শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ

নীলফামারী প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২২, ০১:১৬ পিএম শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ

সৈয়দপুর প্রতিনিধি
আবাসিক হোটেল থেকে ডেকে নিয়ে এক কলেজ ছাত্রকে অমানবিক নির্যাতন করেছে শিক্ষক। বেদম মারপিটে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শিক্ষার্থীটি বিছানায় ছটফট করছে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ যথার্থ চিকিৎসা ব্যবস্থা না করায় অসহায় অবস্থায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।  

ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরবঙ্গ তথা দেশের অন্যতম সুনামধন্য ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৈয়দপুর সরকারী বিজ্ঞান কলেজে (সাবেক কারিগরি মহাবিদ্যালয়)। রবিবার (৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০ টায় সংঘটিত এই ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

অন্যায়ভাবে প্রহারের শিকার কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ মামুন আবাসিক হোস্টেলের ৩০৯ নং কক্ষে নিজ বিছানায় শুয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানায়, সে আজ ক্লাসে যায়নি। এমতাবস্থায় সকাল ১০ টার দিকে তাকে পিয়ন দিয়ে টিচার্স রুমে ডেকে নেয়া হয়। 

সেখানে উপস্থিত হলে বাংলার প্রভাষক সোহেল আরমান কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন তার নামে কেনো ফেক ফেসবুক আইডি খুলেছি? এমন প্রশ্নে আমি হতবাক হয়ে যাই। কেননা এব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই। তাছাড়া এধরনের কিছু আমি বা আমরা করিনি। তারপরও স্যার অকস্মাৎ আমার দুই গালে সজোরে থাপ্পড় মারে। এতে আমি হতচকিত হয়ে পড়ি। 

উপস্থিত অন্য শিক্ষকরা নিষেধ করা সত্বেও সোহেল স্যার একটা গাছের ডাল দিয়ে তৈরী মোটা লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। এতে আমার ডান হাত, কোমড়, পিট ও পায়ে প্রচন্ড আঘাত পাই এবং মেঝেতে লুটে পড়ি। তবুও তিনি আঘাত করতে থাকেন। এসময় রসায়ন প্রভাষক জাকিরুল ইসলাম স্যার ও একই বিষয়ের প্রদায়ক (ডেমনস্ট্রেটর) আব্দুল আজিজ স্যার আমাকে উদ্ধার করেন। 

শিক্ষার্থী মামুন বলে, সোহেল আরমান স্যার যে অভিযোগ করছেন, সেই ঘটনার সাথে আমার সম্পৃক্ততা না পেয়েও অহেতুক নির্যাতন করেছেন। এমনকি আমাদের কয়েকজন সহপাঠীর ব্যক্তিগত ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ঢুকে অনধিকার চর্চা করেছেন। সেখানেও আপত্তিকর কিছু পাননি। তবুও তিনি আক্রোশমূলকভাবে এই কাজ করেছেন। অথচ গ্রুপের আর কাউকেই তিনি এমন করেননি। 

সে আরও বলে, আঘাতের কারণে আমি হাত নাড়াচাড়াও করতে পারছিনা। প্রচণ্ড ব্যাথা হচ্ছে। এক্সরে করা হলেও আমি সন্তুষ্ট নই। কারণ মনে হচ্ছে আমার হাতের হাড় ফেটে বা ভেঙে গেছে। আমি ভাল চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে যেতে চেয়েছি। কিন্তু স্যাররা যেতে দেয়নি।

আবাসিক হোস্টেলের সিংহভাগ শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন যে, নির্যাতনকারী ওই শিক্ষক নানাভাবে তাদের হেনস্থা করেন। ক্লাসে অশ্রাব্য কটু কথা বলে হেয় করেন। এমনকি মেয়ে শিক্ষার্থীদের সাথেও অসদাচরণ করেন। তার টর্চারে কলেজের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী অতিষ্ঠ।

তারা বলে, ইতোপূর্বেও এমন ছাত্র পেটানোর ঘটনা ঘটেছে। কিন্ত সেগুলো ধামাচাপা দেয়া হয়েছে।  শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার বিহিত দাবি করে। নয়তো সামনে আরও বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। তবে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে পারে আশংকায় তারা নাম প্রকাশে অসম্মতি জানায়।  

প্রভাষক সোহেল আরমান বলেন, কয়েকদিন হলো কে বা কারা আমার নামে ভুয়া ফেসবুক একাউন্ট খুলেছে। সেখানেও আপত্তিকর পোস্ট দেয়া হচ্ছে। এনিয়ে আমি বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছি। খোজ নিয়ে জানতে পারি কলেজের শিক্ষার্থীরাই এই কাজ করেছে। এমতাবস্থায় সহকর্মী অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি মাত্র। 

তাদের সাথে কথা বলে ধারণা হয়েছে মামুনই এদের নাটের গুরু। তাই তাকে শাসন স্বরুপ দুইটি চপেটাঘাত করেছি। আর লাঠিটা দিয়ে ভয় দেখাতে গিয়ে তার হাতে লেগেছে। এতে আমি অনুতপ্ত। সাথে সাথেই তাকে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দিয়েছি। অথচ সামান্য এই ঘটনাকে নিয়ে সে সবাইকে দিয়ে আমাকে হয়রানী করছে। 

আপনি কি শতভাগ নিশ্চিত মামুন আপনার নামে ফেক আইডি খোলার জন্য দায়ি? এমন প্রশ্নে তিনি (সোহেল আরমান) বলেন, না। তবে ওদের একটা পার্সোনাল গ্রুপ আছে। সেখানে আমাকে নিয়ে মামুন বিরুপ মন্তব্য করেছে। যা শোভনীয় নয়। তাই তাকে সতর্ক করার জন্যই শাসন করেছি। কিন্তু অসাবধানতা বশতঃ তা হিতে বিপরীত হয়ে গেছে।

এবিষয়ে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ গোলাম ফারুক প্রশিক্ষণের জন্য বাইরে থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান আবুল কালাম আজাদ বলেন, মূলতঃ বাচ্চাদের ভালর জন্যই ফেক আইডি খোলার ব্যাপারে জড়িতদের একটু শাসাতেই সকল শিক্ষকের উপস্থিতিতেই জিজ্ঞাসা করা হলে মামুনের নাম আসায় তাকে থাপ্পড় মেরেছে। তাছাড়া আর কিছু না। এনিয়ে এতটা প্রতিক্রিয়া দেখানোর কি আছে? অধিকার থেকেই অভিভাবক হিসেবে এটুকু করা হয়েছে।

এদিকে ঘটনাটি মামুন তার বাবাকে জানালে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ হয়ে রংপুরের সংবাদকর্মীর মাধ্যমে সৈয়দপুরে ছড়িয়ে পড়ে। এতে স্বনামধন্য ওই প্রতিষ্ঠানের এহেন নেতিবাচক ঘটনা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কথা উঠেছে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানে ইতোপূর্বে এমন ঘটনা ঘটেনি। 

সোহেল আরমান স্যারের এই অপরিণামদর্শী ও বেআইনি কর্মকান্ডের কারনে সেই সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। কারণ ইতোপূর্বেও তিনি এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই সচেতনমহল বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। 

জাগরণ/আরকে