গত শীত মৌসুমে অস্ট্রেলীয় সংসদ সদস্যদের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলার সময় ব্রিটেনের সংসদ সদস্য ক্রিস হিটন-হ্যারিসের মস্তিষ্ক থেকে আসল অভিনব এক ধারণা। নিজ দেশে আয়োজিত বিশ্বকাপে অংশ নেয়া দলগুলোর পাশাপাশি সেই দেশের সংসদের আইনপ্রণেতাদের নিয়ে আরও একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে কেমন? যেই ভাবা সেই কাজ, দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় আয়োজন করা হবে আন্তঃসংসদীয় (ইন্টার-পার্লামেন্টারি) বিশ্বকাপ ক্রিকেট।
আজ মঙ্গলবার (০৯ জুলাই) থেকে শুরু হচ্ছে বিশেষ সেই বিশ্বকাপ। স্বাগতিক ইংল্যান্ডসহ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তানের সংসদ সদস্যরা ছাড়াও ‘অল-স্টার’ নামক এক দলের মধ্যে চলবে এই প্রতিযোগিতা। আসল বিশ্বকাপের মতো এ বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোও হবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে।
আন্তঃসংসদীয় বিশ্বকাপের প্রথম দিনে অবশ্য প্রতিযোগিতামূলক কোনো ম্যাচ হবে না। স্বাগতিক ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান ও ভারত নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। আর মূল লড়াই শুরু হবে আগামীকাল বুধবার থেকে। দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে মোট ৮টি দল লড়বে সেমিফাইনালে পাড়ি জমাতে। আর শেষ চার থেকে দু'দল যাবে ফাইনালে।
টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই লন্ডন পৌঁছেছে এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের নেতৃত্বাধীন ১৭ সদস্যের বাংলাদেশ দল। দুর্জয় ছাড়াও একঝাক তরুণ সাংসদদের দেখা যাবে এ টুর্নামেন্ট খেলতে। যার মধ্যে রয়েছেন, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য জুনায়েদ আহমেদ পলক, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নাহিম রাজ্জাক, আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, জুয়েল আরেং, আয়েন উদ্দিন, রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, শামীম হায়দার পাটোয়ারীসহ আরও অনেকে। তারা সবাই লন্ডনে গিয়ে মাঠে অনুশীলনও করেছেন। আর দলের সঙ্গে টেকনিক্যাল সদস্য হিসেবে রয়েছেন কোচ দিপু রায় চৌধুরীসহ চারজন।
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তো ইংল্যান্ডে পড়াশোনার সময় মাঠে নিয়মিতই খেলতেন। জুয়েল আরেং একসময় ক্রিকেট ও ফুটবল খেলেছেন। মাঠের নেটে অনুশীলনে নাহিম রাজ্জাক ভালো ব্যাটিং করছেন। আর শেখ তন্ময়ের মতো তরুণ সংসদ সদস্য ব্যাট-বল হাতে যেকোনো সময় মাঠে নেমে পড়ার জন্য ফিট। ফলে এই দলটিকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়া যেতেই পারে।
এই টুর্নামেন্টে ভারতের হয়ে খেলবেন শচীন টেন্ডুলকার ও সিধু। শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলবেন অর্জুনা রানাতুঙ্গার মতো বিশ্বকাপ জয়ী তারকা। ফলে ভালো করতে হলে জোর প্রস্তুতির বিকল্প নেই, এটা ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন সংশ্লিষ্টরা। টুর্নামেন্টটিকে মর্যাদার লড়াই হিসেবেই দেখছেন তারা। মূল বিশ্বকাপের পাশাপাশি তাই এবার আগ্রহ ও উন্মাদনায় বাড়তি মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে সংসদ সদস্যদের বিশ্বকাপ।
এদিকে সব ঠিকঠাক থাকলে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকেও দেখা যাবে এ টুর্নামেন্টে। টাইগারদের অধিনায়ক হওয়ার পাশাপাশি নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্যও তিনি। ব্যর্থ বিশ্বকাপ শেষে দলের সঙ্গে তিনি দেশে ফিরলেও ফের এই টুর্নামেন্ট ধরতে দ্রুতই ইংল্যান্ড পাড়ি দেয়ার কথা আছে মাশরাফীর।
মাশরাফী ছাড়াও বিশ্বের আরও বেশ কয়েকজন বড় তারকাকে দেখা যেতে পারে এই টুর্নামেন্টে। ক্রিস হিটন-হ্যারিস জানিয়েছেন, পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খানেরও খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও এবার বিজেপির হয়ে নির্বাচন করে জয়ী ভারতের সাবেক ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীরও ভারতের হয়ে খেলতে পারেন এই টুর্নামেন্টে।
উল্লেখ্য, ১২ জুলাই আন্তঃ সংসদীয় ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষ হলে এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যরা ১৪ জুলাই ব্রিটেনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে'র সঙ্গে বসে বিশ্বকাপ ফাইনাল উপভোগ করারও সুযোগ পাবেন।
গ্রুপ পর্ব :
গ্রুপ ‘এ’ তে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের পাশাপাশি রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও শ্রীলঙ্কা। আর গ্রুপ ‘বি’তে বাংলাদেশের তিন প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। এ দুই গ্রুপের প্রত্যেকটি দল তাদের গ্রুপের বাকি দলগুলোর সঙ্গে একটি করে ম্যাচ খেলবে শেষ চারের টিকেট নিশ্চিত করতে। গ্রুপের সেরা দুটি দল পাবে সেমির টিকেট।
টুর্নামেন্টের সূচি :
৯ জুলাই - ওয়ার্ম আপ ম্যাচ
১০ জুলাই - গ্রুপ পর্বের ম্যাচ
১১ জুলাই গ্রুপ পর্বের ম্যাচ
১২ জুলাই- সেমিফাইনাল ও ফাইনাল
টুর্নামেন্টের নিয়ম :
গ্রুপ পর্বের প্রত্যেকটি ম্যাচে হবে ১৫ ওভারের খেলা। তবে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ হবে ২০ ওভারের।
কেন এই টুর্নামেন্ট :
রয়টার্সকে সম্প্রতি হিটন-হ্যারিস জানিয়েছেন, বিশ্বকাপে অংশ নেয়া দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মানুষকে বিনোদিত করার সুযোগ দারুণ এক মাধ্যম ক্রিকেট। এটি দেখতে দেখতে অনেক সময় একসঙ্গে সময় কাটানো যায়। ক্রিকেটের সুবাদে মানুষ একে অপরের কাছাকাছি আসতে পারে। এতে করে একজনের প্রতি অপরজনের ভালোবাসা বাড়ে, উন্নতি হয় সম্পর্কের।’
এসএইচএস/আরআই/আরআইএস