করোনাভাইরাসের সংক্রমণে এমনিতেই বিপর্যস্ত জনজীবন। তার ওপর আসছে পবিত্র রমজান মাস। এরই মধ্যে আরেক দফা বাড়ল মুরগি ও ভোজ্যতেলের দাম। এর জন্য সরকারের জারি করা এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধকেই দুষছেন বিক্রেতারা। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্য দুটির দাম বাড়াতে বাজারে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের ক্রেতাদের।
শুক্রবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই সাপ্তাহিক বাজার করতে এসেছেন অসংখ্য ক্রেতা। ক্রেতা-বিক্রেতারা পদচারণে মুখর গোটা বাজার। একে অন্যের থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরে থাক, কোথাও একটু শান্তিতে পা ফেলার জায়গা নেই। যথারীতি মাস্ক পরায় অনীহা অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার। এর ভেতরেই চলছে পণ্য কেনাবেচা।
গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম ১০ টাকা কমলেও এই সপ্তাহে এসে তা আবার বেড়ে গেছে। মুরগি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করা হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগেও এই একই দামে বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার মুরগি। শুধু মাঝে এক সপ্তাহে ১০ টাকা দাম কমে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
গত সপ্তাহে ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া লেয়ার এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা। পাকিস্তানি কক বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯০ টাকা। তবে দাম কমেছে সোনালি মুরগির। গত সপ্তাহে ৩৫০ টাকা বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগি এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা। এছাড়া হাঁস প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা এবং কবুতর ১৪০ টাকা।
মুরগির দাম বাড়ার জন্য সরকারের কঠোর বিধিনিষেধকেই দুষছেন বিক্রেতারা। আলী আকবর নামের এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, “লকডাউনের কারণে বাজারে মুরগির সরবরাহ কমে গেছে। ক্রেতার সংখ্যাও অনেক কম। তাই দাম আবার বেড়েছে।”
জিয়াউল হক নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, “লকডাউন শুরু হওয়ার আগের দিন মানুষ সব মুরগি কিনে নিয়ে গেছে। এতে বাজারে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। যার কারণে দাম এক সপ্তাহ কমে আবার বেড়েছে। সামনে রমজান মাসে আরও বাড়তে পারে।”
সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা শাহনাজ নামের এক গৃহিণী বলেন, “দাম বাড়লেও মুরগি না কিনে উপায় নেই। তবে পণ্যের দাম বাড়ালে আমরা যারা মধ্যবিত্ত আছি, তাদের খুব কষ্ট হয়ে যায়। বাজার করতে এলেই হিমশিম খেতে হয়।”
শুধু মুরগি নয় দাম বেড়েছে গরুর মাংসেরও। এক মাস আগেও যে গরুর মাংস বিক্রি হতো ৫৫০ টাকা কেজি, সেটিই এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা। এর জন্যও সরবরাহ কম এবং হাটে গরুর দাম বাড়াকে দায়ী করছেন বিক্রেতারা। তবে আগের মতো ৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে খাসির মাংস।
অন্যদিকে আরেক দফা দাম বাড়ল ভোজ্যতেলের। বর্তমানে পুষ্টি ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৬৩০ টাকা, রূপচাঁদা ৬৪০ টাকা, বসুন্ধরা ৬৪০ টাকা, তীর ৬৪০ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতিটি ব্র্যান্ডের তেলের দাম ১০ টাকা করে কম ছিল। তবে খোলা সয়াবিন তেল আগের মতোই ১২০ টাকা লিটার এবং পাম ১০৫ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে।
তেলের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতারা জানান, কোম্পানিগুলো তেলের দাম বাড়ানোয় তারাও বেশি দামে বিক্রি করছেন। কেন প্রতিনিয়ত তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে , তা তারা জানেন না।
রুবাইয়াত খানম নামের এক ক্রেতা বলেন, “রোজার আগে তেলের দাম আবারও বাড়ছে। সরকার কিছুই নিয়ন্ত্রণে রাখে না। এজন্যই টিসিবির ট্রাকে তেল নিতে এত ভিড় হচ্ছে। সেখানে ১০০ টাকা লিটারে সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন ক্রেতারা। কিন্তু সেখানে এতই ভিড় যে সংক্রমণ বাড়তে পারে। যারা সেখান থেকে পণ্য নিতে পারছে না তারা কী করবে? সরকার সব পদক্ষেপই নেয় কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। ভোগান্তি হয় শুধু আমাদের।”
সাপ্তাহিক বাজার করতে এসেছেন ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সবকিছুর দাম বাড়াচ্ছেন। সামনে রমজান মাস আসছে। এখন আর কোনো কিছুর দাম কমবে না। সরকারের যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ পাচ্ছেন। অবশ্য সরকারের যারা এসব বিষয় দেখবে, তারাই এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত।”
স্বস্তি নেই সবজির বাজারেও। বেশির ভাগ সবজির দামই ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, শসা ২৫ টাকা, কাঁচা আম ৭০ টাকা, সজনে ডাটা ৫০ টাকা, মরিচ ৩০ টাকা, লাউ পিস ৪০ টাকা, কুমড়া পিস ৩০ টাকা, কলা হালি ২০ টাকা, টমেটো ২৫ থেকে ৩০ টাকা, চালকুমড়া পিস ২০ টাকা, লেবু হালি ২০ টাকা।
এছাড়া পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, আদা ১০০ টাকা, ভারতীয় রসুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, দেশি রসুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা কেজি। অপরিবর্তিত আছে মুরগি ও হাঁসের ডিম। বর্তমানে প্রতি হালি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৪৫ টাকা।
দাম কমেনি চালের। আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। বর্তমানে প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৩ টাকা, নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৬ টাকা, স্বর্ণা (গুটি) বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, স্বর্ণা (পাইজাম) বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকা, আটাশ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানিকৃত চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৫৯ টাকা কেজি।