দিনশেষে ক্রিকেট আসলে বড়ই নিষ্ঠুর। আর গতকাল ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে সেই নিষ্ঠুরতার বাণে জর্জরিত হয়েছে নিউজিল্যান্ড। স্বাগতিক ইংল্যান্ডের সঙ্গে কিউইদের ফাইনাল ম্যাচ তো টাই হয়েছেই, ভাগ্য নির্ধারণী সুপার ওভারটাও শেষ হয়েছে সমতায়। শেষ পর্যন্ত সুপার ওভারে বাউন্ডারিতে আসা রান সংখ্যার অদ্ভুত এক হিসাবে শিরোপা বঞ্চিত হয়েছে কেন উইলিয়ামসনের দল।
টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনাল হারের গ্লানি নিয়ে ফিরেছে নিউজিল্যান্ড, তবে রেখে গেছে স্পোর্টসম্যানশিপের অনন্য এক নজির; যা শুধু ক্রিকেট কেন, যেকোনো খেলার যেকোনো খেলোয়াড়ের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে ইতিহাসে।
ঘটনাটি ঘটেছিল ইংল্যান্ডের ইনিংসের শেষ ওভারের চতুর্থ বলে। ৩ বল থেকে তখন ইংলিশদের প্রয়োজন ৯ রান। নখ-কামড়ানো এক লড়াইয়ের এক প্রান্তে কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট, অন্য প্রান্তে ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস। বোল্টের করা ওভারের চার নম্বর বলটি ডিপ মিড উইকেটের দিকে শাফল করে দিয়েই দুই রানের জন্য ছুটলেন স্টোকস। ফিল্ডিং করে বলটা উইকেটরক্ষকের প্রান্তে থ্রো করলেন মার্টিন গাপটিল। তখনই রান আউট থেকে নিজেকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্টোকস। গাপটিলের থ্রোতে বল এসে লাগে স্টোকসের ব্যাটে, গড়িয়ে গড়িয়ে সোজা চলে যায় বাউন্ডারির ওপারে। নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডাররা কিছু বুঝে ওঠার আগেই সমীকরণ নেমে আসে ২ বলে ৩ রানে।
এমন পরিস্থিতিতে অন্য যেকোনো অধিনায়ক কিংবা দল এই ব্যাপারটি সহজে মেনে নিতে পারতো কি না, সন্দেহ রয়েছে। যে কেউই এই ঘটনাকে 'ইস্যু' বানিয়ে বেঁকে বসলে করার কিছুই থাকতো না। তবে উইলিয়ামসন সেই 'যে কেউ' নন। তিনি আলাদা, স্পোর্টসম্যানশিপের এক মূর্ত প্রতীক। মাঠের বাস্তবতা, নিজেদের দুর্ভাগ্যকে তিনি মেনে নিতে জানেন। কোনো টুঁ শব্দ না করে তিনি আবার ফিল্ডিং সাজাতে লেগে গিয়েছেন।
এতেও যদি উইলিয়ামসনের স্পোর্টসম্যানশিপ প্রমাণিত না হয়, তাহলে তাকান ম্যাচের ফলাফলের দিকে। সুপার ওভার পর্যন্ত টাই হয়েছে দুই দলের লড়াই। শেষ পর্যন্ত বাউন্ডারি সংখ্যার হিসেবে এগিয়ে থাকার নিয়মে ট্রফি জিতেছে ইংলিশরা। এমন ফলাফলের পরও উইলিয়ামসন কেন, নিউজিল্যান্ডের কোনো ক্রিকেটারের মধ্যেই ছিল না কোনো ক্ষোভ।
ধন্যবাদ নিউজিল্যান্ড, ক্রিকেটের সৌন্দর্যটা সবার সামনে তুলে ধরার জন্য!
এমএইচএস/আরআইএস