ছোটবেলায় দাঙ্গায় পরিবার-পরিজনকে মরতে দেখেছিলেন চোখের সামনে। নিজে দৌড় দিয়েছিলেন প্রাণে বাঁচতে। সেই যে দৌড় শুরু করেছিলেন, আজীবন শুধু দৌড়েই গেছেন। জীবন তাকে হারাতে পারেনি। এবার তিনি অবশ্য জীবনের দৌড়ের ইতি টানলেন।
শুক্রবার (১৮ জুন) দিবাগত রাতে দীর্ঘদিন হাসপাতালের আইসিইউতে সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকার পর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পরিবার। গত ২০ মে কোভিডে আক্রান্ত হন। চার দিন পরে ২৪ মে মোহালির হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। ৩০ মে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। কিন্তু ৩ জুন শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় পিজিআইএমইআর-এর নেহেরু হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় মিলখাকে।
গত বৃহস্পতিবার তার কোভিড পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে। কোভিড আইসিইউ থেকে তাকে সাধারণ আইসিইউ-তে স্থনান্তরিত করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের যাবতীয় চেষ্টা ব্যর্থ করে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মাত্র পাঁচদিন আগে মিলখা সিংয়ের স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এবার যেন অন্যরকম এক ট্র্যাকে দৌড়ে নিজের স্ত্রীর কাছে পৌঁছাতেই মৃত্যুপুরীতে চলে গেলেন মহান এই অ্যাথলেট।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে ভয়াবহ দাঙ্গায় প্রাণ হারান মিলখা সিংয়ের বাবা-মা। সেদিন কোনোমতে প্রাণ নিয়ে দিল্লিতে বোনের বাড়ি পালিয়ে আসতে পেরেছিলেন মিলখা। কিশোর মিলখার চোখের সামনেই মেরে ফেলা হয় বাবা-মাকে। মারা যাওয়ার আগে শেষবার বাবা চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘ভাগ, মিলখা ভাগ।’ জীবন বাঁচাতে সেই যে দৌড় দিয়েছিলেন, শিখ যুবক এরপর একদিন দৌড়াতে দৌড়াতেই পৌঁছে গিয়েছিলেন অলিম্পিকের ট্র্যাকে। ১৯৫৮ কার্ডিফ কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতে ইতিহাস তৈরি করা মিলখা সিং হয়ে যান কিংবদন্তি।
মিলখা সিং এশিয়ান গেমসে ৪ বার সোনা জিতেছিলেন। ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকে ৪০০ মিটার স্প্রিন্টের ফাইনালে চতুর্থ হয়েছিলেন। এ ছাড়া ১৯৫৬ এবং ১৯৬৪ সালে তিনি অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৫৯ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারেও সম্মানিত করা হয়েছিল।
২০১৩ সালে মিলখা সিংয়ের জীবনী নিয়ে নির্মিত রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা পরিচালিত ভাগ মিলখা ভাগ চলচিত্রটি মুক্তি পায়। মিলখা সিংয়ের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন ফারহান আকতার।