শ্রীলঙ্কার দুঃসময়ের ত্রাতা করুনারাত্নে 

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০১৯, ০৯:৫০ পিএম শ্রীলঙ্কার দুঃসময়ের ত্রাতা করুনারাত্নে 
দিমুথ করুনারাত্নেকে দলপতির ভার সঁপে দেয়া যে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না, তার প্রমাণ তিনি সকলকে দেখিয়ে দিচ্ছেন। ফটো : আইসিসি

চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যানবেরা টেস্টের দ্বিতীয় দিনে প্যাট কামিন্সের বাউন্সারে কাঁধে আঘাত পেয়ে আহত হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন দিমুথ করুনারাত্নে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। তার পরিণতি ফিলিপ হিউজের মতো হয় কি না- সবার মনেই এমন শঙ্কা জেগেছিল। যদিও পরে তিনি আবারো সুস্থ হয়ে ক্রিকেটে ফিরে আসতে পেরেছেন।

অস্ট্রেলিয়া সফর শেষের পরপরই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আকস্মিকভাবে দিমুথ করুনারাত্নেকে অধিনায়কত্ব দিয়ে বসে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড (এসএলসি)। আর তাতেই বাজিমাত। করুনারাত্নের নেতৃত্বে এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাটিতে টেস্ট সিরিজ হারানো এবং হোয়াইটওয়াশ করে নতুন ইতিহাস গড়ে ফেলে লঙ্কানরা।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে ভারত টেস্ট সিরিজ জিতলেও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এখনো তাদের সিরিজ জয় অধরাই রয়েছে। প্রোটিয়াদের ঘরে সাতবার সিরিজ খেলতে যাওয়া ভারত হেরেছে ৬টিতে এবং ড্র করেছে একটিতে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬ বার সফরে যাওয়া পাকিস্তান হেরেছে ৫টিতে এবং ড্র করেছে একটিতে। তিনবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়া বাংলাদেশ সবকটি সিরিজেই হেরেছে।  

এবার জেনে নেয়া যাক চলতি বছর ১৮ এপ্রিলের ঘটনা। এদিন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যর দল ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। দীর্ঘ চার বছর পর ওয়ানডে দলে ফিরেই এই ফরম্যাটেও অধিনায়কত্ব পেয়ে যান করুনারাত্নে, যা নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। 

বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা বিন্দুমাত্র ভালো করবে না এমন চিন্তা তাদের দেশের সমর্থকরাই ভাবছিলেন। কিন্তু বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়ে সমীকরণে নাটকীয় এক পরিস্থিতি তৈরি করে বসে ১৯৯৬ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। করুনারাত্নের ছোঁয়ায় যেন ভাগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত তারা পেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালে যেতে না পারলেও দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে পয়েন্ট টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে থেকে তারা বিশ্বকাপ মিশন শেষ করেছিল, যা অনেকে ভাবতেই পারেনি।

সাঙ্গাকারা-জয়বর্ধনের মতো কিংবদন্তিরা অবসরে যাওয়ার পর লঙ্কান ক্রিকেট যখন তাদের জৌলুশ হারাতে বসেছে, নিচের সারির দলগুলোর কাছেও নাকানিচুবানি খাচ্ছে, বিদেশের মাটিতে তাদের অসহায় আত্নসমর্পণ সবাই দেখছে-  এমন দুঃসময়ে যেন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন দিমুথ করুনারাত্নে। 

তাকে দলপতির ভার সঁপে দেয়া যে বোর্ডের কোনো ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না, তার প্রমাণ তিনি প্রতিনিয়ত চোখে আঙুল দিয়ে সকলকে দেখিয়ে দিচ্ছেন। নিজের ব্যাটিংয়েও আগের চেয়ে ধার বাড়িয়েছেন অনেকাংশে, যার ফলশ্রুতিতে দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেয়াটা তার জন্য সহজ হয়েছে। 

হঠাৎ দলের করে এমন আমূল-পরিবর্তনের কারণ জানতে গিয়ে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নিরোশান ডিকওয়েলা জানান, দিমুথ একজন ইতিবাচক মানসিকতার মানুষ। সে ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিজের ভাইয়ের মতো মিশে যায়। পারফর্ম করার উদ্দীপনা যোগাতে তার জুড়ি মেলা ভার। সে সব ধরনের সমালোচনাকে ইতিবাচকরূপে নেয়, যেটা তার অধিনায়কত্বের একটি প্রধান এবং বিশেষ গুণ।

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও তার অধিনায়কত্ব সকলের মনে ধরেছে। আর সর্বশেষ ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে একদিনের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করাটা রঙিন পোশাকে তার অধিনায়কত্বের সুনামটা আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয় দিয়ে শুরু করেছে। পরের টেস্টে হেরে গেলেও সিরিজ ড্র করতে সক্ষম হয়েছে। তাই আশা করাই যায়, লঙ্কান ক্রিকেট আকাশের অন্ধকার দ্রতই করুনারাত্নের দেখানো পথ ধরে আলোর ঝলকানিতে পরিণত হতে চলেছে।

আরআইএস 

আরও সংবাদ