একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বহু নারী ধর্ষণের শিকার হন। স্বাধীনতার পর পরিবার ও সমাজ সেই সব নারীকে গ্রহণ করতে চায়নি। দেশ স্বাধীন হয়ে গেলে যখন বীরাঙ্গনা নারীদের নাম পুনর্বাসনের জন্য তালিকাভুক্ত হচ্ছে, তখন তাদের পিতার নাম, ঠিকানা, কিছুই ছিল না। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘পিতার নাম লিখে দাও শেখ মুজিবুর রহমান। আর ঠিকানা ৩২ নম্বর ধানমন্ডি।’
বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আজ 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর।' সেখান থেকে সাত বছরের মেয়ে রিদিতাকে নিয়ে বের হলেন তার মা তমা। প্রথম শ্রেণির ছাত্রী রিদিতাকে তার চোখে বঙ্গবন্ধু কেমন, এমন প্রশ্ন জিগ্যেস করায়, সে বলে, “বঙ্গবন্ধু মানে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ।”
শিশুদের ভাবনায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। তারা বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে গিয়ে তাই সব মিলিয়ে একটা বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরে। শিশুদের চিন্তা-ভাবনায়, শিশুদের কল্পনায় তাদের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। তারা তাদের মনোজগতের কল্পনা থেকে তাদের মনে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকে। বেশিরভাগ শিশুর মননে বক্তৃতারত বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের আঙ্গুল উচানো ছবিটি দেখা যায়। বঙ্গবন্ধুর ওই দীপ্ত কণ্ঠ শিশুদের উদ্দীপ্ত করে।
ছেলেবেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য পেয়েছেন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন। বঙ্গবন্ধুকে দুই বার কাছে পাওয়ার সেই মধুর অভিজ্ঞতা তিনি লিখে গেছেন তাঁর স্মৃতিকথায়। এক শিশুর মনে বঙ্গবন্ধু কতখানি গভীরে বাস করতে পারেন, তা প্রাপ্ত বয়সে এসেই স্মৃতি রোমন্থনে এসে স্পষ্ট হয়। ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন লিখেছেন : “আমার ছেলেবেলার সবচেয়ে বর্ণাঢ্য উজ্জ্বল আর গৌরবময় স্মৃতি হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহ, সান্নিধ্য ও স্পর্শের স্মৃতি। শৈশবে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যস্মৃতি আমার মনোজগতে চিরস্থায়ী একটা ছাপ ফেলে দিয়েছিল। তাঁর স্পর্শের সৌরভ আর সান্নিধ্যের গৌরব দীপান্বিত করেছিল আমাকে। সেই বৈভব আমি বহন করে চলেছি আজও। আমার করোটির চিরহরিৎ অলিন্দে থাকা, হৃদয়ের গভীর গোপন কুঠুরিতে থাকা একজন মুজিব প্রায়শই ছন্দ হয়ে হাসেন এবং ছড়া হয়ে আসেন। প্রকৃতি এক অদ্ভুত খেলা খেলে আমার সঙ্গে। একটা ঘোরের মধ্যে ফেলে যেন-বা প্রকৃতিই আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয় শেখ মুজিবের ছড়া। একের পর এক। আর সেটা মুদ্রিত হয় আমার নামে—“কান পেতে শোনো এই বাংলার মাটি বায়ু নদী সরোবর/জপিতেছে নাম করিয়া প্রণাম মুজিবর আহা মুজিবর...।”
কবি সুনীল গঙ্গোপধ্যায় তাঁর একটি প্রেমের কবিতায় বলেছিলেন—
“এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ
আমি কি এ হাতে কোনো পাপ করতে পারি?”
সুনীলের সেই কবিতার পঙ্ক্তির মতো আমিও বলতে পারি দ্বিধাহীন চিত্তে—
“বঙ্গবন্ধুর হাত ছুঁয়েছে আমার চিবুক,
স্পর্শ করেছে আমার কাঁধ,
তাঁর জাদুককি আশীর্বাদের হাতটি তিনি রেখেছিলেন অপাপবিদ্ধ বালক আমার ছোট্ট এইটুকুন মাথায়,
বঙ্গবন্ধুর অলৌকিক স্পর্শ লাগা আমার শরীর-মন-মেধা-মনন কি কোনো পাপ করতে পারে?”