কোভিড-১৯/পাশাপাশি । ফিলিস সুজা

ফিলিস সুজা প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২১, ০১:৫৩ পিএম কোভিড-১৯/পাশাপাশি । ফিলিস সুজা

অনুবাদ : ফজল হাসান

ভাইরাস 
কোভিড-১৯ নামে একটা ভাইরাস ছিল। সেই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জন্য দুনিয়া বদলে গিয়েছিল। নেকড়ের মতো মজুতদারেরা তাদের গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসেছে। তারা ত্রস্তব্যস্ত হয়ে দোকানের মাঝের সরু পথ ধরে এগিয়ে গিয়েছে। তারা দুপাশের শেলফে যা কিছু পাচ্ছিল, তাই হাত বাড়িয়ে ছিনিয়ে নিয়েছে। সেসব জিনিস প্রয়োজনীয় নাকি অপ্রয়োজনীয়, তা নিয়ে তাদের কোনো ভ্রক্ষেপ ছিল না।
বাড়িতে বসে কেনাকাটা স্থগিত করা হয়েছে। তাই একই দিন কিংবা পরের দিন বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
কিছু লোকের জামাকাপড় কাঁধের পাশে ঝুলে পড়েছে। তাদের চোখেমুখে বিভ্রান্তি এবং যন্ত্রণা–কোন আবরণের আড়ালে যেন তাদের মুখমণ্ডল অবদমিত।

সেইফওয়ে 
সকাল ছয়টা তিরিশ মিনিট। ক্রেতাদের হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক। তারা ভেতরে ঢোকার জন্য দোকানের বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঠান্ডায় কাঁপছিল। 
পাশ কেটে একজন গৃহহীন লোক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে উল্টো দিকে যাচ্ছিল। একসময় সে থমকে দাঁড়ায়। রাস্তা থেকে একটা সিগারেটের পোড়া অংশ কুড়িয়ে নেয়। মহামারি নিয়ে তার কোনো ভাবনা নেই। সে কাছে গিয়ে একটা উঁচু কংক্রিটের ওপর বসে এবং দুর্গন্ধময় পোড়া সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করে। তারপর সে আপনমনে হাসতে থাকে।
সেইন্ট পিটার যেমন স্বর্গের প্রবেশদ্বার পাহারা দেন, তেমনই নিরাপত্তা কর্মকর্তারা দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। যখন সাত ঘণ্টি বাজে, তখন সেইন্ট পিটার প্রবীণদের দালানের ভেতরে ধীরে ধীরে প্রবেশ করার অনুমতি দেন।

একটি নতুন দিন
গোলাপের সুবাস বদলে গিয়েছিল জীবাণুনাশকের গন্ধে। সারা পৃথিবীতে রোগজীবাণু সংক্রমণ এবং ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। 
আমি ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম। আমার রান্নাঘরের গরম পানির কল বন্ধ করেছি। তারপর পরিষ্কার আরেকটি তোয়ালে নিয়ে আমি কুঁকড়ে যাওয়া হাত মুছি। 
দুই হাতের তালুতে মুখ ঢেকে আমি আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ি। যদি পানির ব্যবস্থা দূষিত হয়, তাহলে?
দেবতারা অশ্রু ঢেলে ভূমিতে বন্যা বইয়ে দিয়ে পৃথিবীকে পরিশুদ্ধ করবেন।
তারপর সূর্য উদয় হবে এবং চতুর্দিকে উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়বে। সূর্যের আলোকরশ্মি এসে সারা বিশ্বকে আলোকিত করে তুলবে। তখন আর পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে না।

[অনুবাদকের টীকা: ‘সেইফওয়ে’ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অবস্থিত চেইন স্টোরের অর্থাৎ খুচরা মুদি দোকানের নাম।]

লেখক পরিচিতি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নারী লেখক ফিলিস সুজা ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বসবাস করেন। দীর্ঘ আটাশ বছর রিয়েল এস্টেট ব্যবসা থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি শখের বশে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন। বর্তমানে অবসর জীবনে বেশির ভাগ সময় তিনি ব্যয় করেন ছোটগল্প লেখায়। ইতিমধ্যে তাঁর বেশ কয়েকটি ছোটগল্প বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

গল্পসূত্র : 
‘কোভিড-১৯/পাশাপাশি’ গল্পটি ফিলিস সুজার ইংরেজিতে ‘Covid-19/Juxtapose’ গল্পের অনুবাদ। গল্পটি ৫ মে ২০২০ সালে ‘স্পিলওয়ার্ডস.কম’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।