আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন হতে না দেবার ঘোষণার পরও ৪১ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে এটিও কম নয়। এবার কেউ বলতে পারবে না রাতে ভোট হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ন হয়েছে।
বুধবার বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানের অবৈধ নির্বাচন নিয়ে যারা কখনও কথা বলেনি, আজ যখন সু্ষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে, জনগণ নিজের ভোট নিজে দিতে পারছে, তখন তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
২০০৮ এ মানুষ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারপরও বিএনপি গণতন্ত্রের পথে আসেনি, সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসলে দেশ এগুতে পারতো না। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না।
সব বাধা উপেক্ষা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দলটির সভাপতি বলেন, ২০০৯ সালের পর প্রতিটি নির্বাচনে মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। কারণ, জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের কোনও কিছু ছিল না। থাকার ঘর ছিল না, বাড়ি ছিল না, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল এ দেশের মানুষ। সেই জাতির জন্য, তাদের ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছিলেন এই বাংলাদেশে। সবার আগে ছুটে এসেছিলেন এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেখানে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার জীবনটা উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের জনগণের জন্য। এদেশে অন্ন, বস্ত্র ,বাসস্থান, শিক্ষার কোনো কিছু ছিলো না। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। একবেলা খাবার পেতো না, দিনের পর দিন না খেয়ে তাদের জীবন কাটাতে হয়েছে। সেই মানুষদের মুক্তির জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেতে হয়েছিল তাকে।
তিনি বলেন, এদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, কী কী কাজ করা দরকার, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে কীভাবে তিনি গড়ে তুলবেন সেই সব বিষয়ে তিনি ভাষণেই উল্লেখ করেছিলেন। যে ভাষণ তিনি এ জায়গায় দিয়েছিলেন। এই ভাষণ যখন শুনি আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই। দীর্ঘ ৯ মাস কারাগারে বন্দী ছিলেন। সেখানে তাকে ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হতো না। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নভাবে রাখা হয়েছিলো তাকে। এমনকি একটি পত্রিকাও তার জন্য রাখা হয়নি। তার ফাঁসির হুকুম হয়ে গিয়েছিলেঅ। সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছিলেন তিনি। দেশে পা রেখেই ছুটে যান বাংলার জনগণের সামনে। ১০ জানুয়ারি এখানেই তিনি ভাষণ দেন। সেই ভাষণে একটি দেশের ভবিষ্যৎ, উন্নয়ন, সব পরিকল্পনা, দুঃখী মানুষের হাসি ফোটানোর পরিকল্পনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ সেটা তিনি তুলে ধরেছিলেন।
এ আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় জড়ো হয় আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। জনসভায় যোগ দিতে দলটির নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে আসেন
ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন দুপুরের আগেই। উদ্যানের বিভিন্ন গেট দিয়ে ভিতরে ঢোকেন তারা।
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার-প্লাকার্ড নিয়ে জনসভায় যোগ দেন। ঢাকার বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতারা ব্যানার-প্ল্যাকার্ড ও পতাকা নিয়ে আসেন।
ছবির হাটের গেট, টিএসসি সংলগ্ন গেট, রমনা কালিমন্দির গেট, তিন নেতারা মাজার গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢোকেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের গেট দিয়ে ভিআইপিরা প্রবেশ করেন জনসভায়। সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
জাগরণ/রাজনীতি/আওয়ামীলীগ/এসএসকে