পাস্তুরিত তরল দুধ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফার্মেসি অনুষদের শিক্ষকদের করা পরীক্ষার রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বাজারে থাকা ১৪টি ব্র্যান্ডের ১৮টি পাস্তুরিত/ইউএইচটি দুধ পরীক্ষা করে আশঙ্কাজনক কিছু পাওয়া যায়নি- আদালতে জমা দেয়া বিএসটিআইয়ের এমন প্রতিবেদন সন্তোষ প্রকাশ করে এই আদেশ দিয়েছে আদালত।
আজ রোববার (৩০ জুন) বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এসময় আদালত বিএসটিআইয়ের আইনজীবী সরকার এম আর হাসান (মামুন)-কে ঢাবির ফার্মেসি অনুষদের শিক্ষক আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে করা পরীক্ষার রিপোর্টও জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। আগামী রোববারের (৭ জুলাই) মধ্যে এ প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতে এদিন শুনানিতে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী জিনাত হক। বিএসটিআইয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সরকার এম আর হাসান (মামুন)।
গত ২৫ জুন পাস্তুরিত/ইউএইচটি দুধ পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে বিএসটিআই জানায়, ১৪টি ব্র্যান্ডের ১৮টি পাস্তুরিত/ইউএইচটি দুধে আশঙ্কাজনক কিছু নেই। ব্র্যান্ডগুলো হলো- পুরা, আয়রান, আড়ং ডেইরি, ফার্ম ফ্রেশ মিল্ক, মো, মিল্ক ভিটা, আফতাব, আল্ট্রা, তানিয়া (২০০ গ্রাম ও ৫০০ গ্রাম), ইগলু, প্রাণ মিল্ক, ডেইরি ফ্রেশ, মিল্ক ফ্রেশ এবং কাউহেড পিওর মিল্ক।
এদিকে, ২৬ জুন (মঙ্গলবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাজারে প্রচলিত ৭টি পাস্তরিত দুধে মানব চিকিৎসায় ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি রয়েছে। এগুলো হলো- মিল্কভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট এবং ইগলু ম্যাংগো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার এবং ফার্মেসি অনুষদের বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে এসব খাদ্যপণ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় পাস্তরিত দুধের ৭টি নমুনার সবগুলোতেই মানব চিকিৎসায় ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক লেভোফ্লক্সসিন ও এন্টিবায়োটিক সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং ৬টি নমুনাতে এন্টিবায়োটিক এজিথ্রোমাইসিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও অপাস্তরিত দুধের একটি নমুনাতে ফরমালিন এবং পাস্তরিত এবং অপাস্তরিত দুধের ৪টি নমুনায় ডিটারজেন্ট পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৭ মে ‘পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশই নিরাপদ নয়’ শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনগুলো আদালতে নজরে আনা হলে আদালত এ বিষয়ে রিট আবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২০ মে হাইকোর্টের রিট দায়ের করেন আইনজীবী তানভির আহমেদ।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে বাজারে পাওয়া যায় এমন সকল ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদকে আহ্বায়ক করা ১০ সদস্যের ওই কমিটিতে অন্য সদস্যরা হলেন- খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি, ডেইরি মাইক্রো বায়োলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের প্রতিনিধি, ফুড মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের সহযোগী গবেষক ও প্রধান ড. মো. আমিনুল ইসলাম, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি, বিএসটিআইয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি, ন্যাশনাল কনসালটেন্টের ডা. কুলসুম বেগম চৌধুরী, বিএসটিআইয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উপসচিব আবু সহিদ ছালেহ মো. জুবেরী।
এমএ/ এফসি