রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র

পরমাণু জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠান আজ

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৩, ১২:৫১ এএম পরমাণু জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠান আজ
ছবি ● ফাইল ফটো

আজ বৃহস্পতিবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রথম ইউনিটের ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করবে রুশ কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি।

এর মাধ্যমে বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারকারী দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই রূপপুর কেন্দ্র থেকে মিলবে পরমাণু বিদ্যুৎ। কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে বদলে গেছে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রূপপুরের চেহারা।

পাবনার রূপপুরে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে দেশের একমাত্র পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র। সেখানে কাজ করছেন রাশিয়া, ইউক্রেনের সাড়ে ৫ হাজার নাগরিক। অন্যদিকে এই প্রকল্পে কর্মরত দেশের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাশিয়া থেকে দেশে পৌঁছেছে ইউরেনিয়াম, যা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল জ্বালানি। কড়া নিরাপত্তায় সেই ফুয়েল এখন রূপপুরের স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিতে। রাশিয়ার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ইউরেনিয়াম বুঝে নেবে রূপপুর প্রকল্প।

রাশিয়া থেকে আনা ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামসহ পরমাণু চুল্লির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে এপ্রিল পর্যন্ত। তারপরই প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে দেয়া শুরু হবে বিদ্যুৎ।

বৃহস্পতিবার উদ্বোধন হবে অতি আকাংক্ষিত প্রকল্প পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমি পুতিন প্রথম ইউনিটের ইউরিনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ শুরুর পর থেকে বদলে গেছে এলাকার চিত্র। রাশিয়ানদের আনাগোনায় রূপপুর প্রকল্পের চারপাশে গড়ে উঠেছে সু-উচ্চ ভবন। এক সময়ের ঝোপঝাড়, খাল এলাকায় এখন বড় বড় চোখে পড়ে আধুনিক শপিংমল আর রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট।

প্রকল্প নির্মাণে বিদেশিদের আনাগোনায় নানা পণ্য বেচাকেনায় কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো মানুষের। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ এলাকায় ভিড় করেছেন অনেক ব্যবসায়ী।

আর স্থানীয়রা বলছেন, বদলে যাওয়া রূপপুরের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে পাবনাবাসীর জীবন।

২০১৭ তে কাজ শুরুর পর দেশের প্রথম পারমাণবিক এই প্রকল্পটি এখন বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা আর সক্ষমতার প্রতীক যেন।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী- সরকার আশা করছে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ও দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে চালু হবে।

প্রকল্পটিতে ৭,০০০ পেশাদারসহ ৩০,০০০ জন কর্মী কাজ করছেন। প্রকল্পটি ৬০-৮০ বছর ধরে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে পারমাণবিক ক্লাবে প্রবেশ বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। কারণ এটি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।

একই সময়ে এটি ফ্ল্যাশের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমিয়ে দেবে। প্রকল্পের লে-আউটে বলা হয়েছে, আরএনপিপি প্রতিদিন ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর বৈশ্বিক উদ্যোগ নিশ্চিত করবে।

রাশিয়ান ঠিকাদার হিসাবে রোসাটম, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিটি ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট নিয়ে গঠিত।

মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরমাণু শক্তি কমিশন আরএনপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। রাশিয়ান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি অ্যাটমস্টোএক্সপোর্ট  প্রকল্পের অধীনে ১২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে। পারমাণবিক জ্বালানি রোসাটমের সহযোগী কোম্পানি টিভিইএল ফুয়েল তৈরি করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের কাছ থেকে পারমাণবিক জ্বালানি ক্রয় করে।

ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট অনুসারে পরমাণু শক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলির মধ্যে রয়েছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, ইউক্রেন, জার্মানি, জাপান, স্পেন, সুইডেন, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ভারত, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, বুলগেরিয়া, পাকিস্তান, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, রোমানিয়া, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলারুশ, স্লোভেনিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইরান ও আর্মেনিয়া।

একবার পারমাণবিক জ্বালানী পাওয়ার প্ল্যান্টের চুল্লিতে লোড করা হলে, এক বছরের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। এর পরে, জ্বালানী চুল্লিতে পুনরায় লোড করতে হবে। ২০২১ সালের অক্টোবরে, ইউনিটের কাঠামোর মধ্যে চুল্লি স্থাপনের মাধ্যমে রূপপুর ইউনিট-১ প্রায় সম্পন্ন হয়। এটি  এআইইএ-এর মান অনুযায়ী স্থাপন করা হয়।

চুল্লি একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান উপাদান। গত বছরের অক্টোবরে দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপন করা হয়।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের সময় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

জাগরণ/বিদ্যুৎওজ্বালানি/এসএসকে