ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ও ছেলেধরার গুজব একই সূত্রে গাঁথা। এদের ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও স্কাউটস লিডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, কেউ যদি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ বা পাঁচ লাখ করার চেষ্টা করে, গুজব ছড়িয়ে কাল্পনিক গল্প বানিয়ে সমাজকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে তাহলে সরকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বিন্দুমাত্র পিছপা হবে না। যারা ছেলে ধরার গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও সরকার কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা নেবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, এদেশের কিছু মানুষ স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। আমরা বারবার দেখেছি বাংলাদেশের মানুষ যখনই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করেছে, নিজের জীবনমান পরিবর্তনের চেষ্টা করেছে তখনই কেউ কেউ ষরযন্ত্র করেছে। দেশের মানুষ সুখে থাকুক, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাক তা তারা চায় না।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তি সংগ্রামকে কোনো ষড়যন্ত্রকারী ব্যাহত করতে পারবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মানুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক এক শ্রেণীর মানুষ তা চায় না। তারা সমাজে বিশৃঙ্খলা চালানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, বিভ্রান্তি আর ছড়াবেন না। সেটা ছেলেধরা হোক, আর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নিয়েই হোক। সমাজকে অস্থিতিশীল করার মধ্য দিয়ে সমাজের অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করার চেষ্টা করবেন না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কোনো ষড়যন্ত্রকারী ব্যাহত করতে পারবে না।
তিনি বলেন, যারা ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৫ থেকে ৭ হাজারকে সাড়ে ৩ থেকে ৫ লাখ করার চেষ্টা করে তারা সমাজের ষড়যন্ত্রকারী। এ সংখ্যা দেয়ার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআর এর। ৪/৫ লাখ ডেঙ্গুর সংখ্যা ও ছেলেধরার গুজব একই সূত্রে গাঁথা। আমরা দেখেছি, ওই চাঁদে একজন মাওলানা সাহেবের ছবি দেখা গেছে। এই গুজব দিয়ে সারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। মানুষকে উসকে দিয়ে রক্তপাত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আজও যারা এসব কাজ করেন তারা সাবধান হয়ে যান। সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলার মধ্য দিয়ে সবাই মিলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যসম্মত বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
মেয়র বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সর্বক্ষণ লক্ষ রাখছেন এবং দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারের প্রতিটি বিভাগ কাজ করে চলেছে। ঢাকা সিটি করপরেশন তার সব শক্তি দিয়ে নাগরিকের পাশে আছে। আমরা অবশ্যই ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পাব। আমাদের প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৩০টি বাসা পরিষ্কারের কাজ চলছে। স্কাউট সদস্য ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ কাজে যুক্ত হলে অবশ্যই দ্রুত সময়ে আমরা ডেঙ্গু মোকাবিলায় সফল হব।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বাংলাদেশ স্কাউটস এর সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রত্যেক পিতামাতা তাদের সন্তানদের ভালবাসেন। তাদের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তত। কিন্তু আজ আমাদের জীবন দিতে হবে না। আমার সন্তানকে বাঁচাতে একটু সময় দেয়া দরকার। সামান্য সময়টুকু দিয়ে এডিস মশার বংশবিস্তার ধ্বংস করলে সবাই বাঁচতে পারি।
তিনি বলেন, প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে ২৮ জুলাই থেকে বাড়ি বাড়ি যাবেন। ছাত্র-ছাত্রীদের দলটি যেন ৩-৪ জনের কম না হয়। অবশ্যই ইউনিফর্ম পরে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা নেবেন। বয়স্ক মানুষদের শেখানো কঠিন, কিন্তু আমরা যখন সাধারণ শিক্ষার্থী অর্থাৎ বাচ্চাদের শেখাবো তখন বেশি কাজে আসবে। এসময় অনেকে প্রশ্ন করেন, পড়াশুনা করবেন না এসব করে বেড়াবেন? তিনি বলেন, অবশ্যই পড়াশুনার চেয়ে জীবন বাঁচানোর দায়িত্ব আগে।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলাল উদ্দীন আহমেদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসাঈন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম প্রমুখ।
এএইচএস/ এফসি