— নিজের অন্তরীপ
তবু আমার মেয়ের শিয়রে রেখেছি— নিভু নিভু সাহস প্রদীপ
আজ—
আমার মেয়েরা আকাশ দেখে
ওদের দেখে চাঁদ হাসতে শিখে
ওদের দিয়ে দিয়েছি— আমার অসমাপ্ত রূপকথা
সাহসের আগুনে ওরা পুড়ে দিয়েছে সব চুপকথা
মুখরা প্রতিবাদে ভেঙেছে সাবেকি নিষ্ফল নীরবতা
ওরা এখন—
কৃষ্ণা পঞ্চমীর অন্ধরাতে জ্যোৎস্না দিয়ে ফানুস বানায়
ভেনাসকে টুইট করে রঙ ফর্সার ক্রিম ফেরত পাঠায়
মেঘের পালক ছুঁয়ে ওরা বলে—
আমি হাসলেই— হেসে ওঠে শুকতারা, চাঁদের ছুটি ফুরায়
আমি ফনা তুললেই— পিশাচরা সব ব্যাঙ হয়ে গর্তে লুকায়