উজানে ভারী বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে নীলফামারীতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে তিস্তা নদীর পানি।
বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এর আগে, সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত নদীর পানি বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও দুপুরের পর থেকে নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বিকাল ৪টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদীর তীরবর্তী জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, গয়াবাড়ি, ঝুনাগাছ ছাপানী, খগাখড়িবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, শৌলমারী ও কৈয়মারী ইউনিয়নের নিমাঞ্চলের ১৫টি গ্রামের পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে। এসব এলাকায় সর্তকতা জারি করে মাইকে প্রচার শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বুধবার বিকেল চারটায় নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর বিকেল পাঁচটা ও সন্ধ্যা ছয়টায় দুই দফায় বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গভীর রাতে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, অব্যাহতভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং মাইকিং করে তিস্তা পারের মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলছেন। ইতিমধ্যে অনেকে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন।
ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত নৌকা মোতায়েন রাখা হয়েছে।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন বলেন, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার ইউনিয়নের চারটি গ্রামের দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদ্দৌলা বলেন, তিস্তা নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের উত্তর সিকিমে চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে গজলডোবা ও দোমুহুনী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত নদীর ভাঁটি অঞ্চল বাংলাদেশ অংশেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, তিস্তা ব্যারাজের সবকটি জলকপাট খুলে রেখে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এখন পর্যন্ত আমাদের কোন স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি সকাল থেকে তিস্তা নদী এলাকায় অবস্থান করছি। সকাল থেকে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।
বিভিন্ন মসজিদের মাইকে প্রচারণা চলছে। ইতিমধ্যে চর এলাকার মানুষজন তাদের গরু বাছুর নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করেছেন। যাদের জমিতে আধাপাকা ধান আছে তারাও তাদের ধান কেটে নিচ্ছেন।’
জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘আমি দুপুর থেকে তিস্তা পাড়ে অবস্থান করছি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় ডিমলা উপজেলা পরিষদকে ৩০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও প্রয়োজনীয় ত্রাণ মজুদ আছে।’
জাগরণ/পরিবেশ/এসএসকে