নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিরঘুমে শায়িত হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বাদ জুমা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ফটকের বাম পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। দাফনের আগে গণস্বাস্থ্যের পিএইচএ ভবনের মাঠে সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায়।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আনা হয় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মরদেহ। পরে শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সকালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ ভবনের মাঠে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ রাখা হয়। রাজনৈতিক-সামাজিকসহ সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে শ্রদ্ধা জানাতে। এসময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকে।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ জুমা পিএইচএ ভবনের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় তার পঞ্চম জানাজার নামাজ। পরে তার মরদেহ পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সূচনা ভবনের পাশে দাফন করা হয়।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতা ও বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।
নানা রোগে কাবু হয়ে গত কিছুদিন ধরে হাসপাতালে ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর তার লিভারেও সমস্যা দেখা দেয়। তিনি অপুষ্টিসহ সেপটিসেমিয়ায় আক্রান্ত বলে চিকিৎসকরা জানান।
গত ৩ এপ্রিল নগর হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল। গত রোববার তার শারীরিক অব্স্থার উন্নতি না হলে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। অবস্থার অবনতি না ঘটল তাকে সোমবার নেয়া হয়েছিল লাইফ সাপোর্টে।
মঙ্গলবার সকালে মেডিকেল বোর্ড বসে তার রক্তে সংক্রমণ পাওয়ার কথাও জানায়। তবে দুপুরে তার কিডনি ডায়ালাইসিস শুরু করা হয়েছিল। এরপর রাতেই আসে মৃত্যুর খবর।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে হাসপাতাল গড়ে তোলার মাধ্যমে যুদ্ধকালীন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ। অনেকের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর চিকিৎসা গবেষণা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা ধরনের কাজ করেছেন।
জাতীয় ওষুধ নীতি ও জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নেও বড় ভূমিকা রেখেছেন তিনি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মাধ্যমে সুলভে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি।
জীবনের নানা পর্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার বা সম্মান পেয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ফিলিপাইনের র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান ১৯৮৫ সালে। ১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে তাকে দেয়া হয় রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড। কানাডার ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব ন্যাচারাল মেডিসিন ২০০৯ সালে দেয় ডক্টর অব হিউম্যানিটেরিয়ান উপাধি।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি থেকে ২০১০ সালে দেয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ হিরোজ অ্যাওয়ার্ড। যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশিজ ২০২২ সালে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ‘এনআরবি লিবারেশন ওয়ার হিরো ১৯৭১’ পুরস্কার দেয়।
জাগরণ/শোক/এসএসকে