বাজারে প্রচলিত পাস্তুরিত তরল দুধ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়াতে বিএসটিআইয়ের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদেশে এমন প্রতিবেদন ও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ দেন আদালত।
বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) এই আদেশ দেন। এরপর আগামী ১৪ জুলাই শুনানির নতুন দিন নির্ধারণ করা হয়।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) শুনানিতে ‘আদালত পাস্তুরিত দুধ নিয়ে বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন’ শিরোনামে গণমাধ্যমে বিএসটিআইয়ের আইনজীবীর এরইমধ্যে দেয়া বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট ।
মঙ্গলবার আদালত বলেন, ‘দুধ পরীক্ষার প্রতিবেদন নিয়ে আমরা কোনো আদেশ দেইনি, মতামতও প্রকাশ করিনি। অথচ আপনি (আইনজীবী) মিডিয়ার সামনে আদালতের সন্তোষ প্রকাশের কথা বললেন। আর আপনার এই বক্তব্যের পর প্রাণ গ্রুপ গণমাধ্যমে হাইকোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে তাদের পণ্যের গুণগান প্রচার করছে। এই দুধ খেয়ে যদি কেউ অসুস্থ হয়, তার দায় কে নেবে?’
পরে আদালত তার আদেশ ছাড়া মিডিয়ার সামনে কোনো বক্তব্য না দিতে বিএসটিআইয়ের আইনজীবীকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন।
আদালতে বিএসটিআইয়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী সরকার এম আর হাসান। রিটের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।
এর আগে, গত ৮ জুলাই পাস্তুরিত দুধ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ ও বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের দেয়া প্রতিবেদন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দাখিল করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
পাস্তুরিত দুধ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষণা প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারে থাকা ৭৫ শতাংশ পাস্তুরিত দুধেই ভেজাল ধরা পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। এই প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ। ওই রিট আবেদনে গত বছরের ২১ মে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন এবং বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। খাদ্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালককে দেয়া এই নির্দেশের পর গত ২৫ জুন বিএসটিআইয়ের আইনজীবী ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে আশঙ্কাজনক বা ক্ষতিকর কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। কিন্তু একইদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ ও বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার এক সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করে যে, পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার কোনোটিতেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রার ‘সলিড নট ফ্যাট’ পাওয়া যায়নি। বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী দুধে ‘ফ্যাট ইন মিল্ক’ ৩.৫ শতাংশ থাকার কথা থাকলেও এগুলোতে আছে ৩.৬ থেকে ৩.৬১ শতাংশ। এসব দুধে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
এমএ/ একেএস