বছর তিনেক আগে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে হাওরসহ সারা দেশে ধানকাটা শ্রমিকের ব্যাপক সংকট দেখা দেয়। তখন সরকার সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে বিদেশ থেকে আনা কম্বাইন হারভেস্টার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করে। ফলে হাওরে পানি আসার আগেই দ্রুত ধান কাটা সম্ভব হয়।
যন্ত্রের সুফল পেয়ে সারাদেশে বেড়ে যায় এর চাহিদা। এ পরিস্থিতিতে চড়া ভর্তুকি ও কৃষকের খরচ কমাতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীরা ‘ব্রি হোলফিড কম্বাইন হারভেস্টার’ তৈরি করেন।
ব্যাপক প্রচারণা না হলেও আক্ষরিক অর্থে কৃষিক্ষেত্রে এ ছিল এক বিপ্লব। বিদেশ থেকে এসব হারভেস্টার কিনে আনতে যেখানে খরচ করতে হয় ৪০-৪৫ লাখ টাকা, দেশে উৎপাদিত এ যন্ত্রের দাম পড়ে ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকা।
দীর্ঘদিন নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও আমদানিকারকদের শক্তিশালী চক্রের চাপে দেশে তৈরি যন্ত্রটির উৎপাদন ও বাজারজাত আটকে ছিল। অবশেষে সেই জটিলতা কেটেছে।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কম্বাইন হারভেস্টার উৎপাদন আবারও শুরু হয়েছে। এতে দেশের তৈরি পণ্য কম দামে পৌঁছে যাবে চাষির হাতে।
এর মাধ্যমে আধুনিক কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ।
আমদানি নির্ভরতা নিরসনে যুগান্তকারী এ উদ্যোগ নিয়েছে ব্রি ও বেসরকারি কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ব্রির ‘যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদের লক্ষ্যে খামার যন্ত্রপাতি গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধিকরণ (এসএফএমআরএ)’ প্রকল্পের অর্থায়নে শনিবার সিলেটে আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় ব্রি হোলফিড কম্বাইন হারভেস্টার প্রস্তুতের উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মাহবুবুল হক পাটওয়ারী।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর বলেন, যন্ত্রটি তৈরিতে দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করায় খুচরা যন্ত্রাংশ প্রাপ্তিতে সমস্যা হবে না। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রটি ব্যাপকভাবে প্রস্তুত শুরু হলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে; রপ্তানির সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
তিনি বলেন, এ যন্ত্রের ধান কাটার ক্ষমতা একই ধরনের বিদেশি যন্ত্রের চেয়ে বেশি। বিদেশ থেকে ধান কাটার যে যন্ত্রগুলো আনা হয়, সেগুলো মূলত বিস্তৃত মাঠের জন্য।
বাংলাদেশের জমি টুকরা টুকরা। এটি দেশের ছোট ছোট জমিতে ব্যবহার উপযোগী। ধান কাটার পর ফসল নষ্ট হওয়ার পরিমাণ শতকরা এক ভাগের কম।
জাগরণ/কৃষি/কেএপি