শিল্প ও সাহিত্যবিষয়ক ছোটকাগজ ‘মেঘ’-এর সম্পাদক ও তরুণ কবি শাহিন লতিফের দুটি চোখই জটিল রোগে আক্রান্ত। এ ছাড়া নিউরোলজিক্যাল জটিলতায় কোনো কাজও করতে পারছেন না তিনি। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে একাকী কষ্টদায়ক, দুর্দশাপূর্ণ ও সংগ্রাম করে বড় হয়েছেন শাহিন লতিফ। বর্তমানে ভারতের চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ের চক্ষু বিশেষজ্ঞ রমারাজা গোপালের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।
চিকিৎসক জানিয়েছেন, অতি দ্রুত তার চোখের অপারেশন করে কর্ণিয়া সংযোজন ও ব্রেনের অপারেশন করে কৃত্রিম নার্ভ সংযোজন করতে হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে চিরঅন্ধত্ব বরণ করতে হবে তাকে। চোখের অপারেশন ও চিকিৎসার জন্য অন্তত ১৭ লাখ টাকার প্রয়োজন। তবে এই টাকা তার পরিবারের পক্ষে কোনোভাবেই জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই একজন সৃজনশীল সাহিত্যকর্মী ও তরুণ কবির চোখে আলো এবং মুখে হাসি ফেরাতে সুহৃদ, মানবিক ও বিত্তশালীদের আর্থিক সহায়তা কামনা করেছেন শাহিন লতিফের পরিবারের একমাত্র সদস্য তার স্ত্রী স্বপ্না শিলা।
গত ১ মে লেখা ফেসবুক স্ট্যাটাসে কবি শাহিন লতিফের ফেসবুক ওয়ালে লেখা দেখা যায়, “আলো আর কত দূর???”
এদিকে তরুণ এই কবির শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু-স্বজনেরা ফেসবুকে একের পর এক সাহায্যের আহ্বান করে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন। প্রকাশ করে যাচ্ছেন তাদের মানবিক আর্তি।
সাখাওয়াত বকুল নামে একজন লিখেন, সাহিত্যের আলপথে হাঁটতে গিয়ে দেখেছি, তথাকথিত সৃজনশীল আর সভ্যতার ধব্জাধারীরা কত কপটতা নিয়ে এই অঙ্গনে দৃঢ়পায়ে চলে এবং সমাজ দেয় তার পূজা আর রাষ্ট্র তার পৃষ্ঠপোষকতায় উদারহস্ত। সেখানে শাহিন লয়িফ যেন এক নির্মল মেঘ। আসুন এই এতিম, সব হারানো কবি শাহিন লতিফের পাশে দাঁড়াই। আমাদের ঈদের আনন্দের মতো, স্বপ্না শীলারও জীবন আনন্দময় হোক।”
এসএসসি ৯১-এর ব্যাচের বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে খোরশেদা ইয়াসমিন নামে একজন লিখেন, “ত্রিশালের এক নিভৃত পাড়াগাঁয়ে জন্মমাত্রই পিতৃ-মাতৃহীন নবজাতকের বড়ই অনাদরে বেড়ে ওঠা। গ্রামসংলগ্ন বিদ্যালয়েই ৭ম শ্রেণি শেষে ৮ম শ্রেণিতে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে পদার্পণ। ৯১-এ এসএসসি শেষে মাতৃভূমি ময়মনসিংহে ফিরে আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হয়ে কৃতিত্বের সাথে সমাপ্তি টানে স্নাতকত্তোরের, আমাদের চিরচেনা বন্ধু কবি শাহিন লতিফ। মানবিকতাহীনতায় শৈশব কৈশোর পেরিয়ে একাকী জীবিকা অন্বেষণে ঢাকায় পারি দেয়া মানবিক কবি শাহিন প্রকাশ করে ‘মেঘ’, ‘কু্য়াসা’সহ আরও কিছু একক কাব্যগ্রন্থ। আমাদের আজন্ম একাকিত্বে মোড়া এই বন্ধুটি হঠাৎ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ৫ বছর যাবৎ অন্ধ। সময়ের ব্যবধানে ব্যর্থ চিকিৎসায় ভূ-সম্পত্তিহীন বন্ধুটি হয়ে যায় একেবারে নিঃস্ব। স্নায়ুবিক কারণে অন্ধ হয়ে যাওয়া শাহিন বর্তমানে বিকলাঙ্গের দিকে ধাবমান। এই মুহূর্তে কর্নিয়া সংযোজন না-হলে অন্ধ বন্ধুটি কিছুদিনের মধ্যেই বিকলাঙ্গ হয়ে পরপারের যাত্রী হবে। এক্ষুনি আমাদের বন্ধুর পরিচয় দিয়ে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাই এসএসসি ৯১-এর সকল বন্ধুর কাছে। এসো সবাই মিলে হতাশাগ্রস্ত বন্ধুর পাহাড়সম দুঃখ ঘুচিয়ে তাকে বাঁচাই। আমাদের ক্ষুদ্র অনুদানেই হয়তো সে প্রাণ ফিরে পাবে। দয়া করে বন্ধুরা এগিয়ে এসো, বাঁচাও প্রাণ অবশেষে—“বিন্দু বিন্দু জল দিয়েই সিন্ধু তৈরি হয়।”
গত অমর একুশে বইমেলার একটি ছবি পোস্ট করে ‘নিয়ন আলো’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে লেখা হয়, “আমার দুপাশে একজন শাহিন লতিফ ও অন্যজন তার সহধর্মিণী শিলা। শাহিনের এই দুর্দিনে শিলা তাকে পরম মমতায় আগলে রেখেছেন। শাহিন লতিফের যুদ্ধে ঢাল হয়ে তার সামনে আছেন। শাহিন লতিফের চোখের অপারেশন করাতে হবে খুব দ্রুতই। খরচটা তার জন্য খুব ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। সহজ ভাষায় বলতে গেলে অসম্ভব। আমরা যদি একটু করে তার পাশে দাঁড়াই, হয়তো তিনি আবার আলো ফিরে পাবেন। প্রথম দেখাতে শাহিনকে আমি সুস্থ দেখেছিলাম। আর সেদিন শাহিন বললেন, ‘দীপা আমি আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না, তবে আপনার ঘ্রাণ থেকে বুঝতে পারছি আপনি আগের মতোই আছেন।’ ভদ্রলোকের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আবারও সবার সহমর্মিতা চাই। শাহিনকে এই সমাজের এখনও অনেক প্রয়োজন।”
ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকে কবি শাহিন লতিফকে সাহায্যে এগিয়ে আসছেন। তাকে অর্থ সহায়তা পাঠানোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর : ২১০৪২১৯০২৩৪৭০, অ্যাকাউন্টের নাম : শাহিন লতিফ, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, মতিঝিল শাখা, ঢাকা। এ ছাড়া ০১৩১৭২৪৭০৮১ বিকাশ (মার্চেন্ট) অ্যাকাউন্ট নম্বরেও সহায়তা পাঠানো যাবে।