রোড টু সেমিফাইনাল 

সৌভাগ্যবান দল হিসেবে সেরা চারে নিউজিল্যান্ড

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০১৯, ১০:০২ পিএম সৌভাগ্যবান দল হিসেবে সেরা চারে নিউজিল্যান্ড

দীর্ঘ লীগ পর্ব শেষে বিশ্বকাপ ক্রিকেট এখন সেমিফাইনাল ও ফাইনালের রোমাঞ্চ দেখার অপেক্ষায় রয়েছে। আগেই নিশ্চিত হয়েছে শেষ চারে কারা খেলবে, তার লাইনআপ।  

৯ ম্যাচের ৫টিতে জয় এবং ১ ম্যাচ পরিত্যক্ত ম্যাচের সুবাদে ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ দল হিসেবে সেমিফাইনালে পৌঁছেছে নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তান সমান ১১ পয়েন্ট পেলে রানরেটের কারণে তারা শেষ চারে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারেনি। 

মঙ্গলবার (৯ জুন) ভারতের বিপক্ষে ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড। লীগ পর্বে ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় এবারের বিশ্বকাপের হেড টু হেডের বিচারে কাউকেই এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না। যদিও সেমিফাইনাল ম্যাচের জন্য রিজার্ভ-ডে বরাদ্দ রাখা আছে।

এবারের আসরসহ সর্বাধিক ৭ বার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার রেকর্ড ব্ল্যাক ক্যাপসদের দখলে রয়েছে। আগের ১১ আসরে তাদের সফলতার ধারাবাহিকতা চোখে পড়ার মতো। যদিও এবার তারা অনেকটাই সৌভাগ্যের ছোঁয়া পেয়ে সেমির পথে উঠেছে।

তবে অতীতের আসরগুলোর মতো দারুণভাবে এগিয়ে গিয়ে শেষের দিকে রণে ভঙ্গ দিয়ে বসা নিউজিল্যান্ডের এবারের বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে এগিয়ে যাওয়ার পথ পরিক্রমা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে, তারা অবিশ্বাস্য রকমের সৌভাগ্য বহন করে এগিয়ে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করেছিল। 

সবার আগে নিউজিল্যান্ড যাদের বিপক্ষে তাদের সৌভাগ্যের মুখ দেখা শুরু করেছে সেই দলটি হলো বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করা টাইগাররা ২৪৪ রানের বেশি তুলতে না পারলেও বল হাতে তারা জ্বলে উঠলে ম্যাচ জমতে শুরু করে। যদিও টাইগারদের শেষ রক্ষা হয়নি। মূলত ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রস টেলরের সহজ রান আউট মুশফিকুর রহিম মিস করাতেই মূলত জয় হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। 

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তো ভাগ্যদেবী নিউজিল্যান্ডের জন্য রীতিমতো সৌভাগ্যের মালা পরানোর জন্য নিজেই বসেছিলেন! ইমরান তাহিরের এক ওভারে কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটে বল নিশ্চিত লাগলেও রিভিউ না নেয়া ও ডেভিড মিলারের জোড়া ক্যাচ মিস করা, সবমিলিয়ে প্রোটিয়াদের নিজেদের চোকার প্রমাণের দিনে মাত্র ৩ বল বাকি থাকতে কিউইদের ৪ উইকেটের জয় পাওয়াকে সৌভাগ্য ছাড়া আর কিছুই নয়। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৯১ রান করার পর নিউজিল্যান্ডের সহজ জয় তো হাত থেকে বের করেই নিয়ে যাচ্ছিলেন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। ক্যারিবীয়দের জয়ের জন্য যখন দরকার ৭ বলে ৬ রান, তখনই ১০১ রানের ইনিংস খেলা ব্র্যাথওয়েট ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে বাউন্ডারি লাইনের একদম কাছে ট্রেন্ট বোল্টের হাতে ধরা পড়াতেই আরেকটি সৌভাগ্যের জয় পায় কেন উইলিয়ামসনের দল। 

এবারের বিশ্বকাপে কিউইদের ব্যাটিং লাইনআপ ধারাবাহিকভাবে ঠিকঠাক জ্বলে উঠছে না। বিশেষ করে টপ অর্ডারকে বেশ ভঙ্গুর দেখাচ্ছে। ব্যতিক্রম শুধু অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। গড় রানের হিসাবে এখনো এগিয়ে রয়েছেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক। ৯৬.২০ গড়ে ৮ ম্যাচে ৭ ইনিংসে তার সংগ্রহ ৪৮১ রান। 

বল হাতে ব্ল্যাক ক্যাপসদের হয়ে বেশ সফল পেসার লুকি ফার্গুসন এবং ট্রেন্ট বোল্ট। চলতি আসরে তারা যথাক্রমে তুলে নিয়েছেন ১৭ এবং ১৫ উইকেট। এছাড়া জেমি নিশাম ১১ এবং ম্যাট হেনরি পেয়েছেন ১১ উইকেট। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, কিউইদের পেস আক্রমণের বিপক্ষে টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে।

যদিও সেমিফাইনালে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে নিজেদের ‘আন্ডারডগ’ মেনেই চাপমুক্ত হয়ে উপভোগের মন্ত্র নিয়েই খেলতে নামবে নিউজিল্যান্ড। পেসার লুকি ফার্গুসনের মতে, নির্দিষ্ট দিনে যারা ভালো খেলবে তারাই ফাইনালে পৌঁছাবে।

টুর্নামেন্টে যাত্রা :

প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ১৩৬ রান অলআউট করে দেয়ার পর তাদের ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপে দারুণ শুরু পায় নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৪৫ রানের মাঝারি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও হারতে বসেছিল কিউইরা। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ৮২ রান করে ম্যাচ সেরা হওয়া রস টেলরের সহজ রান আউট মুশফিক করতে না পারাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যায়। 

তৃতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানকে ১৭২ রানে গুটিয়ে দিয়ে ১০৭ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে সহজ জয় পায় কেম উইলিয়ামসনের দল। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে গেলে ব্ল্যাক ক্যাপসরা ১ পয়েন্ট লাভ করে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড জিতে যায় প্রতিপক্ষের বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে। বৃষ্টির কারণে ৪৯ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে প্রোটিয়ারা ৭ উইকেটে ২৪১ রান করে। জবাবে নিউজিল্যান্ড কেন উইলিয়ামসনের অপরাজিত ১০৬ রানের ইনিংসে ভর করে ৩ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটের নাটকীয় জয় পায়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জেতা ম্যাচ তো কিউইরা হারতেই বসেছিল। আগে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড করে ৮ উইকেটে ২৯১ রান। কার্লোস ব্র্যাথওয়েট সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ক্যারিবীয়দের অবিশ্বাস্য জয়ের দিকে নিয়ে জোয়ার পূর্ব মুহূর্তে ৫ রানের রুদ্ধশ্বাস জয় পায় নিউজিল্যান্ড। ১০১ রানের ইনিংস খেলা ব্র্যাথওয়েট ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে বাউন্ডারি লাইনের একদম কাছে ট্রেন্ট বোল্টের হাতে ধরা পড়াতেই আরেকটি সৌভাগ্যের জয় পায় কেন উইলিয়ামসনের দল। 

আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম হারের মুখ দেখে গ্যারি স্টেডের শিষ্যরা। আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২৩৭ রান কিউইরা করলেও পাকিস্তান ৫ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেউ।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বোলিংয়ে জ্বলে উঠেছিল ব্ল্যাক ক্যাপসরা। ট্রেন্ট বোল্ট করেছিলেন হ্যাটট্রিক। ৯ উইকেটে ২৪৩ রান করার পর অজিরা বল হাতে আরও ভয়ানক হয়ে ওঠে। ফলাফল, নিউজিল্যান্ড ১৫৭ রানে অলআউট হয়ে ৮৬ রানের বড় হারের মুখ দেখে। 

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একেবারেই দাঁড়াতে পারেনি গতবারের ফাইনালিস্টরা। আগে ব্যাট করা ইংলিশরা ৮ উইকেটে ৩০৫ রান করার পর কিউইরা ৫ ওভার বাকি থাকতেই ১৮৬ রানে অলআউট হলে ১১৯ রানে হারের লজ্জায় পড়ে। 

আরআইএস
 

আরও সংবাদ