বেড়েই চলছে ভোজ্যতেলের দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে ঊর্ধ্বগতি। গেল সপ্তাহে শুধু ব্র্যান্ডের তেলের দাম চড়া থাকলেও এবার খোলা তেলেও এর প্রভাব পড়েছে। লিটারে বেড়েছে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম। সেই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় যোগ হলো চিনিও।
শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, তেল ও চিনির দামে চিন্তিত ক্রেতারা। সেই সঙ্গে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে বিক্রেতারাও বেশ উদ্বিগ্ন।
অধিকাংশ বিক্রেতা ও ক্রেতা দাবি করছেন, গত ১০ বছরের ভোজ্যতেলে দাম এতটা বাড়তে দেখা যায়নি।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫ লিটারের ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৫৬০ থেকে ৫৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৫০ টাকা। রূপচাঁদা ৬৬০, বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৬২০, তীর ৫৮৫ টাকা থেকে ৫৭৫ টাকা।
কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের আনোয়ার এন্টাপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, “তেলের দাম কমার কোনো সম্ভাবনাই নেই। করোনার কারণে এখন তেল আসছে না বিদেশ থেকে।”
গত সপ্তাহের তুলনায় খোলা তেলের দামও বেড়েছে প্রতি ৫ লিটারে ৫-১০ টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতি লিটার খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। তবে সরিষার তেলের দাম লিটারে আগের মতোই রয়েছে।
বেলাল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, “তেলের এতো দাম আগে কখনো দেখিনি। প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছেই। কমার কোনো সম্ভাবনাই দেখছি না।”
এদিকে চিনির দামও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। চিনি এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। কোথাও কোথাও দাম আরো বেশি। আগে চিনির দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৪ টাকা করে প্রতি কেজি।
এদিকে গেল সপ্তাহে বড় আকারের প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকায়। যা এখন হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। বাধাকপির দাম হয়েছে ৬ টাকা থেকে ১২ টাকা, কুমড়ো হয়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা, লাউ প্রতি পিছ ২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ব্রকলির দাম ১৫ থেকে ১৮ টাকা, পেপে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে।
আরো কিছুটা ঝাল কমেছে কাঁচা মরিচের। মান ও প্রকারভেদে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া লাউশাক প্রতি আঁটি ১৫ থেকে ১৮ টাকা, লালশাক ৫ টাকা, পালংশাক ৫ টাকা, ধনিয়া ৫ টাকা, পুঁই ২০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজারে আলুর দাম কমেছে। যেখানে গত সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ টাকা ছিল, যা এখন পাওয়া যাচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। এছাড়া দেশি পেঁয়াজ পাচ্ছেন ৩০ টাকা, মিসরের পেঁয়াজ ২৫ টাকা, দেশি আদা ৭০ টাকা, চীনা আদা ১৬০ টাকা এবং ভারতীয় রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে।
এছাড়াও চালের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। আটাশ চাল কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। বস্তা ২৪০০ থেকে ২৫০০, কাটারি কেজি ৬৪ থেকে ২৫ টাকা, বস্তাপ্রতি ৩১০০ টাকা, পিটা আটি কেজি ৪৭ টাকা, বস্তা ২৩০০, বিরহী চাল কেজি ৭০, বস্তা ২৯০০টাকা, নাজির চাল প্রতিকেজি ৬৮ টাকা করে, বস্তা (২৫ কেজি) ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা, স্বর্ণা ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা।
বেলায়েত হোসেন নামে এক ক্রেতা অভিযোগ করেন, "সিন্ডিকেটের কারণে চালের দাম কমছে না। সরকার নিয়মিত তদারকি করলে এ দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। চাল এক মাস আগেও কিনেছি (৫০ কেজির বস্তা) ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়, সেই চাল আজ কিনলাম ২ হাজার ৯৫০ টাকায়। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য এটা খুবই কষ্টসাধ্য। সরকারের বিষয়টি দ্রুত দেখা দরকার।”
শাজাহান নামের এক পাইকারি চাল বিক্রেতা বলেন, "মিলাররা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। সেখান থেকে দাম না কমালে আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার বাইরে থেকে চাল আমদানি করলেই দাম কমে যাবে।”
এদিকে হাঁসের ডিমের দাম একটু বেড়েছে। এক হালি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মুরগির ডিম আগের মতোই ২৮ থেকে ৩০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও মাছের মধ্যে ইলিশ ৭০০ থেকে ৯০০, মৃগাল ২০০, বোয়াল ৬০০, তেলাপিয়া ১৫০, চিংড়ি- ৫০০ থেকে ১০০০, রুই ৪০০, কই ৪০০টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
লাল মুরগি ১৩৫, সোনালী ২৩০ থেকে ৪০, লাল মুরগি ১৭০, লেয়ার ১৬০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। হাঁসের পিছ ৩০০ থেকে ৫৫০ ও ৬ শ টাকা এবং কবুতর ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাংশের মধ্যে গরু ৫৮০, খাশি ৮৫০, ছাগল ৭০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।