বইমেলার শিশুতোষ বই কতটা শিশুবান্ধব?

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২১, ০৯:১২ পিএম বইমেলার শিশুতোষ বই কতটা শিশুবান্ধব?

গৃহত্যাগী সূর্য যখন হেলে পড়তে শুরু করেছে সন্ধ্যার গায়ে। তখন ছোট ছোট পায়ে বাবার হাত ধরে শিশু চত্ত্বরের বইয়ের স্টলগুলো ঘুরে দেখছে তানভীর। ঘুরতে ঘুরতে এক সময় চোখ আটকে গেলো একটি ভূতের বইয়ে। ব্যাস, ওমনি ভূতের বইটি কিনে ফেললো সে।

ভূতের বই কেনো ভালো লাগে — জানতে চাইলে তানভীরের উত্তর, “ভূতের গল্প অনেক মজার। পড়তে ভালো লাগে। আবার একটু ভয়ও করে। তবুও ভূতের গল্পের বই আমার সবচেয়ে প্রিয়।”

শুধু ভূতের গল্পই না, এবারের বইমেলায় শিশুদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে গল্প, কবিতা, ছড়ার বই। মেলা প্রাঙ্গণে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্তানদের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন বই কিনে দিচ্ছেন তারা। তাদের মতে, মেলায় আসলেই বই পড়ার প্রতি শিশুদের আগ্রহ তৈরি হবে।

ভিকারুননেছা নূন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সামিয়া মাসুদের বইগুলো কেনা হয়েছে তার পছন্দ মতো। এ নিয়ে তার মা সুরাইয়া মাসুদ বলেন, “শিশুদের জন্য যেসব ভূতের বই লেখা হয় সেগুলোতে দারুণ কমেডি থাকে। মোবাইল-টিভি দেখার চেয়ে ভূতের বই পড়ে তারা যদি বিনোদন পায় তাহলে তো ক্ষতির কিছু দেখছি না। সাধারণ গল্পের বইগুলো ওরা পড়তে চায় না। ভূতের গল্পগুলো ভালো পড়ে। এতে করে বানানচর্চাও হয়। রিডিং পড়ার দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়।”

তবে শিশুর হাতে সঠিক বইটি তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করছেন শিশুসাহিত্যিক ও প্রকাশকরা। 

প্রায় ১৫০ টির মতো শিশুতোষ বই বের করেছে প্রতিভা প্রকাশনী। প্রতিষ্ঠানের প্রকাশক মঈন মুরসালিন বলেন, “বাংলা শিশু সাহিত্যের বয়স মাত্র দুইশ বছর। শিশু সাহিত্যের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, একসময় লেখকরা তাদের লেখায় নীতিশিক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিতেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এক শ্রেণির লেখক গল্পের শেষে রাজা-রানীর বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। শিশুতোষ বইয়ে বিয়ের বিষয়টি কেনো থাকবে? শিশুরা বিয়ের কী বোঝে! এটা তো হাস্যকর। এর মানে শিশুদের মেজাজ তারা বুঝতে পারছেন না।”

তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ কবিতায় এগিয়ে গেলেও শিশু সাহিত্যে পিছিয়ে আছে। খুঁজলে হাজার হাজার কবি পাওয়া যাবে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য শিশু সাহিত্যিক পাওয়া যাবে না। তবে কিছু কিছু লেখক শিশু সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। শিশু সাহিত্যের ক্ষেত্রে তারা মর্ডানিজম, পোস্ট-মর্ডানিজম ও ম্যাজিক রিয়েলিজমের ব্যবহার করছেন। শিশুদের জন্য সহজ ভাষায় লিখতে হবে। যদিও লেখার সময় অনেকেই কঠিন করে লিখে ফেলেন।”

শিশু সাহিত্যিক ইমরুল ইউসুফ বলেন, “শিশুতোষ বইগুলোতে শিশুদের মানসিক বিকাশে যতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত ততটা দেওয়া হচ্ছে না। বেশ কিছু প্রকাশনী কুইজ, সাধারণ জ্ঞানের বই প্রকাশ করছে। এসব বইয়ে মানসিক বিকাশ হয় না। এই বই জ্ঞান অর্জন করা গেলেও কল্পনা শক্তি বাড়ানো সম্ভব নয়। অথচ একটি রূপকথার গল্প শিশুর কল্পনা শক্তি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। তাই লেখকদের এমন সব বই লেখা উচিত যেগুলো বাচ্চাদের কল্পনা শক্তিকে বিস্তৃত করে।”

বাচ্চাদের বই কেমন হতে পারে — প্রসঙ্গে ইমরুল ইউসুফ আরো বলেন, “গল্পের মাধ্যমে আমাদের শিশুকে পরিবেশ, পরিবার, সমাজ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। তবে সেটা এমনভাবে করতে হবে যেন সে টেরও না পায়। আর এখানেই লেখকের মুন্সিয়ানা।”

এসময় তিনি শিশুদের জ্ঞানচর্চা ও মানসিক বিকাশে ছোটবেলা থেকেই গল্প, কবিতা, ছড়াসহ বিভিন্ন ধরনের বইপড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার ওপরে তাগিদ দেন।

আরও সংবাদ