এবার অমর একুশে বইমেলা যেন এক দীর্ঘশ্বাসের নাম। করোনার কারণে প্রথম থেকেই বইমেলা নিয়ে দোদুল্যমান অবস্থায় ছিল সরকার। প্রকাশকদের আগ্রহে এক মাস পিছিয়ে মার্চে বইমেলা শুরু হয়। যদিও তাতে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়নি। করোনার চোখ রাঙানিতে কয়েক দফা কমেছে বইমেলার সময়সূচি। ফলে বইমেলায় যেতে বইপ্রেমীদের আগ্রহ কমে যায়। তবে কিছু কিছু পাঠক করোনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বইমেলায় আসছে।
এদিকে এপ্রিলের ১৪ তারিখ বইমেলা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগে অর্থাৎ ১২ এপ্রিল বইমেলা শেষ হচ্ছে। ১৪ এপ্রিল থেকে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়া হতে পারে এমন সিদ্ধান্ত সামনে রেখে মেলার শেষের দিকের তারিখ কমিয়ে আনা হয়। এ বছর বইমেলা নিয়ে এমন ছন্নছাড়া সিদ্ধান্তের কারণে কিছুটা বিরক্ত বইপ্রেমীরা। বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, বইমেলা ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হলে এত সমস্যার সৃষ্টি হতো না।
মেলায় বই কিনতে আসা রাজীব হোসেন শান্ত বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার মেলার পরিবেশ একেবারে ভিন্ন। মেলায় কোনো কোলাহল নেই। মানুষের ভেতর কোনো আনন্দ কাজ করছে না। প্রকাশরাও হতাশায় আছেন। তাদের স্টল ব্যয়ও উঠবে না। আমি মনে করি, বইমেলা ফেব্রুয়ারি মাসে হয়ে গেলে ভালো হতো। তখন করোনার এতো সংক্রমণ ছিল না। তাছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসের বইমেলার সঙ্গে মানুষের একটি আত্মার সম্পর্ক থাকে, যা অন্য মাসগুলোতে পাওয়া যাবে না।”
আবার কেউ কেউ মনে করছেন, করোনার মধ্যে বইমেলা হওয়া ঠিক হয়নি। বই কিনতে আসা আরেক পাঠক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, “করোনার মধ্যে বইমেলা চলতে দেওয়া ঠিক না। করোনার মধ্যে বইমেলায় লোক কম হবে, এটা তো আগেই অনুমেয় ছিল। এখন আবার সরকার নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগে মেলা শেষ করে দিচ্ছে। এটা ভালো দিক। যারা বই কেনার তারা ইতোমধ্যে কিনে ফেলেছেন। বইমেলার সময় আরও বাড়ালে পাঠক বাড়বে এমনটা না।”
তবে বই বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, পহেলা বৈশাখে বই বিক্রি হওয়ার বড় সুযোগ ছিল। মেলার সময় কমিয়ে দেওয়ায় সেই সুযোগ হাতাছাড়া হয়ে গেল। এটাতে তারা ‘ক্ষতির ওপর ক্ষতি’ হিসেবে দেখছেন।
বর্ষাদুপুর প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের বিক্রি খুবই কম। আমরা আশা করছিলাম পহেলা বৈশাখে আমাদের বিক্রি বাড়বে। এতে করে ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারব। কিন্তু সেটা আর হলো না। লকডাউনের কারণে দুই দিন আগেই মেলা বন্ধ করে দিচ্ছে, এতে করে আমাদের ক্ষতির পাল্লাটাই ভারি হয়ে থাকল।”
শব্দশৈলীর বিক্রয়কর্মী সুদেব চন্দ বলেন, “এবার আমরা নিশ্চিত লোকসানের মুখে পড়েছি। শুক্রবার যখন পাঠক বইমেলায় ঢুকছিলেন তখন সাড়ে চারটার দিকে গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাঠক তো আর রোদে মেলায় আসবে না। রোদ কমার পর যখন মেলায় আসেন, তখন তারা দেখেন গেট বন্ধ। ফলে আমরা তাদের কাছে বই বিক্রি করতে পারছি না। তাছাড়া আমাদের লক্ষ্য ছিল পহেলা বৈশাখ। তার আগেই তো মেলা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে বলতে হয়, এবার বইমেলায় সব প্রকাশকরা বড় অংকের ক্ষতির সম্মুখিন হলেন।”
এর আগে আগামী ১২ এপ্রিল অমর একুশে গ্রন্থমেলা শেষ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। শনিবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা ফয়সাল হাসান এক বার্তায় এ তথ্য জানান।
করোনা মহামারির নানা বাধা পেরিয়ে গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হয় এবারের বইমেলা। শুরুতে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলার সময়সূচি ধার্য করা হলেও করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় মেলার সময় কমিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর দেশজুড়ে সরকার চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করায় ফের বইমেলার সময়সূচিতে পরিবর্তন এনে বেলা ১২ট থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।