আমার জীবনে তেমন কোনো অসুখ নেই। আমি সুখেই আছি। বিয়ের সময় মা আমাকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন, যদি আমি মানিয়ে না নিই, মেনে না নিই। আসলে এই সুখে থাকা তো মানিয়ে চলা আর মেনে চলাতেই সীমায়িত। সুখের লক্ষণগণ্ডি ততক্ষণই সুরক্ষিত, যতক্ষণ তা অতিক্রম করার রাবণ স্পর্ধার আহ্বান অস্বীকার করা যায়। আমি জানি কত লক্ষ কোটি নারী সেই আহ্বান শুনতেই পায় না। শুনেও নিশ্চিত, নিশ্চিন্ত সুরক্ষিত জীবনের ঘেরাটোপ ভেঙে অসুখ ডেকে আনতে চায় না বলে সেই আহ্বান উপেক্ষা করে।
আমিও চাইনি। আমার চারপাশের সমাজ যেসব পরিমাপক দিয়ে সুখ-অসুখের পরিমাণ যাচাই করে, তার সব কয়টা বিদ্যমান আমার জীবনে। আমি এতটা অবুঝ হইনি সাধ করে অসুখ কিনতে যাব। আমার ওপর অবশ্য মায়ের সে ভরসা ছিল না। মায়ের চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। এযাবৎকাল আমার কৃতকর্ম কোনোভাবেই মাকে আশ্বস্ত করতে পারেনি কায়েসের সাথে বিয়ে হলে আমি সুখে জীবনযাপন করব। মেনে নেব, মানিয়ে নেব।
বাপের সাথে মায়ের ডিভোর্স হলে মেয়েকে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়, মানিয়ে নিতে হয়। আমি সেই সরল অঙ্কটা অনেককাল না বুঝে মাকে দুশ্চিন্তার উত্তাল সমুদ্রে বারবার ছুড়ে দিয়েছি। আজ যখন মেনে চলা, মানিয়ে চলার বন্ধুর পথে নিজেকে অস্বীকার করতে করতে হাঁপিয়ে যাই, পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি এক অপরিণামদর্শী, স্বপ্ন-প্রত্যাশাহীন, অগভীর চিন্তার, স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া এক বালিকাকে। মায়ের সংগ্রামমুখর জীবনকে উপলব্ধি করে নিরীহ হয়ে থাকার কথা যার, যে কিনা বাদ বাকি আর দশটা সময়ের স্রোতে ভাসা বালিকার মতো কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের ছোঁয়া লাগতেই পরাগায়নমুখী প্রজাপতির মতো পাখা মেলে দিয়েছি। বয়সের ধর্মেই সাড়া দিয়েছি। দেখছি এক নিরুপায় সন্ধ্যায় নারী উন্নয়ন কেন্দ্রের সেলাই শিক্ষা কেন্দ্র থেকে ফিরেই মা উদ্ভ্রান্ত ফোন করছেন আমার ক্লাসমেট, বন্ধুদের।
আদতে তারা সবাই আমার প্রেমকাহিনি জানলেও এটা জানত না, সেদিন আমরা বেয়াড়া হয়ে দুঃসাহসের বেড়া ডিঙিয়ে ফেলেছি। মূলত তাদের কল্পনা তত দূর পৌঁছায় না, যত দূর আমরা পৌঁছে গেছি। দুপুর পর্যন্ত আমাকে কলেজের কমনরুমের বারান্দায় দেখা গেছে, এর চেয়ে বেশি কোনো তথ্য আমার মাকে জানাতে পারেনি। আমি মূলত তখন কাঠিতে লাগানো হাওয়াই মিঠাই, দায়-দায়িত্বের ওজনহীন রঙের জীবন আমার। এ যে কেবলই বাহারি রং, মুখে দিলেই ভ্যানিশ বোঝার মতো বোধবুদ্ধি, সময়-বিবেচনা কিছুই নেই আমার। আমার কাছে তখন সাহস কিংবা দুঃসাহস দুই-ই সমান। উদ্যোগটা রফিকের। মায়ের যত না কড়া শাসন তার চেয়ে বেশি আর্থিক টানাপোড়েন ক্লিষ্ট জীবনে দুই ঘরে বন্দি খাওয়া, ঘুম, টয়লেট এর বাইরে জীবনের কোনো রঙের সাথে আমার পরিচয় ঘটেনি। জীবনের অনেকখানি আনন্দ জুড়ে যে যৌনতা, পুরুষহীন ঘরে তার অভাবও এক দুর্বহ নিরানন্দ হয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ এলইডি বাল্বের মতো টিমটিম করে জ্বলত। আমার দুঃখী মা-ই সেই জীবন্ত নিরানন্দ। হাসি নেই, আনন্দ নেই, উদ্যম নেই। জীবন যেন ঘরে শুয়ে থাকা মৃত্যুপথ যাত্রী বৃদ্ধ!
রফিকের সাথে প্রেম করে আমি জেনেছিলাম, আমার মুক্তি চাই। এই দুঃখ দুঃখ পীড়ন থেকে আমি মুক্তি চাই। এক বছর স্কুলে যাইত আরেক বছর ঘরে কাটাই এভাবে কয়েক বছরে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজের বারান্দায় পা দিতে না দিতেই আমার প্রেম করা শুরু হয়েছিল রফিকের সাথে। প্রেমে পড়া কাকে বলে ঠিকঠাক বুঝিনি। ওকে দেখলে আমার বুক ধড়ফড় করে তা-ও নয়। রাতবিরাতে ওর স্পর্শের শিহরণে ঘুম হয় না তা-ও নয়। প্রেমের লক্ষণহীন প্রেম করা। হ্যাঁ, নিশ্চিত এ প্রেমে পড়া নয়, প্রেম করা।
এই প্রেম করার আবশ্যিক আনন্দ লুকিয়ে শরীরে ঝাঁপ দেওয়া। এটা ঠিক কীভাবে আমার মাথায় কিংবা স্মৃতিতে প্রবিষ্ট হয়েছিল, আজ পেছনে ফিরে তাকিয়ে ঠিক মনে করতে পারি না, এমন ধারণায় স্থিত হওয়ার মতো কোনো অনুষঙ্গ জীবনে এসেছিল কি না! কিন্তু রফিক প্রস্তাব করা মাত্র রাজি হয়ে যাই, চলে যাই শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত। দ্য গ্রান্ড সুলতান ঘিরে আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো রিসোর্ট। বাঁশের তৈরি ঘর আর ছড়ের ছাউনি দেওয়া রিসোর্টে রুমের ভাড়া বেশি না কম সেসব প্রশ্ন মাথায় মোটেও আসেনি। আমার প্রথম মুক্তি, দুঃখের ঘেরাটোপ থেকে মুক্তি, নিষেধ আর শাসনের পীড়ন থেকে মুক্তি। নিষিদ্ধ আনন্দের সাথে পরিচয়। প্রথম আনন্দের সন্ধান।
আনন্দটা আনন্দ হয়েই থাকত। মা চারদিকে সম্ভাব্য সব খবর জানার উৎসসমূহে ফোন টোন করে হতাশ হয়ে অশ্রুসজল চোখে বাতি নিভিয়ে বসেছিলেন সারা রাত। আমার বেহিসাবি অবিমৃশ্যতা তার জানা ছিল বলেই তিনি চুপচাপ সহ্য করছিলেন পরবর্তী যেকোনো পরিণামের জন্য। আমার ফিরে আসা কিংবা না আসার শূন্যতায় নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন নিজের নিয়তিকেই দোষ দিয়ে।
আমার আনন্দটা আনন্দই থাকত। পরদিন সকালে ফিরে আসতাম কিছুই হয়নি এমন হালকা চালে। কিন্তু ভোররাতে পুলিশ হামলে পড়ে রিসোর্টে। আমি কিংবা রফিক নই, এমন আরও কয়েক জোড়া ছেলেমেয়েকে সূর্যোদয়ের আগেই গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় থানায়। সন্ধ্যা নাগাদ সবার অভিভাবক এসে জমিদারের উঠানে নাকে খত দেওয়ার মতো মুচলেকায় স্বাক্ষর করে করে ছেলেমেয়েদের মুক্ত করে নিয়ে গেলেও পুলিশ আমার মাকে ফোন দেয় বেশ রাতে। মা পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত এগারোটা। মায়ের চোখে মুখে তখন প্রসববেদনা আর রক্তক্ষরণে সারা রাত কাতরানো বানেছা বুবুর মতো ফ্যাকাশে অসহায়ত্ব। রাজ্যের ক্লান্তি। মুচলেকা দিয়ে তিনি আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলেও পুলিশ রফিককে আটকে দেয় মাদকদ্রব্য বহনের মামলায়।
রফিক চুনারুঘাট-বাল্লা সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল এনে শহরে বিক্রি করে কে না জানে? আমাকে যে ঈদের সময় আল হামরা গার্ডেন সিটি থেকে থ্রি পিস কিনে দেয়, আর বার্গার বাজারে বার্গার খাওয়ায় সে তো ওই ফেনসিডিল বিক্রির টাকাতেই। আমি কেন শহরের সবাই তা জানে, কিন্তু শহরের সবাই যেটা জানে কিন্তু অর্বাচীন আমি জানি না এই ফেনসিডিল বহনের মামলায় জেল হলে সহজে জামিন হয় না আর পুলিশ চোখ রাঙিয়ে আমাকে বলে, কোর্ট থেকে ডাকলে এসে সাক্ষী দিয়ে যাবেন। মা স্বাক্ষর করার পর পুলিশ মায়ের হাত থেকে মুচলেকা টান দিয়ে নিতে নিতে মাকে শাসায়, কেমন মা আপনি, মেয়েকে সামলে রাখতে পারেন না। মায়ের সারা শরীরের রক্ত সেদিন অপমানের ভার বইতে না পেরে মুখে এসে জমা হয়ে মার চেহারাটা অচেনা করে দিয়েছিল আমার কাছে। আমি সেদিন প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম, জীবন আসলে আমার অর্বাচীন ভাবনার মতো সহজ নয়। মায়ের সংগ্রামের মতো নিষ্ঠুরও।
সুখের সাথে একটাই প্রত্যয় যোগ করেছি বলে বিভ্রান্ত হবেন না। আমি আসলে সুখেই আছি। এই ঘটনার কয়েক মাসের মধ্যেই মা ব্যস্ত সমস্ত হয়ে আমাকে বিয়ে পড়িয়ে দিলেন কায়েসের সাথে। কায়েসের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মার অফিসেরই এক কলিগ। যমুনা পার হয়ে সিরাজগঞ্জ। মা ভেবেছিলেন প্রমত্তা নদী পার হয় না কানকথা। মেয়েকে তাই নির্বিঘ্নেই পার করে দেন। কায়েস একটা সরকারি অফিসের ক্লার্ক। সবাই বলাবলি করে, বেতন যাই হোক উপরি আছে। এই উপরি থাকাটাই ছেলের মূল যোগ্যতা হিসাবে প্রতিভাত হয় প্রস্তাব প্রদান, গ্রহণ এবং প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত সবার কাছে। ফলে এটাই সর্বোত্তম পন্থা এ নিয়ে দ্বিমত থাকে না কারও।
আমার শ্বশুর কিংবা শাশুড়ি কারও আমার প্রতি কোনো গোচর-অগোচরে কোনো অভিযোগ নেই। বরং পড়শিরা সন্ধ্যার সিরিয়ালেরর মগ্নতা ফেলে কোনো দিন জন্মদিন কিংবা গায়ে হলুদের দাওয়াত দিতে এলে আমি চা সেমাইয়ের প্লেট সামনে দিয়ে ফিরে যেতে যেতে শুনি, তারা বলছেন, এমন বউ পুণ্যি করলে মিলে। আমার শাশুড়ি কুলুমচি হাতে নিয়ে তাতে পানের পিক ফেলে কথা বলার জন্য মুখ খালি করেন, তারপর ফোড়ন কাটেন, হ্যাঁ শাশুড়ি ভালো তো বউ ভালো না হয়ে যায় কই? তর্জনীতে চুন মেখে জিহ্বায় লাগাতে লাগাতে যোগ করেন, খারাপ হবে কার সাথে, সংসারে আছে কে আমি ছাড়া? তার আঙুলে শ্বেতী রোগের সাদা রংচুনের রঙের সাথে এক হয়ে যায় দিগন্তে মেশা আকাশ আর মাঠের মতো। আমার মেনে চলা, মানিয়ে চলার স্বীকৃতি সংসারে অলীক এক অস্বীকৃত রেখা হয়ে বিরাজ করে।
আমার স্বামীও ঠিক তাই, চাইবার আগেই হাতের কাছে চাহিদামতো সব পেয়ে যান যখন, নিঃশব্দ আচরণে কৃতজ্ঞতা না থাকুক, সন্তুষ্টি থাকে। কোথায় কোনকালে কে শুনেছে কোন স্বামী তার স্ত্রীর দায়িত্বে কৃতজ্ঞ থাকে! সন্তুষ্টি অর্জনের চেয়ে বড় প্রত্যাশাই আর কি থাকতে পারে স্ত্রীর? সে অর্জনে আমিও সন্তুষ্ট থাকি। অভিযোগহহীন দাম্পত্য। কজন নারীর ভাগ্যে জোটে?
আমার সন্তান এখনো নাবালক। সবকিছুতেই সে আমার ওপর নির্ভরশীল। দুই বছর বয়সে মায়ের ওপর কেবল নির্ভরশীলতাই থাকে। অভিযোগ গাঢ় হয় না বরং তা বায়নার মতো গুরুত্বহীন শব্দেই সীমায়িত থাকে।
অতএব আমার জীবনে তেমন কোনো অসুখ নেই। আমি সুখেই আছি। এই প্রত্যয় দেখে যারা একটু ভ্রু কুঁচকেছিলেন তাদের জন্য বলি, বিয়ের দুই বছরের মাথায় মুখ গোমড়া করে একদিন কায়েস ঘরে ফিরল। তার মুখে ছিল মধ্য নদীতে ঝড় সামাল দেওয়া নাবিকের মতো হতাশ অন্ধকার। আমি প্রথমটায় বুঝতে পারিনি। অন্য দশ দিনের মতো অফিস শেষে ঘরে এসেছিল সে। আমি রান্নাঘর থেকে চা সহযোগে ছোলা আর মুড়ি নিয়ে সামনে রেখেছিলাম নিয়মমাফিক। কোনো পূর্বপ্রস্তুতি বা ভূমিকা ছাড়াই, সম্ভবত রাগ কিংবা ক্রোধ চেপে রাখার অক্ষমতায়ই আমাকে জিজ্ঞেস করে, রফিক কে? আমি থমকে দাঁড়িয়েছিলাম, যে ভয়টা পেয়েছিলাম। সেটাই ঘটেছে। কানকথা নদী পার হয়ে তার কানে পৌঁছে গেছে।
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমাকে জানতে চায় বিয়ের পর আমার সাথে রফিকের যোগাযোগ হয়েছে কি না। কতটা জানে সে কতটা জানে না, সেটা আন্দাজ করতে না পেরে আমি গড়গড় করে সব বলে দিই। বলে দিই, বিয়ের পর যতবার মায়ের কাছে গেছি, ততবারই মা সেলাই শেখাতে চলে গেলে বাড়িতে এসেছে রফিক। বলে দেওয়ায় বোকামির সাথে বিশেষ কারণও আছে। আমি তাকে বিশ্বাস করি, ভরসাও। কারণ এছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা ছিল না আমার কাছে।
হয়তো নির্ভেজাল স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য কায়েস চতুরতার আশ্রয় নেয় কিন্তু আমি সেটাকে ডুবে যাওয়ার আগে খড়কুটোর মতোই আঁকড়ে ধরি। সে আমাকে কথা দেয়, সব বলে দিলে কিচ্ছু মনে করবে না। বরং মাফ করে দেবে।
না বললে! বললে কিংবা না বললে, দুই কারণেই কয়েকটি সম্ভাবনা আমার সামনে ঝুলে থাকে।
প্রথম সম্ভাবনা সে আমাকে ডিভোর্স দিতে পারে। আমি জানি আমাকে ডিভোর্স দিলে আমার আর দাঁড়াবার জায়গা নেই।
দ্বিতীয়ত, আমার মা আমাকে ক্ষমা করবেন না। ঠিক গলাটিপে মেরে ফেলবেন। বারবার কয়বার, কতটা অযাচিত যন্ত্রণার ভার বইবার ক্ষমতা থাকে একটা মানুষের?
তৃতীয়ত, আমি যাব কই, ছেলেটারই বা হবে কী? রফিক আমাকে বিয়ে করবে, এমন কোনো সম্ভাবনা এখন কেন কখনোই ছিল না।
মূলত কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আমি ভুলটা করি, সব সত্য বলে দিই কায়েসকে। আমি ঘুণাক্ষরেও তখন টের পাইনি আসলে কথা নদী পার হয়নি। পার হয়েছে আমার নগ্ন শরীরের জীবন্ত ভিডিও, যা কোনোভাবেই মিথ্যা কিংবা ফটোশপ ইত্যাদি বলে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
মা শুনেই ক্ষেপে ওঠেন। তোকে সুখে থাকতে ভূতে কিলায়? কেন তুই রফিকের সাথে যোগাযোগ রাখলি। আমার কাদামাটির মতো নরম, যেমন ইচ্ছে তেমন গড়া যায় মা প্রথমবার প্রস্তরখণ্ডের মতো দৃঢ়তা দেখান। বুঝি তার সংগ্রাম আর ধৈর্যের পাথরে পাথরে ঠোকর লেগে ক্রোধের আগুন জ্বলে। তিনি বলেন, তুই আর আমার ঘরে আসবি না। হয় বিষ খেয়ে মরবি নয় ভিক্ষা করে খাবি।
মাকে আশ্বস্ত করি। মা কায়েস সব মেনে নিয়েছে।
মাকে আসলে বলতে পারি না, মা রফিক আসলে এই ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমাকে বাধ্য করেছে। মাকে আশ্বস্ত করা কথাগুলো যে সর্বৈব মিথ্যা তা-ও মাকে বলা হয় না, বলা যায় না যে কায়েস এখন উঠতে বসতে আমাকে গালি দেয় বেশ্যা বলে। মাকে বলতে পারি না গত ছয় মাস কায়েস আমাকে স্পর্শ করেনি। নারীসুলভ আহ্লাদেপনা নিয়ে আমি যতই ওর পুরুষ কামনাকে জাগাতে চেয়েছি তীব্র বিদ্বেষে সে আমাকে ঠেলে দিয়েছে প্রত্যাখ্যানের চরম অবমাননায়। মাকে এসব বলা যায় না।
এটা কোনো অসুখ নয়। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। পরিপূর্ণ স্ত্রীর মর্যাদা আমার। আমার কোনো অ-সুখ নেই। অফিসে সবচেয়ে ইয়ং ছেলেটি, গত মাসে যার চাকরি হয়েছে এবং আগামী মাসে যার বিয়ে হবে, মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটা যে আমার তা না জেনেই আমার স্বামী রফিককে দেখিয়েছিল।
তারপর একটা চুলের ওপর দাঁড়িয়ে যায় আমার আর কায়েসের বিয়েটা, আমার সুখে থাকা না থাকা। বিয়ের দুই বছরের মাথায়। এক নিস্তব্ধ মাঘের রাতে ঠান্ডা মাথায় রফিক আমাকে বলে আমি এই বাচ্চার ডিএনএ টেস্ট করাব।
আমার কোনো অসুখ নেই। আমি সুখেই আছি। শুধু আমি জানি বাচ্চাটা কার, রফিক জানে না। ডাক্তারের সাথে আলাপ হয়। একটা চুল লাগবে। চুলটা নেওয়ার আগে আমি ভাবতে থাকি, এ সমস্যাটির সমাধান নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে থাকি। ভাবতে ভাবতে একটা সিদ্ধান্ততেই স্থিত হই আমি। আমি বেঁচে থাকলে বাচ্চা হয়তো আবার হবে। কিন্তু একটা বাচ্চার জন্য আমি আমার জীবনকে অনিশ্চিত হুমকির মুখে ফেলতে পারি না।
তবু শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমি একদিন রফিকের মুখোমুখি হতে চাই। রফিক কি বাচ্চাটির দায়িত্ব নেবে! নইলে আমার কোনো উপায় নেই।