প্রতিবছর রমজান মাস এলেই বেড়ে যায় শসা, বেগুন ও পেঁয়াজের দাম। ব্যতিক্রম হয়নি এ বছরও। রাজধানীর বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শসা ও বেগুন। উৎপাদন মৌসুম হওয়ায় পেঁয়াজের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় পাঁচ টাকা বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দামও।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, লকডাউনের মধ্যেই সাপ্তাহিক বাজার করতে এসেছেন বহু ক্রেতা। বেশির ভাগ ক্রেতার মুখে মাস্ক থাকলেও নেই বিক্রেতাদের মুখে। শারীরিক দূরত্ব মানছেন না কেউই। গ্রীষ্মের দাবদাহের মতোই উত্তাপ ছড়াচ্ছে সবজি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্য।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা এবং গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য সবজিও। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতিটি সবজিতে দাম বেড়ে ১০ থেকে ৩০ টাকা।
বর্তমানে বাজারে প্রতি পিস পানিকচু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লতির আঁটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, সজনে ডাটা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মরিচ ৫০ টাকা, চালকুমড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা, ধন্দুল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচা আম ৬০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা। মানভেদে প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচকলা ২০ টাকা।
সজল নামের এক ক্রেতা বলেন, “সবকিছুর দাম বাড়ছে, কিন্তু আয় বাড়ছে না। রমজান মাস এলেই বিক্রেতারা ইচ্ছা করে এই কাজ করে। আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষের চলা খুব মুশকিল হয়ে যায়।”
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা শফিকুল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, “বিক্রেতারা যেভাবে দাম বাড়াবে আমাদের সেভাবেই খেতে হবে। লকডাউনের কারণে এমনিতেই সাধারণ ক্রেতারা কষ্টে আছে, তার ওপর আবার শাকসবজির দাম বাড়লে মানুষ খাবে কী?”
এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, লকডাউন এবং বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সবজির দাম বেশি। বাড়তি দাম দিয়েই তাদের সবজি কিনতে হচ্ছে, তাই বিক্রিও করছেন বেশি দামে।
মাসুদ নামের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, “অনাবৃষ্টির কারণে শাকসবজির আবাদ ভালো হচ্ছে না। তাই বাজারে সরবরাহ কম, দামও বেশি। বৃষ্টি হলেই দাম কমে যাবে।”
তবে আরিফুল ইসলাম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, “লকডাউনের কারণে পণ্যবাহী গাড়ি কম আসছে। যেগুলো আসছে সেগুলো বেশি ভাড়া রাখছে। আর বাড়তি ভাড়া যোগ হচ্ছে পণ্যের সঙ্গে। তাই দাম কিছুটা বেশি।
এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় পাঁচ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকায়। পেঁয়াজের দাম বাড়ার জন্যও লকডাউনকেই দায়ী করছেন বিক্রেতারা।
তবে গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে মুরগির দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা থেকে ১৬০ টাকা, সোনালি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা, লেয়ার ২৩০ টাকা। এছাড়া হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা পিস, কবুতর ১৪০ টাকা।
মুরগির দাম কমার কারণ হিসেবে আলী আকবর নামের এক বিক্রেতা বলেন, “বেচাকেনা নাই, তাই দাম কম। বেচাকেনা না থাকলে মুরগির দামেই নাই। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি মুরগি বিক্রি করেছি।”
আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। বর্তমানে প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৩ টাকা, নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৬ টাকা, স্বর্ণা (গুটি) বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, স্বর্ণা (পাইজাম) বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকা, আটাশ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানিকৃত চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৫৯ টাকা কেজি।
অপরিবর্তিত আছে ভোজ্যতেল। পুষ্টি ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৬৩০ টাকা, রূপচাঁদা ৬৪০ টাকা, বসুন্ধরা ৬৪০ টাকা, তীর ৬৪০ টাকা, মুসকান ৬২০ টাকা। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ১২০ টাকা লিটার এবং পাম ১০৫ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে।
রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্য ছোলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, মসুর ডাল চিকন ১০৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ৭০ টাকা এবং মুগ ডাল ১৩৫ টাকা।