আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ১৪ স্থানে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসানোর কার্যক্রম চলছে। এসব হাটের ইজারা নিয়ে দোটানায় পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইজারাদাররা দরপত্র জমা দিলেও কোনো দর উল্লেখ করছেন না তারা। দ্বিতীয় দফা দরপত্র খুলে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ ধরনের দরপত্র দেখে কর্তৃপক্ষ ইজারা দিলে টেন্ডার কমিটিকে বিপাকেও পড়তে হতে পারে নিঃসন্দেহে। তবে জানা গেছে, এসব পশুর হাট সিন্ডিকেটের কব্জায়, যা প্রতিটি সরকারের সময় ক্ষমতাসীনরা এভাবে প্রভাব বিস্তার করে হাটের ইজারা নিয়ে থাকে।
ডিএসসিসি এবার মোট ১৪টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। গত ১০ জুন এসব হাটের জন্য ইজারাদার ঠিক করতে প্রথম দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৬ জুন দরপত্র খোলার পর দেখা যায় ১১টি হাটে সরকারি দরের চেয়ে বেশি দর পড়েছে। এ কারণে হাট মূল্যায়ন কমিটি সর্বোচ্চ দরদাতাদের হাটগুলো ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তিনটি হাটে সরকারি মূল্যের চেয়ে কম দর ওঠায় আবারো দরপত্র আহ্বান করা হয়। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ছিল দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। পরে ডিএসসিসির কর্মকর্তারা দরপত্র বাক্স খুললে খুবই হতাশ হয় হাট ইজারা মূল্যায়ন কমিটি।
দেখা যায়, আফতাবনগরের হাটের জন্য মাত্র একজন দরপত্র জমা দিয়েছেন। জসিম উদ্দিন সবুজ নামে ওই দরদাতা অবশ্য এ হাটের সরকারি দর ৬৫ লাখ ৩০ হাজার থেকে কিছু বেশি ৬৭ লাখ টাকা উল্লেখ করেছেন। তবে এ হাটে প্রথম দফায় দরপত্র জমা দেয়া মোকাসেদ হোসেন কিসলু এবার কোনো দরপত্রই জমা দেননি। প্রথম দফা দরপত্রে তিনি মাত্র ২০ লাখ টাকা দর দিয়েছিলেন।
একইভাবে আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা নিয়ে গঠিত হাটে প্রথম দফায় দুটি দরপত্র জমা পড়েছিল। এবারো দুটি দরপত্র জমা পড়েছে। এ হাটের সরকারি মূল্য সাড়ে ১৮ লাখ টাকা। প্রথম দফায় এ হাটে মো. আহসান উল্লাহ মাত্র ৪ লাখ টাকা দর দেন। এবার তিনি মাত্র ৫ লাখ টাকা দর দিয়েছেন। হেলাল উদ্দিন বেপারি নামে আরেকজন দরদাতা প্রথম দফা দরপত্রে ৩ লাখ টাকা দর দেন। দ্বিতীয় দফায় তিনি দরপত্র জমা দিয়ে পে-অর্ডার জমা দিলেও হাটের জন্য কোনো দর উল্লেখ করেননি।
শ্যামপুর বালুর মাঠসহ আশপাশের এলাকার খালি জায়গার হাটের বিপরীতে দুটি দরপত্র জমা পড়লেও কোনো দর উল্লেখ করা হয়নি। অথচ পে-অর্ডার জমা দেয়া হয়েছে। এ হাটের সরকারি মূল্য ছিল ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ২৪৮ টাকা। এর বিপরীতে প্রথম দফা দরপত্রে মোট ৪ জন দরপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে সিদ্দিকুর রহমান মাত্র ৪৫ লাখ টাকা, তাজুল ইসলাম ৩৫ লাখ টাকা, কাজী মো. শহীদ উল্লাহ ৩০ লাখ ও রাসেল ইকবাল ২৫ লাখ টাকা দর দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফায় এ হাটে হাজী আমিনুল ইসলাম এবং এস এম আমিনুর রহমান দরপত্র জমা দেন। প্রথম দফায় যারা দরপত্রে অংশ নিয়েছিলেন তারা কেউই দ্বিতীয় দফায় দরপত্রে অংশ নেননি। যা হাট নিয়ে ব্যবসায়ীদের লুকোচুরি খেলা বলে মনে করছে সিটি করপোরেশন।
ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শ্যামপুর ও আমুলিয়া হাটের বিপরীতে কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় এ দুটি হাটের জন্য আবারো দরপত্র আহ্বান করতে হতে পারে। তবে হাট মূল্যায়ন কমিটির সভার পরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। এদিকে আমুলিয়া মডেল টাউন-সংলগ্ন হাটের ইজারায় অংশ নেয়া মো. আহসান উল্লাহ জানিয়েছেন, গত বছর এ হাটটি ইজারা নিয়ে তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য এ বছর দরপত্রে কম দর দেয়া হয়েছে।
ডিএসসিসির ১৪টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট :
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার অস্থায়ী পশুর হাটের স্থানগুলো হচ্ছে- লালবাগ রহমতগঞ্জ খেলার মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন খালি জায়গা, শনির আখড়া ও দনিয়া মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউয়ারটেক মাঠসংলগ্ন আশপাশ এলাকার খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা এবং দাওকান্দি ইন্দুলিয়া ভাগাপুরনগর (আফতাবনগর ইস্টার্ন হাউজিং মেরাদিয়া মৌজার সেকশন-১ ও ২) লোহারপুলের পূর্ব অংশ এবং খোলা মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠসহ আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘের মাঠসংলগ্ন ও আশপাশের খালি জায়গা, ঝিগাতলা-হাজারীবাগ মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সামসাবাদ মাঠসংলগ্ন আশপাশ এলাকার খালি জায়গা।
উল্লেখ্য, ঢাকা উত্তর সিটির ১২ কোরবানির পশুর হাটের ইজারা চূড়ান্ত পর্যায়ে। আগামী সপ্তাহে এই ১২ পশুর হাটে বাঁশের খুটি স্থাপনের কাজ শুরু করতে পারে বলে জানিয়েছেন ইজারাদাররা। হাটের ব্যবস্থাপনা বিষয় নিয়ে দুই সিটির সম্পত্তি বিভাগ নেতৃত্ব দিয়ে থাকে।
টিএইচ/এফসি