মাথায় আঘাত লাগলে ক্রিকেটারদের যেসব প্রশ্ন করা হয়

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০১৯, ০৬:২৫ পিএম মাথায় আঘাত লাগলে ক্রিকেটারদের যেসব প্রশ্ন করা হয়
ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়ছেন লিটন দাস। ছবি : সংগৃহীত

'আমরা কোন শহরে আছি', 'দিনের কোন সময় এখন চলছে', শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এই ধরণের প্রশ্নই করা হয় মাথায় আঘাতজনিত চিকিৎসার খাতিরে। ক্রিকেটের মাঠে মাথায় বল লাগার পর ব্যাটসম্যান খেলা চালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় আছেন কি না সেটা যাচাই করতেই এসব প্রশ্ন করা হয়। মাথা স্বাভাবিকভাবেই শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের একটি, যেখানে কোনো ধরণের আঘাত বেশ প্রভাব ফেলে শরীরে ও মনে। কখনো কখনো বাহির থেকে আঘাতের তীব্রতা বোঝা যায় না, কিন্তু এটা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে।

২০১৪ সালের ২৭শে নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ফিলিপ হিউজ মারা যান, যার দুইদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটের একটা খেলায় মাথায় বল লাগার পর লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। ক্রিকেট বিশ্বে এই ঘটনা বেশ আলোড়ন ফেলে। যার ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল মাথায় বল লাগার ক্ষেত্রে নানা ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়, যার মধ্যে অন্যতম বদলি ক্রিকেটার মাঠে নামানো।

সাম্প্রতিক ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার কলকাতা টেস্টে মাথায় বল লাগার পর একজন নয়, দুজন বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে বদলি করা হয়। ক্রিকেটে যা একটি বিরল ঘটনা। একে ক্রিকেটে 'কনকাশন বদলি' বলে, কনকাশনের আভিধানিক অর্থ হলো প্রচন্ড ধাক্কা। ক্রিকেটে বলের ভর সাধারণত ১৫৬ থেকে ১৬৩ গ্রাম হয়ে থাকে, যা ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে মাথায় লাগলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। বল যদি সরাসরি মাথায় আঘাত হানে, বিশেষত ফাস্ট বোলারদের বল সেটা মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলার সামর্থ্য রাখে। যে কারণে ক্রিকেট মাঠেই মাথায় বল লাগার পর যতটা দ্রুত সম্ভব ফিজিও দৌঁড়ে মাঠে আসেন এবং ক্রিকেটারকে যাবতীয় পরীক্ষা ও প্রশ্ন করেন।

প্রশ্নগুলো হয়ে থাকে এমন:
আমরা কোন শহরে আছি।
দিনের কোন সেশনের খেলা চলছে।
এই মুহূর্তে বোলিংয়ে কোন দুজন বোলার আছেন।
এছাড়া দূরবর্তী সাইনবোর্ডের লেখাও পড়তে বলা হয় ক্রিকেটারদের।
মাথায় আঘাত কেন এতোটা গুরুত্ব পাচ্ছে

কনকাশন বা মাথায় যেই আঘাত পায় ক্রিকেটারররা সেটা শরীরের অন্যান্য প্রতঙ্গের আঘাত নির্ণয়ের মতো সোজাসাপটা নয়। অনেক সময় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয় না, কিন্তু মস্তিষ্কের যে স্বাভাবিক কাজ সেখানে এটা প্রভাব ফেলার সামর্থ্য রাখে।

যেটা ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই একজন ক্রিকেটার যার মাথায় আঘাত লেগেছে, তাকে তৎক্ষণাত একটি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয় যা বল লাগার পর ক্রিকেটারের মানসিক অবস্থার সম্পর্কে ধারণা দেয়। কিন্তু কখনো কখনো ক্রিকেটাররা বাড়তি সাহস দেখান ও মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নেন, সেটা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল এখন বেশ কড়া একটি অবস্থান নিয়েছে।

যেখানে লক্ষণ বা অসুস্থতার কোনো চিহ্ন তেমন দৃশ্যমান নয় সেখানে ক্রিকেটারদের মাঠ থেকে বের করতে রাজি করানো কখনো কখনো কঠিন হয়ে পড়ে। আন্তর্জাতকি ক্রিকেট কাউন্সিল বলছে, ক্রিকেট যেহেতু ১১ জনের খেলা অনেক খেলোয়াড় চাইবেন না তার দল ১০ জনের হয়ে যাক। সেজন্যই ক্রিকেটে এসেছে 'বদলি' ক্রিকেটারের নিয়ম।

মাথায় বল লাগলে যা যা হতে পারে:
বমি বমি ভাব
মাথা ঘোরানো
ঝাপসা দেখা
অসংলগ্ন লাগা
ভারসাম্য রাখতে না পারা
দ্বিধা
কখনো কখনো সাময়িক স্মৃতিভ্রমও হতে পারে।

মাথায় বল লাগার পর খেলেছেন হাশিম আমলা ও স্টিভ স্মিথ:
২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার হাশিম আমলা ও এই বছরেই অ্যাশেজ সিরিজে স্টিভ স্মিথ মাথায় বল লাগার পরও খেলা চালিয়ে যান। কিন্তু পরবর্তীতে তারা কনকাশনের যেসব লক্ষণ সেগুলো অনুভব করেছেন। এক্ষেত্রে চোট আরো গভীর হয়ে চিকিৎসা জটিলতর হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। আইসিসি বলছে, বল লাগার অন্তত ৪৮ ঘন্টা পর বোঝা যাবে যে এটা সেরেছে কি না।

আন্তজাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের মুখপাত্র এক্ষেত্রে বলেন, "বিভিন্ন প্রটোকল মেনে চলা হয়, আঘাতের ক্ষেত্রে। এর মধ্যে একটা হেলমেট, আপনারা দেখবেন রাগবি আরো বেশি সংঘর্ষময় একটা খেলা বটে কিন্তু সেখানে প্রটোকল কম মানা হয়, এটা নির্ভর করে একজন খেলোয়াড় আঘাত পাবেনই, এটা ধরে নিয়েই খেলছেন কি না।"

সূত্র : বিবিসি

এমএইচবি

 

আরও সংবাদ