জন্মস্থান ঘোড়াশালেই চিরশায়িত হবেন শামিম কবির 

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০১৯, ০৬:০৭ পিএম জন্মস্থান ঘোড়াশালেই চিরশায়িত হবেন শামিম কবির 
শামিম কবির - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক আনোয়ারুল কবির শামিম (শামিম কবির) আর নেই। সোমবার সকালে ধানমন্ডির ইডেন ক্লিনিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কৃতি ক্রীড়াবিদ। অনেক দিন থেকেই নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে দুই ছেলে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

শামিম কবির ১৯৪৩ সালের ৩ মার্চ নরসিংদীর ঘোড়াশালে সম্ভ্রান্ত কবির পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সেই ঘোড়াশালেই চিরশায়িত হবেন তিনি। শামিম কবিরের আমেরিকা প্রবাসী ছেলে আগামী বুধবার ঢাকায় আসবেন। 

বৃহস্পতিবার ১ আগস্ট দুপুর ১১টায় মিরপুরে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শামিম কবিরের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বাদ যোহর গুলশান আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জানাজা। এরপর গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর ঘোড়াশালে নিয়ে যাওয়া হবে তাকে।

এদিকে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে শামিম কবিরের সম্মানার্থে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কালো আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামবেন। 

বাল্যকাল থেকেই ক্রীড়ার প্রতি ঝোক ছিল শামিম কবিরের। স্কুলে থাকতেই আজাদ বয়েজের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে ক্রিকেট ছাড়াও আরো অনেক ডিসিপ্লিনে খেলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদান স্বরুপ ‘ব্লু’ পান তিনি।

তদানিন্তন পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তান প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে আজাদ বয়েজ কয়েকবারের চ্যাম্পিয়ন দল। তার নেতৃত্বেই সৈয়দ আশরাফুল হক, তানভীর মাজহারুল ইসলাম তান্না, কাজী সালাউদ্দিনের মতো ক্রীড়াবিদরা আজাদ বয়েজে খেলেছেন।

তিনি প্রথম বাঙালি ক্রিকেটার যিনি পাকিস্তান দলে খেলেছেন। পাকিস্তান অ-২৫ দলে বিখ্যাত ক্রিকেটার আসিফ ইকবালের অধিনায়কত্বে খেলার কৃত্তিত্ব রয়েছে তার। পূর্ব পাকিস্তান, পূর্ব জোন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৬১-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি ১৫ টি ফাস্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেন।

১৯৭৭ সালে ঢাকায় এমসিসি দল এসেছিল। সেই দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে অধিনায়কত্ব করেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক শামিম কবির। বাংলাদেশের ক্রিকেট যতদিন থাকবে শামিম কবিরও ততদিন ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন।

বাংলাদেশ জাতীয় দল প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ খেলে ১৯৭৭ সালের ৭ জানুয়ারি। তিনদিনের একটি ম্যাচ খেলা হয় ইংল্যান্ডের এমসিসি’র বিপক্ষে। তৎকালীন সময়ে ঢাকা স্টেডিয়ামে (এখন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) সে ম্যাচটিই ছিল বিদেশি কোনো দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের প্রথম ম্যাচ। আর তাতে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করেন শামিম কবির। ওই ম্যাচটি মূলত আয়োজিত হয় বাংলাদেশের সামর্থ্য যাচাইয়ের জন্য। সেই ম্যাচের ভিত্তিতেই বাংলাদেশের ক্রিকেট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এগিয়েছে।

অবসর নেয়ার পরেও ক্রিকেটের সাথেই ছিলেন। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দু’বারের (১৯৮২ ও ’৮৬) ম্যানেজার ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ক্রিকেট বোর্ডের নানা দায়িত্বে ছিলেন। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৯ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পান। এছাড়াও ক্রীড়াঙ্গন ও গণমাধ্যমের অনেক সংস্থার নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।

শনিবার ক্রিকেট বোর্ডের সভায় শামিম কবিরের যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় বোর্ড বহন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এর দু’ দিনের মধ্যেই তিনি চিরবিদায় নিলেন। এদিকে তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া নেমেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিশেয়নের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াব, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনসহ ক্রীড়াঙ্গনের নানা সংস্থা তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে।

শামিম কবির শুধু কৃতি ক্রীড়াবিদই নন সফল ব্যবসায়ীও। এ.কবির লিমিটেডের অন্যতম ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। পাকিস্তান আমল থেকে সর্বোচ্চ চা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এ.কবির লিমিটেডের পেছনে তার অবদান ছিল। আইএফআইসিসি ব্যাংকের পরিচালকও ছিলেন। দেশের প্রাচীন পত্রিকা দৈনিক সংবাদেরও শেয়ারহোল্ডার ছিলেন তিনি। 

এসএইচএস 

আরও সংবাদ