বাংলাদেশের গ্রামবাংলার মানুষের আবহমানকালের খাবার পান্তাভাত আর আলুভর্তা পরিবেশন করে রান্না বিষয়ক একটি জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী।
এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন জাস্টিন।
দুই দিন ধরে চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় জাস্টিন, পিট ও কিশোয়ার এই তিন ফাইনালিস্টকে নিয়ে।
প্রথম দিন ফাইনাল ডিশে কিশোয়ার রান্না করেন ‘স্মোকড ওয়াটার রাইস, আলু ভর্তা ও সার্ডিন’। অর্থাৎ বাঙালির কাছে চিরচেনা পান্তা-ভাত, আলু ভর্তা আর সার্ডিন মাছ ভাজি।
ফাইনাল ডিশ রান্না নিয়ে কিশোয়ার বিচারকদের বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় এমন রান্না সত্যিই চ্যালেঞ্জের। সাধারণ রেস্টুরেন্টে এমন রান্না হয় না। কিন্তু বাঙালির কাছে এটা পরিচিত রান্না।’
ফাইনাল ডিশ হিসেবে এটা রেঁধে নিজের তৃপ্তির কথাও জানান কিশোয়ার। এই রান্না দেখে ও খেয়ে বিচারকেরা রীতিমতো অভিভূত হয়ে পড়েন।
তিনজনেই দশে দশ দেন কিশোয়ারকে।
তবে চূড়ান্ত পর্বের শুরুটা কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জের ছিল কিশোয়ারের জন্য।
তিনি হাঁসের একটি পদ রান্না করা শুরু করেছিলেন। বিচারকেরা যখন তার রান্না দেখতে এলেন সবকিছু দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘এখানে কিশোয়ার কোথায়?’
তারপরেই তিনি তার মেন্যু চেঞ্জ করার চিন্তা করেন আর ফাইনাল ডিশ হিসেবে পরিবেশন করেন বাঙালির চির পরিচিত আলু ভর্তা, পান্তা ভাত আর সার্ডিন মাছ, যেই মাছের স্বাদ অনেকটা ইলিশ মাছের কাছাকাছি।
চূড়ান্ত পর্বে ফাইনাল ডিশ রেঁধে ৫১ নাম্বার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন, প্রথম স্থানে ছিলেন পিট ৫৩ নাম্বার নিয়ে।
তবে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া’র ফাইনাল রেজাল্টের আগেই লাখ লাখ বাঙালির মন জয় করে নিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রামসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত এবং একই সঙ্গে প্রচণ্ড জনপ্রিয় কয়েক পদের রান্নার ভিডিও, আর সঙ্গে পরিচিতি পেয়ে যান এসবের রাঁধুনি।
লাউ চিংড়ি, বেগুন ভর্তা, খিচুড়ি, মাছ ভাজা, আমের টক, খাসির রেজালা— মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় একের পর এক এমন মুখরোচক খাবার রান্না করে বিচারকসহ বিভিন্ন ভাষাভাষীর দর্শকের নজর কাড়েন এই শেফ।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশে প্রচলিত নানা ধরনের খাবারকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার কারণেই ৩৮ বছর বয়সী এই শেফকে অন্যসব প্রতিযোগী থেকে আলাদা করেছে।
চ্যাম্পিয়ন হিসেবে জাস্টিন পান দুই লাখ ৫০ হাজার ডলার, ৩০ হাজার ডলার পান পিট এবং কিশোয়ার পান ২০ হাজার ডলার।
দুই দিনের এই প্রতিযোগিতায় প্রথম দিন কিশোয়ারের ঝুড়িতে আসে ৫১ পয়েন্ট, অন্যদিকে পিট ৫৩ পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষে ছিলেন; জাস্টিন পেয়েছিলেন মাত্র ৫০ পয়েন্ট। শেষ দিনে ঘুরে যায় পয়েন্টের খাতা। ১১৪ পয়েন্ট আসে আমাদের কিশোয়ারের ঝুলিতে আর পিটের ১২৪। জাস্টিন ১২৫ পয়েন্ট পেয়ে অর্জন করেন শীর্ষস্থান।
এটি ছিল মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ১৩তম আসর।
কিশোয়ারের জন্ম মেলবোর্নে। মা লায়লা এবং বাবা কামরুল চৌধুরীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বাঙালি কমিউনিটিতে তিনি বেড়ে ওঠেন। তার বাবা বাংলাদেশি এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মূলত পড়াশোনার উদ্দেশে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানেই দেখা হয় ভারতীয় লায়লার সঙ্গে। কিশোয়ার তার ব্যাচেলর ডিগ্রি নেন মনাশ ইউনিভার্সিটি থেকে এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন ইউনিভার্সিটি অব আর্ট ইন লন্ডন থেকে।
তিনি চাকরি সূত্রে পাঁচ বছর বাংলাদেশে ছিলেন। সেই সময় তিনি দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১৫ সালে মেলবোর্নে ফিরে গেলেও দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন সবসময়।
জাগরণ/এসএসকে