কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বাংলাদেশের মসজিদগুলোয় নামাজ আদায়ে গত সপ্তাহে যে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে সেটার প্রতিফলন দেখা গেছে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের মসজিদগুলোতে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে শুক্রবার (১০ এপ্রিল) জুমার নামাজে একসঙ্গে কয়েক হাজার মুসুল্লির একসঙ্গে নামাজ আদায় নিয়মিত চিত্র।
পবিত্র শবে বরাতের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এই লোক সমাগম আরও বেড়ে যায়।
শুক্রবার (১০ এপ্রিল) জুমা নামাজের চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। মসজিদের ইমাম, খতিব, খাদেম, মুয়াজ্জিন এবং তাদের সঙ্গে হাতে গোনা কয়েকজন মুসল্লি ছাড়া কাউকেই মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলা শহরগুলোর মসজিদের চিত্রও প্রায় একই।
পাড়া মহল্লার ছোটখাটো মসজিদেও দেখা গেছে হাতে গোনা কয়েকজন মুসল্লি নামাজ আদায় করছেন।
রাজশাহীর শাহী মসজিদে যেখানে প্রতি জুমায় হাজারো মানুষের জামাত হয়। সেখানে মানুষের সমাবেশ ঠেকাতে কয়েকজন মুসল্লি প্রবেশের পর গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন মসজিদের খাদেম।
এ ব্যাপারে মসজিদের ইমাম হাবিবুর রহমান কাসিমি বলেন, আমরা মাইকিং করে মুসল্লিদের বলেছি তারা যেন বাড়িতে নামাজ আদায় করেন। তারপরেও ২০-৩০জন মুসল্লি আসতোই। আজকেও প্রচুর মানুষ ভিড় করেছে। কিন্তু আমরা ৩/৪ জন ঢোকার পরেই মসজিদে তালা ঝুলিয়ে দেই। তারপরও অনেকে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল।
৬ এপ্রিল (সোমবার) দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি শুক্রবারের জুমা নামাজ মসজিদের জামাতে আদায়ের পরিবর্তে বাড়িতে পড়ার নির্দেশ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সরকারি ওই নির্দেশনায় তাবলিগ জামাতসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে সমাবেশ এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক বা আদর্শগত মতবিরোধ থাকলেও কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
সব ভিন্নমতের ঊর্ধ্বে উঠে প্রয়োজনে তারা সরকারকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫ জন আলেম, মসজিদ উন্মুক্ত করে দেয়া আহ্বান জানিয়েছেন।
খেলাফত আন্দোলনের অফিশিয়াল ইমেইল থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এই আহ্বান জানান।
সেখানে তারা বলেছেন কাঁচা বাজারগুলোতে জনসমাগমের বৈধতা থাকলেও নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লিদের মসজিদে উপস্থিতির ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ ও সংখ্যা নির্ধারণ যুক্তিসংগত নয়।
ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী নূর হোসেন কাসেমীর প্রেস সচিব মনির আহমেদ জানান, এই বিধিনিষেধ আরোপ মুসল্লিদের বিক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে।
মনির আহমেদ বলেন, এ ধরনের বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে কারও হৃদয়ে যদি আকুতি হয় যে তিনি মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়বেন, মনে শান্তি পাবেন, প্রার্থনা করবেন, কান্না-কাটি করবেন এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য, সেই সুযোগটা যেন রাখা হয়। তারা এই আবেদন জানিয়েছেন।
মুসল্লিদের এই সুযোগ থেকে দূরে রাখা হলে, মসজিদে প্রবেশ ঢালাওভাবে বন্ধ করে দেয়া হলে মানুষের মনে ক্ষোভ জাগতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, কোভিড-১৯ মারাত্মক সংক্রামক রোগ হওয়ার কারণেই তারা এই বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন।
এটি কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয় এবং কোনও ধর্মের সাথে এই বিধি-নিষেধ সাংঘর্ষিক নয় বলেও প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, দেশের সব পক্ষের ওলামায়ে কেরামের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদি সংক্রমণ প্রতিরোধে পবিত্র মক্কা ও মদিনা বন্ধ করে দেয়া হয় আমরা আমাদের মসজিদ খুলে দেয়ার কোনও যৌক্তিকতা দেখিনা।
মসজিদে জামাত সীমাবদ্ধ করা গেলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অনেক ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, মানুষ বাড়ির ছাদে বা খোলা জায়গায় জামাতে নামাজ আদায় করছেন।
এক্ষেত্রে সরকারি এই নির্দেশনার সুফল কতোটা পাওয়া যাবে সেটা নিয়েও থেকে গেছে প্রশ্ন। বিবিসি বাংলা।
এসএমএম