জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে শীর্ষ পদ পেতে জনসেবামূলক সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় জনসেবামূলক সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন তারা। এদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত। অনেকের ধারণা, নিজেদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ঢাকতে এবং সভাপতি-সম্পাদকের সুনজরে আসতেই এসব জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড ছাড়াও পদপ্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের অনেক সদস্যের কাছেও তদবির করছেন বলে জানা যায়।
নেতা নির্বাচনে কেমন নেতৃত্ব আসতে পারে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘কমিটিতে নেতিবাচক কোনো নেতাকর্মীর স্থান হবে না। যারা পদ পেতে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করছেন, তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের অতীত-বর্তমান সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েই কমিটি দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির পরই জগন্নাথের কমিটি নিয়ে কাজ শুরু করবেন বলেও জানান তিনি।
২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর তরিকুল ইসলামকে সভাপতি ও শেখ জয়নাল আবেদীন রাসেলকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের ৩৯ সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেয় (সোহাগ-জাকির) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু তরিকুল-রাসেলের কমিটির মেয়াদ এক বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হন তারা। একসময় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বারা বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয় নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাসে তরিকুল-রাসেল কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে কমিটির পদধারী ও পদপ্রত্যাশী অধিকাংশ নেতাকর্মী ।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেলের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে জবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি স্থগিত থাকা অবস্থায় ১৩ ফেব্রুয়ারি সভাপতি তরিকুল এবং সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদীন রাসেল তাদের অনুসারীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দিয়ে অবকাশ ভবনের ছাত্রসংসদ কক্ষে প্রবেশ করে। এ সময় সভাপতি-সম্পাদককে ছাত্রসংসদ কক্ষে প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। এরই সূত্র ধরে ১৯ ফেব্রুয়ারি সভাপতি-সম্পাদকের নেতাকর্মীদের সাথে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ঘটলে রাতে কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
কমিটি বিলুপ্তির পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলে জেলাভিত্তিক ছাত্রকল্যাণকে ব্যবহার করে নিজেদের দল ভারী করতে শুরু করে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা । ক্যাম্পাসে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিতে এবং নিজেদের কর্মীসংখ্যা বাড়াতে জেলাভিত্তিক ছাত্রকল্যাণের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে নিয়মিত মহড়া দিচ্ছে। অনেকেই আবার কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদকের আস্থাভাজন পরিচয় দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।
শীর্ষপদ নিজেদের ভাগে নিয়ে আসতে অনেকেই জনসেবামূলক কাজ যেমন, বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা, পথশিশুদের পাশে দাঁড়ানো, বিনামূল্যে বই বিতরণ করছে। কেউ কেউ আবার নেতাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে কেন্দ্রীয় অফিসে যাতায়াত করছে। অনেকে শীর্ষপদ পেতে সাবেক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং বিভিন্ন মন্ত্রীর কাছে তদবিরের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত নিজেদের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রচার-প্রচারণা করছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরাও রয়েছেন এদের মধ্যে।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে পদ না পাওয়ায় এক ছাত্রলীগ কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগ করে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সফল করতে কাজ করেছেন। কিন্তু পদ-পদবি ছাড়াই অনেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাজীবন শেষ করতে হয়েছে। নতুন কমিটি এলে তাদের যথার্থ মূল্যায়ন করার দাবিও জানান।
পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সব সময়ই ভালো কাজের সাথে আছে। ভালো কাজ করার লক্ষ্যে এবং ছাত্রলীগকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইতিবাচক কর্মকাণ্ডকে গুরুত্ব দিয়েই শীর্ষ পদে নেতা নির্বাচন করবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
এনআই