টক অব দ্য কান্ট্রি : রিফাত হত্যা

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০১৯, ১০:০৩ পিএম টক অব দ্য কান্ট্রি : রিফাত হত্যা

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দেশজুড়ে আলোচনায় ছিল বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে তরুণ রিফাতকে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা।

বুধবার (২৬ জুন) ঘটে যাওয়া এ ঘটনা সাধারণ মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুলকালাম হয়ে উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার নাম উল্লেখ করা ১২জন আসামির মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ঘটনা প্রবাহ

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার ঘটনার সময় বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে কয়েকজন যুবক রিফাতকে টেনে-হিঁচড়ে কলেজ গেট থেকে বের করে। অভিযুক্ত নয়নসহ আরও কয়েকজন কলেজের সামনে ক্যালিক্স একাডেমির পূর্ব পাশের গলিতে অবস্থান করছিল। যে যুবকরা রিফাতকে টেনে-হিঁচড়ে বের করছিল, সেখান থেকে একজন ক্যালিক্স একাডেমির গলিতে দৌড়ে যায়। তারপর ওইখান থেকে নয়নসহ দুই-তিনজন রাম দা দিয়ে রিফাতকে কোপাতে থাকে।

রিফাতকে কোপানোর সময় ওই যুবকরা পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিক মিন্নি যখন বার বার হামলাকরীদের সরিয়ে দিচ্ছিলেন তখন কিছু প্রত্যক্ষদর্শী তাদের সরতে বলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। রিফাতকে কোপানোর পর বীরদর্পে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনা চার থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘটে যায়।

গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওইদিন বিকালে তিনি মারা যান।

অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রিফাতের মৃত্যু 

রিফাত শরীফের (২৫) শরীরে অসংখ্য কোপের আঘাত ছিল বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী কমিটির প্রধান ডা. জামিল হোসেন। এর মধ্যে মাথা ও ঘাড়ে তিনটি গুরুতর ক্ষত পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুর ১২টার দিকে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

ডা. জামিল হোসেন বলেন, রিফাতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের অসংখ্য কোপের চিহ্ন রয়েছে। এরমধ্যে তার মাথা ও ঘাড়ে ৩টি গুরুতর ক্ষত ছিল। মূলত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে রিফাতের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জামিল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন– ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. সোহেলী আক্তার তন্নী ও ডা. মাইদুল ইসলাম।

কেন এই নির্মম হত্যা

অভিযোগ উঠেছে- স্ত্রীর পরকীয়া এবং মাদক সংশ্লিষ্টতার কারণেই রিফাত খুন হয়েছে। এ অভিযোগ- নিহতের স্বজন ও তার বন্ধু মহলের। এ নিয়ে নিহতের শ্বশুর মোজাম্মেল হোসেন কিশোরকেও লাঞ্ছিত করেন রিফাতের বন্ধুরা।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের মর্গ চত্বরে রিফাতের শ্বশুরের সাথে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা হত্যাকারীদের পাশাপাশি মিন্নির বিচারও দাবি করেন। এ দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বরগুনা সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নিহতের স্বজনরা জানান, পুলিশ লাইন এলাকার মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের মেয়ে বরগুনা সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। দুই মাস আগে বরগুনা সরকারি কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের মাঠাইল লবনগোলা এলাকার দুলাল শরীফের ছেলে রিফাত শরীফের সাথে মিন্নির বিয়ে হয়।

বিয়ের পরেও এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী ও একাধিক মামলার আসামি নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নির পরকীয়া প্রেম চলছিল। যদিও নয়ন বন্ড মিন্নিকে তার বিয়ে করা স্ত্রী দাবি করে আসছিল। এ নিয়েই নয়নের সাথে বিরোধ হয় রিফাতের।

রিফাতের বন্ধু সানজিদ অভিযোগ করে বলেন, রিফাতের মৃত্যুর জন্য তার স্ত্রী মিন্নিই দায়ী। কেন-না মিন্নি নিজেই মাদকাসক্ত ছিল। নয়নের বাড়িতে মাদকের যে আসর বসত সেই আসরের সদস্য ছিল মিন্নি। যা বরগুনাবাসী সবাই জানে। তাছাড়া রিফাতের আগে নয়নের সাথে মিন্নির গোপনে বিয়েও হয়।

সানজিদ বলেন, নিহত রিফাত ও হত্যাকারী নয়ন দুইজনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। ২০১১ সালে তারা একই সাথে বরগুনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে। রিফাতের মিন্নির বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়।

বিয়ের পর মিন্নির সাথে নয়নকে দেখা-সাক্ষাৎ করতে দিচ্ছিল না রিফাত। তাই নয়ন মিন্নিকে নিয়ে তোলা বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে। এ নিয়ে নয়ন ও রিফাতের মধ্যকার বিরোধ আরও তুঙ্গে ওঠে। ঘটনার দিন অর্থাৎ বুধবার সকালে রিফাত তার স্ত্রী মিন্নিকে কলেজে দিয়ে পার্শ্ববর্তী বাজারে যায়। সেখান থেকে পুনরায় স্ত্রীকে নিয়ে যেতে কলেজে আসে রিফাত।

একই সময় নয়ন মিন্নিকে তার সাথে যাওয়ার জন্য বলে। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় রিফাত। এ কারণেই নয়ন তার সহযোগী রিফাত ফরাজী, চন্দনসহ ১০/১২ জন মিলে মিন্নির স্বামী রিফাতের ওপর সশস্ত্র হামলা করে। তারমধ্যেই নয়ন বরগুনা সরকারি কলেজ সংলগ্ন বাসা থেকে ধারালো অস্ত্র (রাম দা) এনে রিফাতের ওপর হামলা করে। তাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করে।

মিন্নি নিজেই নয়নকে গোপনে বিয়ে এবং পরে তালাক দিয়ে রিফাতকে বিয়ে করে বলেও রব উঠেছে।

মিন্নিকে বিয়ে করার কারণেই নয়নের সাথে তার শত্রুতার সৃষ্টি হয়। রিফাতকে সরিয়ে দিয়ে মিন্নিকে পাওয়ার জন্যই নয়ন তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ স্বজন ও বন্ধুদের।

অভিযুক্ত নয়ন বন্ডের মা সাহেদা বেগম সাংবাদিকদের জানান, সাত মাস আগে কাজী অফিসে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে নয়নের সাথে মিন্নির বিয়ে হয়। পরে মিন্নির সাথে রিফাতের প্রেমের সম্পর্ক হয়। যা জানতে পেরে যায় নয়ন। এ নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায় তা বিবাহ বিচ্ছেদে রূপ নেয়। প্রায় দু’মাস আগে মিন্নি নয়নকে তালাক দেয় এবং কিছুদিন পর রিফাতকে বিয়ে করে।

তবে নিহত রিফাতের শ্বশুর ও মিন্নির বাবা মোজ্জামেল হোসেন কিশোর মেয়ের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নয়নের সাথেও তার কোনও সম্পর্ক ছিল না। বিয়ের পর থেকেই নয়ন মিন্নিকে নিজের স্ত্রী দাবি করে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। যা রিফাত ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও জানে। এতে বাধা দেয়ার কারণেই রিফাতের ওপর হামলা হয় বলে দাবি তার।

গ্রেফতার তিন

রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে বরগুনা সদর থানায় এই মামলা দায়ের করেন তিনি। প্রধান আসামি করা হয়েছে সাব্বির হোসেন নয়নকে। এলাকায় সে ‘নয়ন বন্ড’ নামেও পরিচিত। মামলার ৪ নম্বর আসামি চন্দন ও ৯ হাসানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আগের রাতে চন্দন নামে আরও একজনে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে এখন প্রতিবেদন লেখা মূল হোতাকে গ্রেফতারে কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

দাগী অপরাধী নয়ন বন্ড

২০১২ সালে ১২ লাখ টাকার মাদকের চালান নিয়ে আটক হয়েছিল নয়ন বন্ড। বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন বলেন, ঘটনার মূল হোতা নয়ন বন্ড অনেক আগে থেকেই আলোচিত। ইতোপূর্বে সে বেশ কয়েকবার মাদকসহ আটক হয়। তার বিরুদ্ধে ১০/১২টি মামলা রয়েছে।

নয়নের মাদকের সঙ্গী রিফাতের স্ত্রী মিন্নি

রিফাতের বন্ধু সানজিদ অভিযোগ করে বলেন, রিফাতের মৃত্যুর জন্য তার স্ত্রী মিন্নিই দায়ী। কেননা, মিন্নি নিজেই মাদকাসক্ত। নয়নের বাড়িতে মাদকের যে আসর বসত সেই আসরের সদস্য মিন্নি।

জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, রিফাত হত্যায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউরির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রিফাত হত্যায় অপরাধী যেই হোক, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। পুলিশ বসে নেই। পুলিশ এখন অনেক ইনফরমেটিভ। আমাদের পুলিশ সদস্য এখন আগের চেয়ে অনেক দক্ষ। ১০ বছর আগের পুলিশের সঙ্গে এখনকার পুলিশের কার্যক্রমে অনেক তফাৎ। যত বড় ঘটনাই হোক, পুলিশ এখন খুব সহজে এটির রহস্য উম্মোচন করতে পারে।

হত্যাকারীরা যেন দেশ ছাড়তে না পারে

রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সে জন্য সতর্ক থাকতে আইজিপিকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটা এ হত্যাকাণ্ডকে সমাজের ব্যর্থতার চিত্র বলে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ঘটনার সর্বশেষ তথ্য জানাতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছে হা কোর্ট। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্টের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ হাইকোর্টের নজরে আনলে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্টে বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

পাশাপাশি হত্যার ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তার সবশেষ অবস্থা জানাতে বলাও হয়েছে। বরগুনার পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককের সঙ্গে এ বিষয়ে সমন্বয় করতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে যুবককে হত্যার ঘটনার বিষয়ে আদালত বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করল, তার স্ত্রী ছাড়া কোনো লোক এগিয়ে এলো না, এটা সমগ্র জনগণের ব্যর্থতা। সমাজটা আসলে যাচ্ছে কোথায়।

আদালত আরও বলেন, রাস্তায় প্রকাশ্যে মানুষটাকে হত্যা করা হল কিন্তু তার স্ত্রী ছাড়া কেউ এগিয়ে আসল না। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন ছিল না। সবাই এই ঘটনার ভিডিও করল কিন্তু কেউ এগিয়ে আসল না। সবাই দাঁড়িয়ে দেখল কিন্তু প্রতিবাদ করল না। এটা জনগণের ব্যর্থতা। কয়েকজন মানুষ এগিয়ে আসলে দুর্বৃত্তরা হয়তো সাহস পেত না। হয়ত ভয়েই মানুষ এগিয়ে আসেনি।

রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক মন্তব্য করে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, দেশের সবাই এই ঘটনায় মর্মাহত।

এ সময়, আদালত জানতে চান এ ঘটনায় মামলা হয়েছে কি? উপস্থিত আইনজীবী জানান, রিফাতের বাবা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এরপর আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশারকে সব শেষ তথ্য আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেন।

জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

রিফাত হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কথা জানান। সেতুমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের যে কোনো মূল্যেই গ্রেফতার এবং বিচার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রকাশ্যে কেন এ রকম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো? তাহলে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বরগুনার ঘটনা তো রাজনৈতিক নয়। এটা রাজনীতির কারণে ঘটেনি।

তিনি আরও বলেন, দেশে বিরোধী দল আছে, তারা এমন কিছু ঘটাতে পারেনি যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। তবে এরকম ঘটনা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও ঘটে। সামাজিক অস্থিরতা অনেক দেশেই আছে।

অস্ত্র ধরছি, চিল্লাইছি একটা লোকও এগিয়ে আসেনি

বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। নিহতের স্ত্রীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে তাকে উত্ত্যক্ত করতো নয়ন। স্বামী প্রতিবাদ করায় হত্যা করা হয় তাকে।

রিফাতের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্বজনেরা। বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে বরগুনা সদর উপজেলার বড় লবণখোলা গ্রামের ফরাজিবাড়ির পরিবেশ। ছেলেকে দিনের আলোয় কুপিয়ে মেরে ফেলার বিচারের আকুতি মায়ের কণ্ঠে।

নিহতের পরিবার জানায়, স্ত্রী মিন্নীকে নিয়ে বুধবার সকালে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিলেন রিফাত। পথে নয়ন, রিশান, রিফাত ফরাজীসহ ১০ থেকে ১২ জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

স্বামীকে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন স্ত্রী। এই নৃশংস হামলার ভিডিওটি বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

নিহতের বন্ধুরা জানান, এলোপাতাড়ি কোপানোর পর রিফাতকে ফেলে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে প্রথমে বরগুনা হাসপাতাল ও পরে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেলে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাতের মৃত্যু হয়।

এলাকাবাসীর একজন বলেন, ‘কলেজে রিফাত তার ওয়াইফকে নামিয়ে দিয়েছে। এরপর কিছু ছেলে এসে ওকে এলোপাতাড়িভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। হাসপাতালে নেয়ার ঘণ্টাখানেক পর অপারেশন থিয়েটারে মারা গেছে।’

রিফাতের পরিবারের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে বখাটে নয়ন তার স্ত্রী মিন্নীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। প্রতিবাদ করায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নী বলেন, নয়ন আসে, রিশাত ফরাজী আসে। এরা এসে ওকে ধরে কোপানো শুরু করে। আমি অস্ত্র ধরছি, চিল্লাইছি একটা লোকও এগিয়ে আসেনি। বিয়ের পরও নয়ন আমাকে ডিস্ট্রার্ব করতো আমার স্বামীও তা জানতো।’

নিহত রিফাতের শ্বশুর বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।

আরএম/এসএমএম

আরও সংবাদ