রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত নারী তাসলিমা বেগম রিনু’র (৪০) গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে শোকের মাতম বইছে। রোববার (২১ জুলাই) নিহতের গ্রামের বাড়ি জেলার রায়পুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। মিথ্যা অজুহাতে এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেন স্থানীয়রা। এদিকে এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় নিহতের বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন টিটু অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
তাসলিমা বেগম রেনু লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের আলাউদ্দিন মাঝি বাড়ির মৃত. আবদুল মান্নানের মেয়ে। তিনি আড়ং নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে চাকরি করতেন। তার মাহিন হোসেন নামে এক ছেলে ও তুবা তাসনিম নামে এক মেয়ে রয়েছে।
নিহতের বোন সেলিনা আক্তার জানান, তাসলিমা ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে ঢাকায় বসবাস করতেন। সেখানেই উত্তর বাড্ডা এলাকার তসলিম উদ্দিনের সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। গত দুই বছর পূর্বে পারিবারিক কলহের কারনে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
তিনি আরো জানান, শনিবার (২০ জুলাই) তাসলিমার সন্তান তুবা তাসনিমকে (৩) স্কুলে ভর্তি করার জন্য খোঁজ নিতে উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সে সময় স্থানীয়রা তাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেন। এখন তার সন্তানদের কি হবে, কোথায় পাবে তারা তাদের মাকে। কাকে তারা আম্মু বলে ডাকবে, কাকেই বা জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে। এমন কথাগুলো বলেই তিনি কান্নায় জড়িয়ে পড়েন।
তাসলিমার চাচাতো ভাই হারুনুর রশিদ ও এলাকাবাসী বলেন, তাসলিমা শিক্ষিত মেয়ে। সে শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়েই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এত অল্প বয়সে সে দুনিয়া থেকে চলে যাবে, তা ভাবতে পারি না। এসময় তাসলিমাকে মিথ্যা অজুহাতে যারা মেরে ফেলেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তারা। যাতে তাসলিমার মত অন্য কাউকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে না হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন সদস্য রিয়াজ উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হচ্ছে। পারিবারিক কবস্থানে তাকে দাফন করা হবে। তবে তিনিও এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বলেন, ছেলেধরা গুজব রটনাকারীকে শনাক্ত করে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
উল্লেখ্য, শনিবার সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেনু নামে এক মহিলা নিহত হন। তার ১১ বছরের এক ছেলে ও চার বছরের এক মেয়ে রয়েছে। দুই বছর পূর্বে স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে সন্তানদের নিয়ে মহাখলী ওয়ারলেস এলাকার একটি বাড়া বাড়িতে থাকতেন তিনি। এদিকে এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় নিহতের বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন টিটু অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
কেএসটি