দিল্লির বাতাসে দূষণের মাত্রা ছাড়িয়েছে বিপদ সীমা, তাতে থেমে থাকেনি ম্যাচ। তেমনি থামানো যায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জেদের বিষ্ফোরণও। আরও একবার দৌঁড়গোড়ায় গিয়ে থেমে যায়নি টাইগারদের ভারত বধের স্বপ্নও। দোর্দণ্ড প্রতাপ আর দাপট দেখিয়ে টি-টুয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারিয়ে দিলো বাংলাদেশ।
বল হাতে আমিনুল-আফিফরা দেখালেন তারুণ্যের ঝিলিক। ব্যাট হাতে মুশফিক-সৌম্যরা দেখালেন অভিজ্ঞতার মূল্য। তাতেই ভেঙে গেল চীনের প্রাচীরসম শক্ত হয়ে ওঠা ভারতকে না হারাতে পারার দুঃখ। গত কয়েক বছরে যে তা সম্ভব হয়ে ওঠছিল না কিছুতেই। যেখানে বুক চিতিয়ে লড়লেন এগারো জন, বলা বাহুল্য এগারো টাইগার।
তিন ম্যাচ টি-টুয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ব্যাটিংয়ে নেমে শফিউলের করা প্রথম ওভারের একেবারে প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
কিন্তু ওভারের একেবারে শেষ বলেই অফ সুইং বল আঘাত হানে রোহিতের পাঁয়ে। আম্পায়ারও আঙ্গুল তুলে দিতে দেরি করেননি, পরে রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ভারতীয় অধিনায়ক।
ভারতীয় ইনিংসের দ্বিতীয় আঘাতটা হানেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। অভিষেকটা হয়েছিল ঠিক আগের ম্যাচেই। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে নেমে যেন ভালোভাবেই নিজের জাতটা চেনালেন এই লেগ স্পিনার। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারই পেসার দিয়ে করিয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সপ্তম ওভারেই নিয়ে আসেন তরুণ লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে ভুল করেননি এই স্পিনারও।
প্রথম বল ডট দেয়ার পর দ্বিতীয় বলে এক রান নেন শিখর ধাওয়ান। স্ট্রাইকে এসেই অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে টার্ন করা বল শর্ট কাভারে দাঁড়িয়ে থাকা রিয়াদের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ব্যক্তিগত ১৭ বলে ১৫ রান করে সাজঘরে ফেরত যান লোকেশ রাহুল।
এরপর ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারে এসে ৯ রান দেন এই তরুণ লেগ স্পিনার। তৃতীয় ওভারেই আবার স্বরূপে ফেরেন আমিনুল। দলীয় ১১ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাকে লং-অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে যান শ্রেয়াস আয়ার। তবে তিনি ধরা পড়েন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা নাইম শেখের হাতে।
তারপর রান আউট হয়ে ৪২ বলে ৪১ রান করে সাজঘরে ফেরত যান উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান। শিভব দুবেকে ১ রানে আউট করেন আফিফ হোসেন। নিজের বলে নিজেই দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট ২০ ওভার খেলে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৮ রান করে ভারত। বাংলাদেশের পক্ষে শফিউল ও আমিনুল ২টি এবং আফিফ পান একটি করে উইকেট।
জবাব দিতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ব্যক্তিগত ৭ রানে লোকেশ রাহুলের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন লিটন দাস। এরপর শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন অভিষিক্ত নাইম শেখ ও সৌম্য সরকার। ৪৬ রানের জুটি গড়েন এই দু'জন। ২ চার ও ১ ছয়ে ২৮ বলে ২৬ রান করে চাহালের বলে নাইম সাজঘরে ফেরত গেলেও আরেক প্রান্তে টিকে থাকেন সৌম্য।
মুশফিককে নিয়ে দলকে জয়ের পথে রাখেন তিনি। দলীয় ১১৪ রানে ৩৫ বল থেকে ৩৯ রান করে সৌম্য আউট হলেও অধিনায়ক রিয়াদকে নিয়ে দলকে জয়ের নোঙরে ভেড়ান মুশফিক। ৮ চার ও ১ ছয়ে ৪৩ বলে ৬০ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন তিনি।
ইনিংস শেষের তিন বল আগে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন রিয়াদ। বলটা যখন সীমানার ওপাড়ে গিয়ে মাটিতে আঁচড়ে পড়ে, সে সময় অনেক কিছুর প্রায়শ্চিত্ত হয়। রিয়াদের অনেক চাপা ক্ষোভ তাতে মিশে থাকে। বিন্দু বিন্দু করে গড়ে ওঠা মনের আক্রোশ জমা পড়ে সাবেক ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামের বাউন্ডারি লাইনের ওপারে। সঙ্গে তো পুরো বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষেরও।
এমএইচবি/আরআইএস