• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০১৯, ১০:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২, ২০১৯, ১০:০৫ পিএম

রাজধানীতে ডেঙ্গুর দৌড়াত্ম বাড়ছে 

রাজধানীতে ডেঙ্গুর দৌড়াত্ম বাড়ছে 

ডেঙ্গু রোগের দৌরাত্ম রোধে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। তবে ডেঙ্গু ও মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সিটি করর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ডেঙ্গু ও মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ডেঙ্গুর কারণে গত মাসে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন। তবে ঢাকা দক্ষিণে মৃত্যুর পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

ডেঙ্গু রোগের কিছু সাধারণ উপসর্গ হলো- বিরামহীন মাথাব্যথা, হাড়, হাড়ের জোড় ও পেশিতে ব্যথা, বমিভাব ও বমি হওয়া, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, সারা শরীরের ফুসকুড়ি দেখা দেয়া, চোখের পেছনে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। পানি, ডাবের পানি, স্যালাইনের পানি পানের পরামর্শও দেন এই চিকিৎসক।

মশা নিধনের লক্ষে ঢাকা ওয়াসার কল্যাণপুর খালের আবর্জনা অপসারণ কার্যক্রম শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। নগরীর কল্যাণপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল জলিল দৈনিক জাগরণকে বলেন, সিটি করপোরেশন মাসে একদিনও মশার ওষুধ ছিটাতে আসে না। সকালে স্থানীয় কাউন্সিলর কার্যালয়ে ওষুধ ছিটানোর জন্য ফগার মেশিন নিয়ে যায়। তবে এলাকায় ওষুধ ছিটানোর জন্য ফগার মেশিনের গর্জন শোনা যায় না। অথচ গত ১০ বছর আগে মশার ওষুধ ছিটানোর সময় সন্ধ্যায় ফগার মেশিনের বিকট শব্দ শোনা যেত। এখন সেই সব শব্দ আর কানে বাজে না। 

ঢাকা উত্তর সিটির আদাবর থানার আবদুল বারেস জানান, আষাঢ় মাসে বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়। নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হলে সব ধরনের মশা রোধ করা সম্ভব। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থাপনার কারণে ঠিকভাবে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি জুরাইন ঋষিপাড়ার পলি দাস (২৭) নামের এক গৃহবধূ জ্বরে ভুগছিলেন। তার মতো আরও ৫৮ জন রোগী নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। জানা গেছে, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন জ্বরের রোগী আসে। ডেঙ্গু পরীক্ষা করে যাদের রক্তের প্লাটিলেট (অনুচক্রিকা) কম থাকে তাদের ভর্তি করা হয়। 

সূত্র জানায়, দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী জুন-জুলাই ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রজনন মৌসুম। এসময় সামান্য বৃষ্টির কারণে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যায়। এসব পচন ধরায় পানিতে এডিস মশার জন্ম হয়। দেশের সামগ্রিক আবহাওয়া ডেঙ্গুর যথেষ্ট উপযোগী। এ রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে সচেতন হতে হবে। 

সূত্র জানায়, গত বছর জুন-জুলাই মাসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শতভাগ চেষ্টা চালিয়ে পক্ষকালব্যাপী বিশেষ কর্মসূচিতে ৩৩ হাজার ৫০৮টি বাড়ি পরিদর্শন করে। কিছু বাড়িতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা হয়েছে। তারপরেও ডেঙ্গু রোধ করতে পরেনি। গত বছর ডেঙ্গু রোধে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মশার ওষুধ দিতে না দেখা যাওয়ায় ঢাকা উত্তর সিটির স্বাস্থ্য বিভাগ ওই এলাকার কাউন্সিলরকে জবাবদিহি করেছে।

সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে ডেঙ্গু জরে আক্রান্ত হয় ৬ হাজার ৮৭৭ জন আর মারা গেছে ১১ জন। ২০১৭ সালে আক্রান্ত হয় ২ হাজার ৭৬৯ জন ও মারা যায় ৮ জন। ২০১৬ সালে আক্রান্ত হয় ৬ হাজার ৬০ জন ও মারা যায় ১৪ জন এবং ২০১৫ সালে আক্রান্ত হয় ৩ হাজার ১৬২ জন আর মারা যায় ৬ জন।  

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নিচু এলাকাগুলোয় নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও বর্ষাকালে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। এজন্য ৭ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হয়েছে। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ৩৮ জন রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তিনি জানান, ডেঙ্গুর কারণে খোদ অর্থমন্ত্রী অসুস্থ হয়েছেন, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী, চাকরিজীবীসহ নানা পেশার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অসুস্থতার বিষয়ে কারো হাত নেই। আমাদের সাধ্যমতো প্রতিরোধের চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন দৈনিক জাগরণকে বলেন, ডেঙ্গু রোগে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুর প্রভাব বিস্তার রোধে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করা হয়েছে। নগরীর জলাশয়গুলো পরিষ্কার রাখার বিষয়ে আমরা সবসময় জনেসচেতনতা বাড়াতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছি। লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে ডেঙ্গুর তৎপরতা রোধে ওষুধ ছিটানো অব্যাহত রয়েছে। 

টিএইচ/ এফসি

আরও পড়ুন