ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিওইএফ) ৩ দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলন আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। চীনের দালিয়ানে আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামস অ্যানুয়াল মিটিং অব দ্য নিউ চ্যাম্পিয়নস ২০১৯’ শীর্ষক এই সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ডব্লিউইএফ সামার দাভোস নামেও পরিচিত এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধান, ব্যবসায়ী, সুধী সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ এবং শিল্পীসহ প্রায় ১ হাজার ৮শরও বেশি প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘লিডারশিপ ৪.০- সাকসিডিং ইন এ নিউ এরা অব গ্লোবালাইজেশন।’
লিয়াওডং রাজ্যের দালিয়ান উত্তর-পূর্ব এশিয়ার ব্যবসা এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র এবং উত্তর চীনের হংকং হিসেবেও সুপরিচিত। চীনের প্রধানমন্ত্রী লী কেকিয়াং দালিয়ান আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে এই বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন করেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস সোয়াব এবং লিআনিং প্রদেশের গভর্নর ত্যাং ইউজুন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এই সম্মেলন থেকে বিশ্ব পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক অসমতা এবং প্রযুক্তিগত সংকটের বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা প্রণয়নের আহবান জানানো হবে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ দিনের দ্বিপাক্ষিক সরকারি সফরে সোমবার রাতে চীনে পৌঁছেন। দালিয়ান ঝউসুইজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান লিয়াওডং রাজ্যের ভাইস গভর্নর চেন লু পিং।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লী কেকিয়াং তার ভাষণে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সংস্কারের প্রতি তার দেশের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগের জন্য নতুন যুগের ক্ষেত্র উন্মোচন করবো। সমৃদ্ধি এবং সংস্কার অব্যাহত রাখতে একটি সমন্বিত কৌশল প্রণয়ণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ বিধি-বিধান এবং আইনগুলোকে আমরা বাতিল করবো।
তিনি বলেন, দেশের উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানাগুলোকে এরইমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। চীনের সেবা খাত অন্যান্য খাতের চেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল। বিনিয়োগকারীদের জন্য সেবা খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়ার বিষয়েও চীন অঙ্গীকারাবদ্ধ।
লী কেকিয়াং বলেন, অর্থনীতি এবং বাজার দুটোই একসঙ্গে দ্রুত বাড়ছে। কাজেই এজন্য বৈশ্বিক নীতিকে আরো উদারীকরণের এবং ব্যবসাবান্ধব করার প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্ব ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের মন্থর গতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি এই অবস্থার উত্তরণে নতুন অংশীদারিত্ব সৃষ্টি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এই নতুন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন বাণিজ্য উদারিকরণ এবং সমতাভিত্তিক মুনাফা অর্জন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অটিজম এবং নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
সম্মেলনে যোগদানকারী নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) একটি সুইজারল্যান্ডের জেনেভা ভিত্তিক সংগঠন এবং ১৯৭১ সালে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর জন্ম। এটি ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে সুইস ফেডারেল সরকারের আইনে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি পায়।
ডব্লিউইএফের লক্ষ্যে বলা হয়েছে- এটি বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহকে ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং সমাজের অন্য নেতৃবৃন্দকে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং শিল্প খাতকে এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার নিয়ে গঠিত হয়েছে। বাসস
এফসি