পরিবারে যুদ্ধাপরাধী থাকলেও আওয়ামী লীগের সদস্য হওয়া যাবে— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী।
ডা. নুজহাত চৌধুরী একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে। মা শিক্ষাবিদ ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী।
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ও বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ) সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য ঘিরে তার ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। কবীর চৌধুরী তন্ময়ের বড় চাচা সুজত আলী চৌধুরী ১৯৭১-এ রাজাকারদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। বাবা এম এ খালেক চৌধুরীও ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা।
কেন এদের দলে নিতে চাইছেন? ভাবছেন তারা আপন হবে? সাপ কখনও পোষ মানে?— নুজহাত চৌধুরী
‘আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত জানতে চাই’ শিরোনামে দেয়া স্টাটাসে ডা. নুজহাত চৌধুরী লেখেন— ‘‘যদি তাই হয়, তবে যারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা শহীদ সন্তান তারা দূরে সরে যাবে। বীরের রক্ত কখনও খুনীর রক্তের সাথে মিলতে পারে না। হয় ওদের নেবেন, না হয় মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারদের নেবেন। সিদ্ধান্ত আপনাদের। প্রমাণিত পরীক্ষিত রক্তের সৈনিক চান না, না কি-পিঠে ছোরা মারা, আপসকামী বিশ্বাসঘাতকদের রক্তের সুসময়ের কোকিলদের দলে চান। ফলাফল ভেবে সিদ্ধান্ত নেবেন আশা করি। ফলাফল এখন এই সুদিনে বোঝা যাবে না। ভয় হয়, ভুল সিদ্ধান্ত নিলে, এমন একদিন আসতে পারে যেদিন আবার প্রয়োজন হবে এই পরীক্ষিত সৈনিকদের সমর্থন। চোখের জলে, বুকের অভিমানে সরে যাওয়া লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সেই প্রাপ্তিহীন মানুষগুলো আবার আসবে আপনাদের সমর্থনে সেটাও নিশ্চিত। কারণ ‘বিশ্বস্ততা’ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তৃণমূলের কিছু না পাওয়া মানুষগুলোর প্রধানতম বৈশিষ্ট্য। তাঁরা সেটা বাবার থেকে, দাদার থেকে অনেক ত্যাগের মাধ্যমে পারিবারিক পরম্পরায় শিখেছে। কিন্তু, প্রশ্ন হল, বিরুদ্ধ সময়ে আঘাত পেয়ে, সুসময়ে উপেক্ষিত হয়ে, আপনাদের নতুন সুবিধাভোগী শ্রেণীর দৌরাত্ম্যে এই পরীক্ষিত মানুষগুলো ততদিন টিকে থাকবে তো? যদি থাকে, আবার আসবে তাঁরা অন্য কোন এক ’৭১-এ, আবার বুকের রক্ত ঢেলে দেশপ্রেমের মূল্য দিতে, আসবে তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম। কিন্তু যদি সেদিন তারা টিকে না থাকে, সেই দুর্দিনে কে দাঁড়াবে আপনাদের পাশে? কেন দূরে ঠেলে দিচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এই কোটি কোটি নীরব সমর্থকদের? যাদের দলে নিতে চাইছেন তারা শুধু ৩০ লক্ষ শহীদের হত্যাকারীই নয়, তারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, জাতীয় চার নেতার হত্যাকারী, রাসেলের হত্যাকারী। তারা এখনও প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধু কণ্যাকে হত্যার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেন এদের দলে নিতে চাইছেন? ভাবছেন তারা আপন হবে? সাপ কখনও পোষ মানে? আমি বিশ্বাস করি না এটা আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত। এ মাসে সদস্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত জানতে চাই। https://www.facebook.com/dr.nuzhatchoudhury/timeline?lst=1268846487%3A100005640120593%3A1562243102
হঠাৎ কাদের সাহেব উল্টো পথে হাটার কারণটা আমার কাছে রহস্যময় মনে হচ্ছে— কবীর চৌধুরী তন্ময়
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান কবীর চৌধুরী তন্ময় তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন— ‘‘শেখ হাসিনার উপর বিশ্বাস রাখুন’ শিরোনামের স্ট্যাটাস বলেছেন, ‘‘পরিবারে যুদ্ধাপরাধী থাকলেও আ’লীগের সদস্য হওয়া যাবে-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ ওবায়দুল কাদের সাহেব হঠাৎ এই ধরনের কথা কেন বলেছেন- এটা আমার বোধগম্য নয়। ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেন, কোন পরিবারে কেউ হয়তো সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে ছিল বা জামায়াত ইসলাম করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের সাথে যোগসুত্র ছিল সেটা ৪৭ বছর পরে এই ধরনের বিষয় দেখার তো কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমার প্রশ্ন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বার বার এই ধরনের লোকদের ফুলের মালা দিয়ে দলে না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরেও হঠাৎ কাদের সাহেব উল্টো পথে হাটার কারণটা আমার কাছে রহস্যময় মনে হচ্ছে। অনেকের সাথে আলোচনা করে আমি সত্যিই মর্মাহত হয়েছি। অনেকেই বলেছে, অতীতে বিতর্কিত ও চিহ্নিত লোকদের দিয়ে গ্রুপ ভারী করা এবং তাদেও বৈধতা দেওয়ার আগাম বার্তা হতে পারে। অথবা অন্য কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে এই ধরনের কথা বলা হয়ে থাকতে পারে--- কিন্তু আমার প্রশ্ন, ৪৭ বছর পর যখন যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে কথা বলার যদি কোনো যৌক্তিকতা না থাকে তাহলে তাদের বিচার করা কি প্রশ্নবিদ্ধ নয়..? তাহলে সাঈদীকে কারাগারে রেখে জনগণের টাকায় লালন-পালন না করে তাকে ছেড়ে দিলেই তো হয়। বরং আওয়ামী লীগের ওই বড় পদে সাঈদীকে বসালেও মুক্তিযুদ্ধের সন্তানরা কিচ্ছু বলবে না। মনে করবে, তাদের পূর্ব পুরুষদের দেখানো পথ কতিপয় নেতাকর্মী ধ্বংস করেছে যেভাবে ৭৫-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে প্রথমবার শুরু হয়েছিল। কারণ, যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, জামায়াত ইসলামের সাথে শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থে কারা কারা সম্পর্ক তৈরি করেছে, আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধনে নিজেরা একাকার হয়েছে-এ যুগের স্যোশাল মিডিয়ার কল্যানে এখন আর লুকায়িত নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত নয়। শেখ হাসিনার কোনো নির্দেশনা নেই। এটা জনাব ওবায়দুল কাদের সাহেবের একান্ত মতামত। যারা ফোন করে হতাশা প্রকাশ করেছেন তাদের ধৈর্য্য ধরতে বলবো। শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যক্তি ও সংগঠন অন্য যেকারো কথায় মনোবল হারাবেন না। মনে রাখবেন, শেখ হাসিনা কড়া ভাষায় দলের সকল নেতাকর্মীদের নিষেধ করেছিল। ব্যক্তির গ্রুপ ভারী করার জন্য অনেকেই এই অপকৌশল গ্রহণ করে জামায়াতের কিছু লোক ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগে ঢুকিয়ে ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। শেখ হাসিনার অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে। কাদের সাহেব খুব অসুস্থতা থেকে কিছুদিন আগে সুস্থ হয়েছেন। বলা যেতে পারে, মৃত্যুর খুব কিনারা থেকে তিনি ফিরে এসেছেন। আমি আশাবাদী, বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ওবায়দুল কাদের সাহেব নিশ্চয়ই মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত আদর্শ স্বাধীনতাবিরোধীদের আওয়ামী লীগের যোগদান করিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং সর্বপরি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দেশের এক তৃতীয়াংশ জনগণকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে না, তাদের মনোবল ধ্বংস করবে না। সবাইকে বলবো, শেখ হাসিনার উপর বিশ্বাস রাখুন। আমাদের আশা ভরসা আর বিশ্বাসের জায়গা একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। প্লীজ, কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।’’ https://www.facebook.com/TanmoyOfficialbd
এইচএস/এসএমএম