দেড়যুগ পর স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে যাবজ্জীবন এড়ালেন ইসলাম 

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০১৯, ০৯:৪৭ এএম দেড়যুগ পর স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে যাবজ্জীবন এড়ালেন ইসলাম 
ছবি: প্রতীকী

প্রেমিকা মালা বেগমকে বিয়ের মালা পরিয়েছিলেন ইসলাম। তাদের একটি সন্তানও রয়েছে। কিন্তু তাদের বিয়ে নিবন্ধন হয়নি। সে সুযোগে স্ত্রী-সন্তানকে অস্বীকার করেন ঝিনাইদহের ইসলাম।

পরে ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন মালার বাবা। বিচারিক আদালতের রায়ে ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত হন ইসলাম। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে এই রায় বহাল থাকে। এদিকে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে দেড় যুগের মতো কারাভোগও করেন ইসলাম। পরে তিনি রিভিউ আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে।                        

রিভিউর রায়ে ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। ২০ বছর পর মালা বেগমকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি ও ১৮  বছর আগে মালার গর্ভে জন্ম নেয়া মিলনকে ছেলে হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় আদালত বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়।  

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী আশরাফ রহমান।
 
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, মিলনের মা মালা বেগমের সঙ্গে একই গ্রামের ইসলামের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়। দুজন স্থানীয় মৌলভীর মাধ্যমে ২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তারা রেজিস্ট্রি ছাড়া বিয়ে করেন। লোকচক্ষুর অন্তরালে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাস করতে থাকেন তারা। মালা বেগম গর্ভবতী হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় মালা বেগমের পরিবার ও স্থানীয়রা বিয়ের জন্য বললেও ইসলাম মালার সাথে বিয়ে ও মালার গর্ভের সন্তানকে অস্বীকার করেন। ২০০১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মালা বেগমের গর্ভে জন্ম নেয় মিলন। মিলনের পিতৃত্বও অস্বীকার করেন ইসলাম।

উপায় না পেয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন মালার পিতা। মামলার পরপরই গ্রেফতার হন ইসলাম। নিম্ন আদালতে  ইসলামের যাবজ্জীবন সাজা হয়। হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে সাজা বহাল থাকে।

এরপর যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন ইসলাম।

আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এই মামলায় ইসলামের আইনজীবী হিসেবে প্রথম থেকে চিন্তা করেছি, ১৯ বছর ধরে কারাগারে থাকা ইসলামের জেল থেকে মুক্তির পথ সন্তান ও স্ত্রীকে স্বীকৃতি দেয়া। রিভিউ আবেদনে আদালতের সামনে আমি মালা বেগমের স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি ও মিলনকে ছেলে হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরি। আমি আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হই। আদালতের নির্দেশে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাবন্দি ইসলামের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় মালার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ও কাবিন রেজিষ্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে। আজ   শুক্রবার (০২ আগস্ট) আপিল বিভাগ ইসলামকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন।

এই আইনজীবী বলেন, আদেশের সময় আপিল বিভাগের ডায়াসের সামনে ইসলাম ও মালা বেগমের বাবা, সন্তান মিলন উপস্থিত ছিলেন। আদালত কক্ষে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আদালত কক্ষে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবীরা এ আদেশকে স্বাগত জানান।

এমএ/বিএস 
 

আরও সংবাদ