গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির কর্মসূচি

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০১৯, ০৬:০১ পিএম গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির কর্মসূচি
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী -ছবি : জাগরণ

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার (২ জুলাই) দেশব্যাপী জেলা সদর ও মহানগরগুলোতে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে। একইদিন ঢাকা মহানগরের থানায় থানায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।

সোমবার (১ জুলাই) বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সংবাদ সম্মেলন রিজভী বলেন, বর্তমান মিডনাইট সরকার আবারও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। আওয়ামী লীগের ১০ বছরে গ্যাসের মূল্য বাড়িয়েছে ৬ বার। এর আগেও ১৯৯৬-২০০১ সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে ২ বার। এক চুলা ১৫০ টাকা ও দুই চুলা ২০০ টাকার গ্যাস এখন ৯২৫ টাকা ও ৯৭৫ টাকা করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়-স্বজনদের লুটপাটের জন্যই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে সরকার।

তিনি বলেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে বিদ্যুতের দামও বাড়বে। বাড়বে কল- কারখানার উৎপাদন খরচও। জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। যারা সীমিত আয়ের লোক তাদের ওপর এর প্রভাব বেশি পড়বে।

তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে সবধরনের শিল্প-প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে দেশের গার্মেন্টস খাত মারাত্মক চাপে পড়ে যাবে। দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহনের ভাড়াও বেড়ে যাবে। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। এমনিতেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এবং গাড়ি ভাড়া, বাড়ি ভাড়া আকাশছোঁয়া, তার ওপর গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে ফেলে দেবে। সব গ্যাস কোম্পানি লাভজনক অবস্থায় থাকার পরও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি দুর্নীতিকে আরও পাকাপোক্ত করবে। যার চূড়ান্ত ভুক্তভোগী হবে সাধারণ মানুষ। এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ গণবিরোধী ও গবিব মারার সিদ্ধান্ত। বিএনপির দলের পক্ষ থেকে গ্যাসের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

রিজভী আরও বলেন, সারাদেশে নৃশংসতা থামছেই না। এসব নারকীয় ঘটনার বেশিরভাগই ঘটাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা। সামাজিক অপরাধপ্রবণতা সকল যুগের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য ও বেকারত্বের কারণে কিশোর-তরুণরা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। নারকীয় উল্লাসে খুনের উৎসবে মেতে উঠেছে। অথচ দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা ক্রমাগত নিষ্ঠুর রসিকতা করে যাচ্ছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বরগুনায় রিফাত শরীফের খুনিরা ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়েই ক্ষমতাধর ও ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই নেতা ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এমপি এবং সাবেক এমপি বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের লোকজন এ লোমহর্ষক ঘটনায় জড়িত। রিফাত শরীফ হত্যার মূল আসামি নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী। হত্যা মামলার মূল আসামিরা বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। রিফাতের হত্যাকারী রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। দেলোয়ার হোসেনের প্রশ্রয়েই এ দুইভাই হত্যার মতো অপরাধ সংঘটনে দুঃসাহসি হয়ে ওঠে। ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সুমন দেবনাথের ছত্রছায়ায় রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডসহ অন্যরা বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে। মামলার আসামি চন্দন ও রাব্বি আকন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তারা জেলা ছাত্রলীগের সদস্য। কিলিং মিশনে অংশ নেয়া সুহার্ত বরগুনা জেলা যুবলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন সাবুর ছেলে। গ্রুপ ০০৭ থেকে ফাঁস হওয়া এক ছবিতে তাকে রামদা হাতে বসে থাকতে দেখা গেছে। বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিকের সঙ্গে অভিযুক্তদের বিভিন্ন সময়ে ঘনিষ্ঠভাবে দেখা গেছে।

রিজভী আরও বলেন, বর্তমান সরকার যেন অপরাধী তৈরির একটা বহুপ্রজ ফ্যাক্টরিতে পরিণত হয়েছে। রিফাত শরীফ হত্যার ভয়ঙ্কর খুনিরা ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় আছে, তাই তাদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ। এই মূহুতে তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

টিএস/এসএমএম

আরও সংবাদ