ছোটবেলায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাক চাপায় মারাত্মক আহত হন মশিউর। কোনোমতে প্রাণটা বাঁচলেও হারাতে হয় বাঁ হাত। কৃষক বাবা টেনেটুনে অভাবের সংসার চললেও, তার লেখাপড়া চালাতে পারেননি। তাই প্রাথমিকের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই নামতে হয় জীবীকার সন্ধানে।
শুরুতে মানুষের বাড়িতে ও ক্ষেতে ফসল বোনা, সবজি ধোয়া ও ঘাস কাটার মতো কাজ করে কিছু আয় রোজগার করতেন মশিউর। কিন্তু ১৫ বছর বয়সে বাবাকে হারানোর পর পুরো সংসারের ভার এসে পড়ে তার ঘাড়ে। কয়েক বছর পর এক চাচার সঙ্গে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। শুরু করেন রিকশা চালানো। এরপর থেকে এক হাতেই রিকশা চালিয়ে সংসারের ভার টেনে চলেছেন ৪০ বছর বয়সী এই শারীরিক প্রতিবন্ধী।
মশিউরের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নে। সেখানে তার মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ের বয়স সাত বছর এবং ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ বছর। বর্তমানে তিনি রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকার বৌবাজারে কয়েকজনের সাথে মেসে থাকেন। তার রিকশার গ্যারেজটিও সেখানে।
প্রতিদিন দুপুরের পর ভাড়ায় রিকশা নিয়ে বের হন মশিউর। ফেরেন রাতে। প্রতিবন্ধী দেখে অনেকে তার রিকশায় উঠতেও চায় না। তাই আয় রোজগারও অন্যান্যদের থেকে কম। আবার দুর্ঘটনার ভয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশাও নেন না তিনি। তাই কষ্ট করে এক হাতেই চালান প্যাডেল চালিত রিকশা।
মশিউর বলেন, “ব্যাটারিচালিত রিকশার গতি বেশি। তাই ভয় লাগে। একবার এক দুর্ঘটনায় সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হলাম। আরেকবার পঙ্গু হতে চাই না। তাহলে আমার জীবনই শেষ। তাই কখনো ইঞ্জিনচালিত রিকশার খোঁজ করিনি।”
একহাতে রিকশা চালাতে অনেক কষ্ট হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি যখন ঢাকায় আসি তখন দুই-তিন মাস ভিক্ষা করছিলাম। কিন্তু মানুষের কাছে হাত পাতলে মানুষ টাকা দিতো না। বলতো এক হাত দিয়ে মানুষ কত কিছু করে তুই ভিক্ষা করিস কেন। আমারও ভিক্ষা করতে ভালো লাগতো না। তাই ভিক্ষা ছেড়ে রিকশা চালানো শুরু করি। প্রথম প্রথম অনেক কষ্ট হয়েছে। এখনও কষ্ট হয়, তবে অভ্যাস হয়ে গেছে।”
রিকশা চালানোর আয় দিয়ে কোনোমতে তার সংসার চলে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “সরকারের কাছ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। কিন্তু তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। হাত নাই দেখে অনেকে আমার রিকশায় উঠতে চায় না। তারপরও আমি কিছু মনে করি না। কারণ আল্লাহ আমারে যেভাবে রাখছে, সেভাবেই আমি থাকতে চাই।”