সদ্য ঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটির ৩০১ সদস্যের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশকেই ‘বিতর্কিত’ বলে উল্লেখ করে তাদের নাম প্রকাশ করেছে ওই কমিটিতে পদবঞ্চিতরা।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে ‘বিতর্কিত’ হিসেবে উল্লেখ করে ১০০ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মাত্র ১৭ জনের কথা বলেছেন। কিন্তু এতে বয়স শেষ, মাদক ব্যবসায়ী, হত্যা মামলা, বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক, বিবাহিত, চাকরিজীবী রয়েছেন শতাধিক। তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি অর্থবহুল, সুন্দর ও সুষ্ঠু কমিটি গঠন করতে হবে। এছাড়া বিতর্কিতরা টিউমারের মতো। পরে তারা ক্যান্সারে পরিণত হবে। তাদের কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে আমরা আনন্দিত হয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্দেশ অমান্য করলে শক্ত জবাব দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর আর্দশের একজন সৈনিকও বেঁচে থাকতে ছাত্রলীগের কেউ ক্ষতি করতে পারবে না।
এ সময় আন্দোলনরত পদ বঞ্চিত নেতাদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে এবং প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়া হয়েছে বলে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়। এছাড়া এতে মধুর ক্যান্টিনে নেত্রীদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবিও জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যের পর সংবাদ সম্মেলনে পদবঞ্চিত অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন। নেতারা বলেন, ‘‘গতকাল (বুধবার) ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ধানমণ্ডি কার্যালয়ে যে সংবাদ সম্মেলন করে বিতর্কিত ১৭ জনের কথা উল্লেখ করেছেন। তাতেই প্রমাণ হয়, আমাদের দাবি যৌক্তিক। তবে তারা ১৭ জন বললেও এই কমিটিতে ৯৯ জনই বিতর্কিত।’’
এ সময় তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ দেয়ার আগে নেতাদের ডোপ টেস্ট করানোর দাবিও জানান। তারা বলেন, আমাদের অবস্থান ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের অবস্থান বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা উপস্থিত ছিলেন।
মধুর ক্যান্টিনে মারামারির ঘটনায় ছাত্রলীগ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে বুধবার (১৫ মে) মধ্যরাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে তারা ছাত্রলীগের কমিটিতে ১৭ জন ‘বিতর্কিত’ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ‘বিতর্কিতদের’ বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের অব্যাহতি দেয়া হবে বলে তারা ঘোষণা দেন।
গত সোমবার (১৩ মে) ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরপরই ছাত্রলীগের একাংশ এই কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। তাদের অভিযোগ, যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে নিষ্ক্রিয়সহ ‘বিতর্কিত’দের পদ-পদবি দেয়া হয়েছে। এ অভিযোগে তারা কমিটির প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে ওই দিন সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে মারধরের শিকার হন তারা। পরদিন মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে তারা সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি থেকে অযোগ্যদের বের করে যোগ্যদের মূল্যায়ন করতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।
এমআইআর/এসএমএম
