বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর ডেঙ্গু মশার দৌরাত্ম্য বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা দুই সিটি করপোরশনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩০ জন রোগী। আর গত ১১ দিনে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৪৬ জনে। যা গত এক মাসের আক্রান্তের সমান। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩ জনের এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২জনের মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক দিনে ডেঙ্গু রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
ঢাকা দুই সিটির স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, অনিয়ন্ত্রিত হারে ডেঙ্গু বাড়ার মূল কারণ হিসেবে জনসচেতনতার অভাবই দায়ী। তারা বলছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কিংবা প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হলেও শুধুমাত্র জনসচেতনার অভাবেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ কারণেই ক্রমেই অনিয়ন্ত্রিত হারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে দাবি করছেন তারা। তাই জনগণকে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।
নগরবাসী বলছেন উল্টো কথা, জনসচেতনার উপর দায় চাপিয়ে দুই সিটি ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না।
নগরবাসীর অভিযোগ, মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে না। নগরীর কোন ওয়ার্ডের গত দেড়– দু’বছরে মশা নিধন কর্মীদেরও দেখা যায়নি। আবার কোথাও কোথাও একবার ওষুধ ছিটালেও দীর্ঘদিন ধরে আর ওষুধ ছিটানোর কোনো লক্ষণ থাকে না। এ কারণেই মশার উপদ্রব বেড়েছে এবং রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বল এখন নগরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
এমনকি সিটি করপোরেশনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সিটি করপোরেশন মশা নিধনের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র ও নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর (ডিএসসিসি) ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মোহাম্মদপুর, আদাবর, রায়ের বাজার এলাকায় মশার ওষুধ তো দূরের কথা, মশা নিধন কর্মীদেরও এক নজর দেখে নাই। সেখানে মশার উপদ্রবে কেউ রোগাক্রান্ত হয় তাহলে সে দায় কি জনসচেতনার দোহায় দিয়ে এড়ানো যাবে? সিটি করপোরেশন সে কাজটিই করছে।
শুধু এই আইনজীবীই নন, এমন অভিযোগ করেছেন রাজধানীর নন্দীপাড়া, জুরাইন, মিরপুর, শেওড়াপাড়, আগারগাঁও, ভাষানটেক, বাসাবো, শনির আখড়া, হাজারীবাগ ও বছিলার বাসিন্দারা।
আদাবর এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদ উজ্জল দৈনিক জাগরণকে বলেন, নিয়মানুযায়ী একদিন দুদিন পর পর ঔষুধ মশার ছিটানো দরকার। সেখানে মাসে একদিন ছিটানো হয়নি। এখন মশার উপদ্রব বাড়ছে। এ কারণে সিটি করপোরেশন নড়েচড়ে বসেছে। আগে থেকে যদি ঔষুধ ছিটানো হতো তাহলেও মনে হয় এমন হতো না। রাতের বেলা নয় শুধু, দিনের বেলাতেও মশার উপদ্রবে জনগণ অতিষ্ট। একই অভিযোগ নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো.শরীফ আহমেদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, ৪২৯ জন মশক নিধন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এই কর্মীরা প্রতিদিন সকাল বিকাল মশার ওষুধ ছিটানোর কাজ করে। তারা মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য সকালে লার্ভিসাইড এবং বিকালে অ্যাডাল্টিসাইড ওষুধ ছিটানোর কাজ করে। মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসি যা যা করণীয় তা করার চেষ্টা করছে। মশক নিধন কর্মীরা বাসাবাড়ির বাহিরে ওষুধ ছিটালেও নানা কারণে বাসাবাড়ির ভেতরে ওষুধ ছিটাতে পারছেন না। একারণে বাড়ির ভেতরে তিনদিনের বেশি জমে থাকা টব, ফ্রিব কিংবা বাসার ছাদের পানিতেই ডেঙ্গু মশার বংশবিস্তার ঘটে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন দৈনিক জাগরণকে বলেন, ২৮০ জন কর্মী সকাল বিকাল ঔষুধ ছিটাচ্ছে। পাশাপাশি ৫ অঞ্চলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তদারকি করছেন।
তিনি বলেন,সিটি করপোরেশন এর পাশাপাশি নগরবাসীকে জনসচেতনতা আরে বাড়াতে হবে। মশা রোধে বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানিও একটা কারণ।
ওষুধ ছিটালে কাজ হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঔষুধ কাজ হচ্ছে না বলা যাবে না। কাজ ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু ওই যে আন্ডার কনস্ট্রাকশন এবং বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানির কারণেই তা পুরোপুরি কাজে আসছে না। কারণ সেসব জায়গায় তো ওষুধ ছিটানো যায় না। তাই সেসব স্থান থেকে সৃষ্ট মশা গুলোই দ্রুত বিস্তার ঘটায়। আর এ কারণে কিছুটা অনিয়ন্ত্রণে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ বাড়ছে।
টিএইচ/টিএফ