বায়ুদূষণের বিবেচনায় বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের (ইপিআইসি) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।
এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স, ২০২৩ শিরোনামের প্রতিবেদনে স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ২০২১ সালের বাতাসের গুণমান বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষিত বায়ুতে নিঃশ্বাস নেওয়ার কারণে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে প্রায় ৬.৮ বছর। এলাকাভেদে এই পরিস্থিতি আরও করুণ। রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর দেশের সবচেয়ে দূষিত জেলা। এ জেলায় বায়ুদূষণের কারণে মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে ৮.৩ বছর।
ইপিআইসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি ঘনমিটারে বাতাসে সর্বোচ্চ দূষণ কণা মান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ঠিক করে দিয়েছে ৫ মাইক্রোগ্রাম। কিন্তু বাংলাদেশের বাতাসে দূষণকারী এসব গ্যাসীয় কণার উপস্থিতি তার চাইতে ১৪ থেকে ১৬ গুণ বেশি।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ১৫ মাইক্রোগ্রামকে মানদণ্ড হিসেবে নির্ধারণ করেছিল। বাংলাদেশের সবচেয়ে কম দূষিত যে জেলা, সেই সিলেটেও কণা দূষণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়ে ৯.৭ গুণ এবং জাতীয় মানের ৩.২ গুণ বেশি বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনটি।
গড় আয়ু বিবেচনা করলে হৃদরোগের পরেই বায়ুদূষণ বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি হুমকি বলে প্রতিবেদনটি উল্লেখ করেছে। এতে বলা হয়, এর প্রভাব ধুমপানের চেয়ে মারাত্মক। তামাক সেবনের কারণে গড় আয়ু যেখানে কমে যাচ্ছে ২.১ বছর, যখন শিশু এবং মাতৃ অপুষ্টি গড় আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে ১.৮ বছর, বায়ু দূষণের প্রভাব দেখা যাচ্ছে এর চাইতে কয়েক গুণ বেশি। গড় আয়ু কমে যাচ্ছে প্রায় ৭ বছর।
ইপিআইসির প্রতিবেদন মতে, বায়ুদূষণের ফলে মানুষের গড় আয়ুতে সবচাইতে বেশি প্রভাব পড়ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে। এই দুটি অঞ্চলে প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষের বাস। দূষিত বায়ুতে এখানে মানুষ গড় আয়ু হারাচ্ছে ৭.৬ বছর।
বাংলাদেশ যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী বায়ুদূষণ কমিয়ে আনতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনবহুল জেলা ঢাকার বাসিন্দাদের আয়ু বেড়ে যাবে ৮.১ বছর।
বায়ু দূষণ নিয়ে দুই দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ বায়ুদূষণে শীর্ষে। এ থেকে ভালো অবস্থানে আসার জন্য দেশের কেউই দৃশ্যমান তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এ কারণে পরিস্থিতি ক্রমে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম বলেন, রাস্তায় বের হলেই দূষণ। সবাই দেখছেন বাতাসের ধুলা। কিন্তু বড় বড় শিল্প-কারখানার কারণে বায়ু অনেক বেশি দূষিত হচ্ছে। ঢাকার রাস্তায় যেসব গাড়ি রয়েছে, সেসব গাড়ির জ্বালানি থেকেও বায়ু দূষিত হচ্ছে।
যানজটের কারণে ঢাকার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে বেশ সময় লাগে। এ কারণে রাজধানীবাসী এই বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছেন। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অনেক বেশি জরুরি।
জাগরণ/পরিবেশ/এসএসকে