উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনের অমানবিক নির্যাতনের বিষয়ে তুর্কি বংশোদ্ভূত সাবেক জার্মান ফুটবলার মেসুত ওজিলের টুইটের ঘটনা আখ ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। ওজিলের টুইটের জেরে চীনে ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের খেলা সম্প্রচারও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ওজিলের টুইট নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় পুরো চীনজুড়ে। চীনারা তার এই মন্তব্য কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি এবং তারা ওজিলকে বয়কটের ডাক দেয়। এমনকি তারা আর্সেনালকে সমর্থন করবে না বলেও জানিয়ে দেয়।
যদিও নির্যাতিত উইঘুর মুসলিমদের পক্ষ নিয়ে সাহস করে কথা বলার কারণে মুসলিম বিশ্বে প্রশংসায় ভাসছেন মেসুত ওজিল। শুধু মুসলিম বিশ্বেই নয়, পৃথিবীর সকল শান্তিকামী মানুষই ওজিলের সমর্থনে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
বিখ্যাত লেখক জন ক্রস তার টুইটারে লিখেছেন, মেসুত ওজিল। অনেকগুলো মানুষের জন্য শক্তি এবং সাহসের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। মানুষ যদি এর আগে কী ঘটেছে সে সম্পর্কে নাও জানে, তারা এখন বিষয়টাতে নজর দেবে (ওজিলের মন্তব্যের কারণে)। একজন খেলোয়াড়কে তার জায়গা থেকে এই পরিবর্তনের জন্য ভূমিকা রাখতে দেখাটাও এক কথায় চমৎকার। #রেসপেক্ট।
বিখ্যাত ফুটবল সাংবাদিক ডেভিড অর্নস্টেইন টুইটারে লিখেছেন, মেসুত ওজিল অর্থের উপরে নৈতিকতাকে স্থান দিয়েছেন এবং তিনি জানতেন তার এই বক্তব্যে চীনারা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে। তার ফ্যান ক্লাবের ৩০ হাজার নিবন্ধিত সদস্য ইতোমধ্যে সরে দাঁড়িয়েছেন। ইন্টারনেট দুনিয়ায় তার নামকে ধুয়ে ফেলা হচ্ছে। প্রিমিয়ার লীগ কর্তৃপক্ষ ইতোঁমধ্যেই আর্সেনালকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি লিখেছে। হয় পক্ষে দাঁড়াবে, নয়তো বিপক্ষে।
গত ১৩ ডিসেম্বর নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে সেই হতাশা ও ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেছেন ওজিল। টুইটারে পূর্ব তুর্কিস্তানকে মুসলিম উম্মাহর ‘রক্তের মিনার’ আখ্যা দিয়েছেন এই আর্সেনাল সুপারস্টার। পাশাপাশি উইঘুর মুসলিমদের ধর্ম পালন না করতে চীনের ভূমিকার তিনি কঠোর বিরোধিতা করেছেন।
ওজিল তার পোস্টে চীনের উইঘুর মুসলিমদের 'নির্যাতনের প্রতিরোধকারী যোদ্ধা' বলে প্রশংসা করেন এবং চীনের কর্তৃপক্ষ ও উইঘুরদের পক্ষ না নেয়া মুসলিমদের সমালোচনা করে লিখেছেন, পশ্চিমা গণমাধ্যমসমূহ উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনের অমানবিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরার পরও ইসলামি বিশ্ব এ নিয়ে ভাবছে না, কোনো প্রতিবাদও জানাচ্ছে না।
উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনাদের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, মুসলিম ঘর থেকে পুরুষদের সেনাছাউনিতে বন্দি করে রেখে প্রতিটি পরিবারের অন্তত একটি মেয়েকে জোরজবরদস্তি করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে একজন কমিউনিস্ট পুরুষের সঙ্গে। প্রতিটি পরিবারেই একজন কমিউনিস্ট এই মিশন বাস্তবায়ন করছে চীন সরকার।
উইঘুর মুসলিমদের জন্য দোয়া করে ওজিল লিখেছেন, হে মহান প্রতিপালক! পূর্ব তুর্কিস্তানে আমাদের উইঘুর ভাইদের সঙ্গে থাক। আল্লাহ চক্রান্তকারীদের জন্য উত্তম প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
মুসলিমবিশ্বের এই নীরবতা তাকে অবাক করছে বলে জানান জার্মানি দলের সাবেক এ ফুটবলার। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘পূর্ব তুর্কিস্তানে কোরআন আগুনে জ্বালানো হচ্ছে, মসজিদে তালা দেয়া হচ্ছে, মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, একে একে হত্যা করা হচ্ছে ওলামায়ে কেরামকে এবং যুবকদের বন্দি করে দাসত্বের জীবনের সম্মুখীন করা হচ্ছে।’
বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলি বলছে, উইঘুরে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রায় ১০ লাখ মানুষকে কোনও বিচার ছাড়াই কড়া নিরাপত্তায় বিশেষ ক্যাম্পে আটকে রেখেছে চীন।
এসকে/আরআইএস