ভারতের বিপক্ষে এজবাস্টনে লড়াইয়ের নামার আগে বাংলাদেশের সামনে সমীকরণ ছিল ‘বাঁচা-মরার’। সেমিফাইনালের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে হারাতে হবে ভারতকে, নতুবা নিজেরাই ছিটকে যাবে টুর্নামেন্ট থেকে। এর আগে, বহুবার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বাংলাদেশের। সেখান থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়েছ টাইগাররা, তবে এবার আর তা হলো না। ভারতের বোলিং লাইনআপের সামনে ব্যর্থ হলেন তামিম-মুশফিকরা। ফলে সেমিফাইনালের স্বপ্ন নিয়ে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ খেলতে আসা টাইগারদের স্বপ্নযাত্রার সমাপ্তি ঘটলো এখানেই।
অথচ ভারতের ছুঁড়ে দেয়া ৩১৫ রানের লক্ষ্যটা বড় হলেও হাসিল করা অসম্ভবপর ছিল না। অন্তত এই বিশ্বকাপে একমাত্র দল হিসেবে যারা ৩০০ এর অধিক রান তাড়া করে জিতেছে তাদের পক্ষে তো সামর্থ্যের অনুকূলেই এই স্কোর। কিন্তু এদিন যেন ব্যাটসম্যানদের মাথায় ভূত চেপেছিল। একে একে নিজেদের উইকেট ভারতীয় বোলারদের উপহার দিয়ে এসেছেন তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মোসাদ্দেক হোসেনরা। ফলে সাকিব-সাইফউদ্দীনদের ফিফটি প্রচেষ্টা বিফলে যায়। আর বাংলাদেশ ম্যাচ হারে ২৮ রানে।
এজবাস্টনের ছোট গ্রাউন্ডে উদ্বোধনী জুটিতে ৩৯ রানের সংগ্রহ গড়ে তামিম প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেট ছুঁড়ে আসেন। মোহাম্মদ শামির বলের অহেতুক বাজে শট খেলে বোল্ড হন তিনি। তামিম ফেরার পর সৌম্যকে নিয়ে হাল ধরার চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান। তবে এ জুটিও হয় ব্যর্থ। দ্বিতীয় উইকেটে এই দুই ব্যাটসম্যানের ৩৫ রানের জুটিটি ভাঙেন হার্দিক পান্ডিয়া। ইনিংসের ১৬তম ওভারের প্রথম বলে সৌম্য ভুল শট খেললে ধরা পড়েন এক্সট্রা কভারে থাকা বিরাট কোহলির হাতে।
এরপর মুশফিকুর রহিম ও সাকিবের জুটি আশা যোগাচ্ছিল বাংলাদেশি সমর্থকদের। কিন্তু ২৩ বলে নিজের নামের পাশে ২৪ রান করার পর মুশফিক হঠাৎ-ই সুইপ করতে গিয়ে ধরা দেন মিড-উইকেটে থাকা মোহাম্মদ শামির হাতে। যুজবেন্দ্র চাহালের বলে তিনি ক্যাচটি তুলে দেন।
লিটন কুমার দাসও পান দারুণ শুরু। তবে বাকিদের মতো তিনিও নিজের উইকেট বিলিয়ে আসেন। পান্ডিয়ার ৩০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকানোর এক বল পরেই পুল করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়ানো দীনেশ কার্তিকের তালুবন্দী হন এই হার্ড-হিটার ব্যাটসম্যান। তার উইলো থেকে আসে ২৪ বলে ২২ রান।
এদিকে উইকেটে এসেই বিদায় নেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। দলকে চরম চাপের মধ্যে ঠেলে দিয়ে মাত্র ৩ রান করে বুমরাহের বলে বোল্ড হন মোসাদ্দেক। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ঠিকই খেলে যাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু সহযোদ্ধা না পাওয়ায় বেশিক্ষণ লড়াই চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। চলতি বিশ্বকাপে ৭ম ম্যাচে ৬ষ্ঠ ফিফটি করার পর পান্ডিয়ার শিকার হন সাকিব।
সাকিব বিদায় নেওয়াতেই হারের শঙ্কা ঢুকে যায় বাংলাদেশি ভক্ত-সমর্থকদের মনে। তবে শেষের আগে যেন হার মানতে রাজি ছিলেন না দুই তরুণ সাব্বির রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। সপ্তম উইকেটে দুজন মিলে রান তুলেছেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই। ৪৪তম ওভারের প্রথম বলে সাব্বির আউট হওয়ার আগে দুজন মিলে গড়েন ৫৬ বলে ৬৬ রানের জুটি। জাসপ্রিত বুমরাহর ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হওয়া সাব্বির ৩৬ বল খেলে করেন ৩৬ রান।
এরপরের গল্পটা সাইফউদ্দিনের একার লড়াইয়ের। একাই লড়ে ফিফটি তুলে নেন তিনি। তবে এর আগে, অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এক ছক্কা হাঁকিয়েই পরের বলে আউট হয়ে যান মাত্র ৮ রান করে। এরপর রুবেল হোসেনকে নিয়েও নবম উইকেটে শেষ চেষ্টা চালান সাইফ। কিন্তু রুবেল ৯ রান করে আউট হয়ে গেলে বাংলাদেশের শেষ সম্ভাবনাও নিভে যায়।বুমরাহর বলে বোল্ড হন এই ডানহাতি পেসার রুবেল। এদিকে ঠিক পরের বলে মুস্তাফিজকেও বোল্ড করেন বুমরাহ।
ফলে দুই ওভার বাকি থাকতেই ২৮৬ রানে অলরাউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। তাই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি করা সাইফউদ্দীনের অপরাজিত ৩৮ বলে ৫১ রানের ইনিংসটি যায় বৃথা।
বলে হাতে ভারতের পক্ষে ৪ উইকেট শিকার করেছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। হার্দিক পান্ডিয়া পেয়েছেন ৩ উইকেট। এছাড়া ১টি করে উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন দলের বাকি তিন বোলার ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামি ও যুজবেন্দ্র চাহাল।
এসএইচএস