গত বছর দেশে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। অদৃশ্য এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেন অসহায় হয়ে পড়েছিল মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে মানুষ জীবনযাপন করেছে। বলা যায়, সেই সময়টায় ভয়ানক সব অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হয়েছে সবাই। এ বছরও করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বগতির দিকে।
করোনার ফলে ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে মার্চে শুরু হয়েছে বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলা। এবার বইমেলায় গল্প, উপন্যাস ও কবিতার বইয়ের পাশাপাশি বেরিয়েছে করোনাবিষয়ক নানা বই। বইগুলোতে করোনার সময় মানুষের জীবনের নানা ভয়ানক অভিজ্ঞতা, সচেতনতাবিষয়ক কথা লেখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বইমেলায় করোনাবিষয়ক অর্ধশতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে।
রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে বইমেলায় এসেছেন গৃহিণী ফারজানা জ্যোতি। বইয়ের স্টলে করোনাবিষয়ক বই খুঁজতে দেখা গেল তাকে। কেন করোনাবিষয়ক বই খুঁজছেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, “করোনা তো আমাদের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। ভ্যাকসিন এলেও আমাদের সচেতন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। গত বছর করোনার যে খারাপ সময়টা কাটিয়েছি সেই সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বেশকিছু বই লিখেছেন লেখকরা। মূলত সেই সব বই খুঁজছি। এছাড়া করোনকালে স্বাস্থ্যবিষয়ক বইও আছে পছন্দের তালিকায়। মনের মতো বই পেলে কিনে ফেলব।”
বইমেলায় অন্যপ্রকাশ, বাতিঘর, প্রথমা, অঙ্কুর, জাগৃতি, অনুপম প্রকাশনী, বইপত্রসহ বেশকিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান করোনাবিষয়ক বই প্রকাশ করেছে।
প্রথমার বিক্রয়কর্মী নাঈমুল হক ইমন বলেন, “করোনার বিষয়বস্তু নিয়ে আমাদের প্রকাশনা থেকে তিনটি বই বের হয়েছে। বাচ্চারা কীভাবে করোনা থেকে সুরক্ষা পাবে সেটা নিয়ে বই ‘গুড্ডুবুড়ার করোনা প্রতিরোধক আবিস্কার’। এটি লিখেছেন আনিসুল হক। এছাড়া করোনা নিয়ে অনুবাদ বই আছে ‘কোভিড-১৯: করোনাভাইরাস যা জানা দরকার’। ড. মাইকেল মোসলির লেখা বইটি ভাষান্তর করেছেন ড. আবুল বাশার। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের কী কী করণীয়—সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। তৃতীয় বই ‘যুদ্ধত্তোর থেকে করোনাকাল’ লিখেছেন রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। বাংলাদেশের ৫০ বছরে সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামোর বিশ্লেষণ করা হয়েছে বইটিতে।”
করোনার ওপর দুটি বই প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। যদিও এই বিষয়ের বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ কম বলছেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটির স্টল ইনচার্জ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমাদের প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত দুইটির বইয়ের নাম— ‘করোনা উপাখ্যান’ ও ‘করোনাকালে বহতা জীবন’। প্রথমটি লিখেছেন ওয়াসেক আজফার রাজা এবং দ্বিতীয়টি লিখেছেন শাইখ সিরাজ। বই দুটির বিক্রি তেমন নেই। দুই-এক কপি বিক্রি হয়েছে। যদিও আমরা আশা করেছিলাম, মানুষ কিনবে। আসলে, করোনার আতঙ্কে মানুষ বইমেলায় আসতে পারছেন না। তাই এবার বিক্রিও কম।”
করোনাবিষয়ক উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে—রিজওয়ানুল ইসলামের লেখা ‘করোনাঘাতে অর্থনীতি ও শ্রমবাজার’। মঈনুস সুলতানের লেখা ‘যুক্তরাষ্ট্রের মফস্বলে করোনা সংকট ও বর্ণভেদ বৃত্তান্ত’। বই দুটি প্রকাশ করেছে বাতিঘর।
এদিকে করোনা নিয়ে দুটি বই প্রকাশ করেছে জাগৃতি প্রকাশনী। ‘কোভিড দিনে রানী স্বাস্থ্য’ বইটি লিখেছেন ডা. ফাহমিদা রশীদ স্বাতী। ডা. নুরুন নেছা বেগম লিখেছেন ‘করোনা মহামারী ও পরিবর্তিত বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য’। এছাড়া করোনার ওপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি কবিতার বইও বেরিয়েছে। প্রকাশ করেছে বেশকিছু প্রকাশনী।
এদিকে করোনার কারণে বইমেলার ২২তম দিনেও ছিল না বইপ্রেমীদের ভিড়। এদিন নতুন বই এসেছে ৪৭টি। প্রকাশ হয়েছে আটটি গল্পের বই, উপন্যাস ছয়টি, প্রবন্ধের বই পাঁচটি। কবিতার বই ১৯টি। এ ছাড়া প্রকাশ পেয়েছে গবেষণা, ছড়া, জীবনী, মুক্তিযুদ্ধ, নাটকসহ বিভিন্ন বিষয়ের বই। এ পর্যন্ত দুই হাজার ৩শ ৩৩টি নতুন বই প্রকাশ হয়েছে।