একেই বলে দুর্ভাগ্য! নইলে দারুণ খেলতে থাকা তাওহিদ হৃদয়ের প্যাডে বল লাগতেই কেন আঙুল তুলে দেবেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বাঁচতে পারেননি আম্পায়ার্স কলের কারণে। হৃদয় আউট হওয়ার পর ১৭ বলে ২০ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি বাংলাদেশ। টান টান উত্তেজনায় ভরপুর ম্যাচে শান্তবাহিনীকে ৪ রানে হারিয়ে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে উঠে গেল প্রোটিয়ারা।
টি-টুয়েন্টিতে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে নবম দেখায়ও এলো না জয়। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রতিপক্ষকে বাগে পেয়েও শেষের দিকে নার্ভ ধরে রাখতে পারেনি ব্যাটাররা। হৃদয় আউট হওয়ার পর জাকের আলির ডট বলের মিছিল বাংলাদেশকে নিয়ে যায় ব্যাকফুটে। নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামের উইকেটে শেষ ওভারে ১১ রানের সমীকরণ মেলানো বড্ড কঠিন হয়ে পড়ে।
১১৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১০৭ রানের বেশি তুলতে পারেনি। ৬ উইকেট হাতে থাকা বাংলাদেশ শেষ ৩০ বলে ৩১ রান নিতে পারলে বিশ্বকাপে সুপার এইটের পথ মসৃন হতে পারত। অল্পের জন্য নাগাল পাওয়া গেল না জয়ের। পরের রাউন্ডে যেতে শেষ দুটি ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে হারানো ছাড়া বাংলাদেশের সামনে আর পথ খোলা নেই।
৫০ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে একশর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন হৃদয়। দলীয় ৯৪ রানে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি ভাঙে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে। ৩৪ বলে দুটি করে চার-ছয়ে ৩৭ রান করেন আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক।
একপ্রান্তে মাহমুদউল্লাহ থাকায় ফিনিশিংয়ের আশা জিইয়ে ছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ম্যাচের মতো শেষটা এবার রঙিন হয়নি। শেষ ২ বলে ৬ রানের প্রয়োজন ছিল। বড় শটে মাহমুদউল্লাহ বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন। ২৭ বলে করেন ২০ রান।
তাসকিন আহমেদ কেশব মহারাজের ফুলটস ডেলিভারিতে ঠিকমতো টাইমিং করতে ব্যর্থ হন। হারের আক্ষেপ নিয়ে ছাড়তে হয় মাঠ।
পাওয়ার প্লে’তে খুব বেশি রান না এলেও চাপ ছিল না। সতর্কতার সঙ্গে ব্যাটিং করতে থাকা লিটন দাস (৯) আগ্রাসী হতে গেলেন ৬ ওভার শেষ হতেই। কাভারে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে বিপদ বাড়ান।
সাকিব আল হাসানও উইকেট বিলিয়ে দেন। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ৪ বলে ৩ রান করে ফেরেন। বলের সঙ্গে সমানতালে রান তোলার চ্যালেঞ্জে পড়ে শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশ অধিনায়ক ২৩ বল থেকে একটি ছয়ের সাহাজ্যে করেন ১৪ রান।
তার আগে দুটি বাউন্ডারিতে ৯ বলে ৯ রান করে কাগিজো রাবাদার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। সৌম্য সরকার না থাকায় শান্ত ওপেনিংয়ে তানজিদের সঙ্গী হন।
তিনে নেমে লিটন দাসও সতর্কতার সঙ্গে ব্যাটিং করছিলেন। লক্ষ্যটা খুব বড় না হওয়ায় তাড়াহুড়ো ছিল না টপঅর্ডার ব্যাটারদের। কেশভ মহারাজের ভেতরে ঢুকতে থাকা বলে জোরাজুরি করে ড্রাইভ করতে গিয়ে ধরা পড়েন।
বাংলাদেশের বোলিং হয়েছে অসাধারণ। এখন ভালো ব্যাটিংই পারে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবার টি-টুয়েন্টিতে জয়ের স্বাদ এনে দিতে। ৮ বার হারের পর বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রোটিয়াদের হারানোর দারুণ সুযোগ আসে।
নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষকে ১১৩ রানে আটকে দেয় টিম টাইগার্স। এটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রোটিয়াদের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ।
শেষ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম চার বল ডট করেন। ২০তম ওভারে ৪ রানের বেশি নিতে পারেনি সাউথ আফ্রিকা। ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৩ রানে থামে তারা। হেনরিক ক্ল্যাসেন সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন। ডেভিড মিলারের ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বলে জীবন পেয়ে শেষমেষ আউট হন রিশাদ হোসেনকে উইকেট দিয়ে।
টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে জায়গা করে নেয়ার লড়াইয়ে সাউথ আফ্রিকাকে শুরুতে ভীষণ চাপে রাখে বাংলাদেশ।। ২৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল প্রোটিয়া দল। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ক্ল্যাসেন ও মিলার যোগ করেন ৭৯ রান। জুটি ভাঙতে পারত লিটন দাস মিলারের ক্যাচ গ্লাভসে জমা করতে পারলে।
১১তম ওভারে আসা মাহমুদউল্লাহর প্রথম ডেলিভারিতে এজ হয়, ক্যাচ যায় বাংলাদেশ কিপারের হাতে। তালুবন্দি করতে পারেননি লিটন। সাউথ আফ্রিকার সংগ্রহ তখন ৫৭ রান।
জাগরণ/খেলা/ক্রিকেট/টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপ/এমএ